চীনমুখী পণ্য জাহাজযোগে প্রথমে আসত নৌবন্দর রেঙ্গুনে, সেখানে মাল খালাস করে তোলা হতো “লেশিও”গামি ট্রেনে…
জেনারেল স্টিলওয়েল ছিলেন অসংখ্য উচ্চমানের সম্মাননা ভূষিত প্রথম মহাযুদ্ধের বীর সৈনিক এবং উত্তর আফ্রিকায় তাঁর মিত্র বাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তা না হয়ে পরিবর্তে তাঁকে চীন-বার্মা-ভারত (সিবিআই) থিয়েটারে কমান্ডারের নিযুক্তি দিলে জেনারেল হতাশ হয়েছিলেন। অবশ্য মার্কিন সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ জেনারেল মার্শাল যখন তাঁকে সিবিআই-র নিয়োগ বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, জেনারেল স্টিলওয়েল উত্তরে বলেছিলেন যে “আমাকে যেখানে পাঠানো হবে আমি সেখানেই যাব”। কমান্ডার হিসেবে তাঁর অন্যান্য দায়িত্বের মধ্যে ছিলো জেনেরালিসিমৌ চিয়াং কাইশেকের চীফ অব স্টাফ, মার্কিন “লেন্ড-লীজ প্রোগ্রামে”র তত্ত্বাবধায়ক এবং চীনা সেনাবাহিনীকে এমনভাবে ট্রেনিং দেয়া যাতে জাপানী বাহিনীর বিরুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে সক্ষম হয়।

জেনেরালিসিমৌ চিয়াং কাই শেক, মাদাম কাই শেক, ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোসেফ স্টিলওয়েল; এপ্রিল ১৯৪২ সাল।
ইতিপূবে সামরিক অ্যাটাশে ও বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত থাকার সুবাদে জেনারেল স্টিলওয়েল তেরো বছর চীনে কাটিয়েছেন। ফলে, চীনা ভাষায় ছিলেন স্বাচ্ছন্দভাষী তুখোড় এবং কখনোবা ডায়রি লিখেছেন চীনা ভাষায়। তাছাড়াও চীনা সংস্কৃতি সম্বন্ধে গভীর অভিজ্ঞতা ও প্রাজ্ঞতা ছিলো তাঁর। জেনারেলের মধ্যে এতোসব উপাদানের সংমিশ্রণ থেকে ঝলকে মনে হতেই পারে যে নিয়োগটির একমাত্র উপযুক্ত উৎকৃষ্ট প্রার্থী আর কে হতে পারে? নয় কি!
দীর্ঘদিন ধরে চীন-জাপান যুদ্ধ চলছিলো। ১৯৩১ সালে জাপান মাঞ্চুরিয়া প্রধান প্রধান শহরগুলো দখল করে নিতে মনোযোগী হয়- ১৯৩৭ সালের মধ্যে দখল করে নেয় ও জাপান সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করে। জাপান অতঃপর চানের বেজিং, শাংহাই, নানজিং এবং তাবৎ উপকূলীয় এলাকা জাপান দখল করে নেয় এবং সাফল্যের সঙ্গে চীনের বহির্বাণিজ্যিক রুট বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়।
উপায়হীন চীন তখন বহির্বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে কি করে শুনবেন? শুনুন তবে: বার্মার উত্তরাংশের বৃহত্তম শহর “লেশিও” থেকে চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাংশে অবস্থিত ইউনান প্রদেশের বৃহত্তম শহর “কুনমিন” পর্যন্ত, পর্বতমালার মধ্য দিয়ে, ছয়শ’ একাশি মাইল (প্রায় এগারোশ’ কিলোমিটার) দীর্ঘ রাস্তা তৈরি করে এবং বহির্বাণিজ্য চালু রাখার ব্যবস্থা করে। চীনমুখী পণ্য জাহাজযোগে প্রথমে আসত নৌবন্দর রেঙ্গুনে, সেখানে মাল খালাস করে তোলা হতো “লেশিও”গামি ট্রেনে। লেশিও-তে সেই মাল আরেক দফায় যানবাহনে বোঝাই করে “লেশিও-কুনমিন” রোডে গন্তব্যস্থলে আনা হতো। যুদ্ধকালীন সময়ে এটিই ছিলো একমাত্র রাস্তা যার মাধ্যমে চীনে সরবরাহ আসত। কিন্তু জাপানের বার্মা দখল করে নেয়ার ফলে (১৯৪১-১৯৪২) চীনের জন্য বহির্বাণিজ্যের সর্বশেষ রাস্তাটিও অবরুদ্ধ হয়ে যায়।
(চলবে)
নাঈম হক 


















