গুগল ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের শোডাউন
কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে অনুষ্ঠিত নিউরআইপিএস ২০২৫ সম্মেলনটি এ বছর কার্যত বিশ্ব এআই শিল্পের বারোমিটারে পরিণত হয়েছে। দ্য ভার্জের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুগল নতুন প্রজন্মের মাল্টিমোডাল মডেল ও জটিল বাস্তব কাজ সামলাতে সক্ষম রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং সিস্টেমের প্রদর্শনী করে প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর চাপ বাড়িয়েছে। পাশাপাশি অসংখ্য স্টার্টআপ ও ওপেন সোর্স দল বিভিন্ন চ্যাটবট, কোড-সহকারী ও জেনারেটিভ ভিডিও টুল নিয়ে এসেছে, যেগুলোকে তারা আগের মডেলের তুলনায় আরও দ্রুত, দক্ষ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য হিসেবে তুলে ধরেছে।

তবে পুরো আয়োজনটি আরেকটি বাস্তবতাও স্পষ্ট করেছে—অগ্রগামী এআই গবেষণা এখন কয়েকটি বড় প্রযুক্তি কোম্পানির ব্যয়সাপেক্ষ কম্পিউটিং অবকাঠামো ও প্রাইভেট ডেটাসেটের ওপর কঠোরভাবে নির্ভরশীল। অনেক একাডেমিক গবেষক অভিযোগ করেছেন, সীমিত চিপ ও সার্ভারের কারণে গবেষণার দিকনির্দেশনা ক্রমেই বাণিজ্যিক স্বার্থের দিকে ঝুঁকছে। তবু কনফারেন্সের বিভিন্ন সেশনে দেখা গেছে, মানবাকৃতির রোবটকে ভিড়ভাট্টা জায়গায় চলাফেরা শেখানো থেকে শুরু করে ভাষা-এজেন্ট দিয়ে ভার্চুয়াল কারখানা চালানো পর্যন্ত, নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো সমানভাবে চলছে; আগামী কয়েক বছরে কোন আর্কিটেকচার প্রভাবশালী হবে তা নিয়ে কোন ঐক্যমত নেই।
নিরাপত্তা, শ্রমবাজার ও নীতিনির্ধারণের প্রশ্ন
প্রযুক্তিগত আলোচনার পাশাপাশি এ বছর নিরাপত্তা, শ্রমবাজারের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নিয়ে সেশনগুলোও ছিল ভিড়াক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা কোম্পানিগুলোর কাছে জানতে চেয়েছেন, তারা কীভাবে প্রশিক্ষণ ডেটার উৎস পরিষ্কার করবে, মডেল অপব্যবহার ঠেকাবে এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ায় উদীয়মান আইনি কাঠামোর সঙ্গে তাল মিলাবে। কেউ কেউ বলেছেন, কেবল দূর ভবিষ্যতের বিধ্বংসী ঝুঁকি নিয়ে ব্যস্ত থাকলে কাছের ক্ষতিগুলো—যেমন পক্ষপাতদুষ্ট নিয়োগ অ্যালগরিদম, প্রোপাগান্ডা উৎপাদন, কিংবা স্বচ্ছতা ছাড়াই সামাজিক সেবা বা ঋণ অনুমোদনে এআই ব্যবহারের ঝুঁকি—আড়ালে পড়ে যেতে পারে।

কনফারেন্সে সৃজনশীল কাজ ও জ্ঞানভিত্তিক পেশায় এআই–এর প্রভাব নিয়েও স্পষ্ট দ্বিধা দেখা গেছে। অনেক শিল্পী ও লেখক অভিযোগ করেন, ইন্টারনেট এখন “এআই স্লপ” বা নিম্নমানের অটো–জেনারেটেড কনটেন্টে ভরে যাচ্ছে। অন্যদিকে কিছু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, কোড–সহকারী টুল তাদের দৈনন্দিন কাজ অনেক দ্রুত করলেও মাঝেমধ্যে সূক্ষ্ম ভুল ঢুকিয়ে দেয়। সবকিছুর পরও বড় বিনিয়োগকারী ও স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতাদের দাবি, গ্রাহক সেবা থেকে সাপ্লাই চেইন, নানা খাতে এআই অবকাঠামোর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। নিউরআইপিএস ২০২৫ শেষ পর্যন্ত দেখিয়ে দিয়েছে, এখনো কোনও একক “সুপার মডেল” নয়, বরং পরিণত কাঠামো ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠার দৌড়েই বেশি মন দিচ্ছে এআই শিল্প।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















