পুলিশিং দীর্ঘদিন ধরেই ধীরগতির, কাগজপত্রনির্ভর ও জনবলচাপে থাকা একটি সেবা। সেই চেনা কাঠামো ভেঙে দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। স্কটল্যান্ড থেকে লন্ডন—বিভিন্ন দেশে পুলিশ বাহিনী এখন অপরাধ দমন, প্রমাণ সংগ্রহ ও তদন্ত ব্যবস্থায় প্রযুক্তিনির্ভর নতুন পথে হাঁটছে। তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি আছে অর্থসংকট, ভেতরের জড়তা আর জনআস্থার বড় প্রশ্ন।
পুলিশ দপ্তরে প্রযুক্তির নতুন দল
গ্লাসগোর পুলিশ স্কটল্যান্ড সদর দপ্তরে কাচঘেরা এক কক্ষে কাজ করছেন কোডার ও প্রকৌশলীরা। তাদের লক্ষ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে পুলিশের দৈনন্দিন কাজ সহজ করা। জবানবন্দি লিখে নেওয়া, ডিউটি পরিকল্পনা, এমনকি চুরি হওয়া পণ্যের সঙ্গে অনলাইন বিজ্ঞাপন মিলিয়ে দেখার মতো কাজও এখন সফটওয়্যারের হাতে যাচ্ছে। তথ্যপ্রক্রিয়াকরণই যেখানে পুলিশের মূল শক্তি, সেখানে এই প্রযুক্তি বড় পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিয়েছে।

কাগজপত্রের বোঝা কমানোর চেষ্টা
পুলিশ বাহিনীর বড় সমস্যা অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে প্রতিবছর বিপুল সময় নষ্ট হয় শুধু ফরম পূরণে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় লিখন প্রযুক্তি এই চাপ কমাতে পারে। মানুষের মতো নিখুঁত না হলেও এই ব্যবস্থা একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ কাজ করতে পারে, ফলে তদন্তকারীরা মাঠের কাজে বেশি সময় দিতে পারছেন।
প্রমাণ সংগ্রহে বদল আসছে
আগে থানায় এসে অভিযোগ করাই ছিল নিয়ম। এখন অনেক এলাকায় অনলাইন কথোপকথনভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে। গৃহসহিংসতার মতো সংবেদনশীল ঘটনায় ভিডিও কথোপকথনের মাধ্যমে অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে। কথাবার্তা সঙ্গে সঙ্গেই নথিভুক্ত হচ্ছে মামলার ফাইলে। কোথাও কোথাও মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।

বড় তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
প্রমাণের পাহাড় থেকে দরকারি তথ্য বের করাও এখন প্রযুক্তির কাজ। শিশু নির্যাতনের মতো জটিল অপরাধে উন্নত বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তিও পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ হয়েছে। কোথাও বড় জনসমাগমে অপরাধী শনাক্তে এই ব্যবস্থা কাজে লেগেছে। তবু সার্বিকভাবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার এখনো ধীর।
তিনটি বড় বাধা
এই অগ্রযাত্রার পথে প্রথম বাধা অর্থ। পুলিশ বাজেট বাড়লেও তা জনবল ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। নতুন প্রযুক্তির জন্য বরাদ্দ কমে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বাধা ভেতরের জড়তা। প্রশাসনিক কাঠামো বদলানো কঠিন, আর প্রযুক্তিদক্ষ তরুণদের আকৃষ্ট করাও সহজ নয়। তৃতীয় বাধা জনমত। মানুষ প্রযুক্তির সুবিধা চায়, কিন্তু সিদ্ধান্ত যদি যন্ত্র নেয়—এই আশঙ্কা থেকে বিরোধিতাও তৈরি হতে পারে। সম্মতির ভিত্তিতে পুলিশিং চালাতে হলে এই পরিবর্তন পরিষ্কারভাবে বোঝাতে হবে।

থেমে থাকার সুযোগ নেই
অপরাধ জগৎ ইতিমধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা নিচ্ছে। সেই বাস্তবতায় পুলিশ বাহিনীর পক্ষে স্থির থাকা সম্ভব নয়। ধীরগতিতে হলেও প্রযুক্তিনির্ভর এই রূপান্তর এগোবে—সাফল্য নির্ভর করবে অর্থ, দক্ষতা আর জনআস্থার ভারসাম্যের ওপর।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















