নারীবাদ বরাবরই কঠিন কিছু প্রশ্নের সামনে সমাজকে দাঁড় করিয়েছে। সমান মজুরি কীভাবে নিশ্চিত হবে, মাতৃত্বের সঙ্গে কাজের ভারসাম্য কীভাবে সম্ভব, যৌন সহিংসতা রোধের পথই বা কী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি রক্ষণশীল নারী ম্যাগাজিন নতুন এক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে—আপনি কি নারীবাদীর মতো গন্ধ পান। এই প্রশ্নের মধ্য দিয়েই সামনে এসেছে এক ভিন্ন জগৎ, যাকে বলা হচ্ছে নারীজগত বা ওম্যানোস্ফিয়ার।
নারী জগতের উত্থান
এই নারীজগৎ মূলত রক্ষণশীল নারীর মিডিয়া পরিসর। এখানে আলোচনার কেন্দ্রে রাজনীতি বা অর্থনৈতিক সংস্কার নয়, বরং জীবনযাপন, সম্পর্ক, ধর্মবিশ্বাস আর নারীত্বের ঐতিহ্যবাহী ধারণা। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ম্যাগাজিন তরুণ নারীদের উদ্দেশে সম্পর্ক, সামাজিক আচরণ, স্বাস্থ্য আর পোশাক নিয়ে লেখালেখি করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে সমালোচকদের মতে, এই ধারার লেখা তরুণীদের নারীবাদ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
রাজনীতির বদলে জীবনধারা
রক্ষণশীল নারীরা রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। ইতিহাসে ভোটাধিকার আন্দোলন থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতির পক্ষে লেখা—সবখানেই তাঁদের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু নতুন এই মিডিয়া ধারা রাজনীতির বদলে বেশি মনোযোগ দেয় প্রার্থনা, জন্মনিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা, কিংবা এমন পোশাকের তালিকায় যা নাকি পুরুষদের আকৃষ্ট করে। এতে নারীর স্বাধীন চিন্তার বদলে গৃহ কেন্দ্রিক ভূমিকার প্রশংসাই বেশি দেখা যায়।
মধুর মুখের আড়ালে তিক্ততা
প্রথম নজরে এই নারী জগৎ নিরীহ মনে হলেও ভেতরে ভেতরে এতে রয়েছে সূক্ষ্ম চাপ। রান্নার রেসিপির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় আদর্শ স্ত্রীর ধারণা, মাতৃত্বকে নারীর প্রধান সাফল্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। অনেক লেখায় নারীবাদকে দোষারোপ করা হয় সমাজের নানা সমস্যার জন্য। কেউ কেউ নারীবাদকে জীববিজ্ঞানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিপ্লব বলেও আখ্যা দেন।

নারীবাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এই ধারার লেখকদের মতে, নারীবাদ কিশোরী গর্ভধারণ বাড়িয়েছে, পরিবার ভেঙেছে, পুরুষকে দুর্বল আর নারীকে বিভ্রান্ত করেছে। তাঁদের ভাষায়, নারীবাদ নারীদের নিজেদের সত্তার বিরুদ্ধেই দাঁড় করায়। ফলে তাঁরা নিজেদের নারীবাদী বলতে চান না এবং ঐতিহ্য, ধর্ম ও সৌন্দর্যকেই নারীর আসল শক্তি হিসেবে তুলে ধরেন।
ম্যানোস্ফিয়ার থেকে অনুপ্রেরণা
এই নারী জগৎ অনেকটাই পুরুষদের রক্ষণশীল অনলাইন জগত থেকে অনুপ্রাণিত। যেমন সেখানে শরীরচর্চা ও জাতীয়তাবাদ মিশে যায়, এখানে তেমনি ঘরে বানানো খাবার, মাতৃত্ব আর গর্ভপাতবিরোধী বক্তব্য একসঙ্গে হাজির হয়। কখনও কখনও এই বক্তব্য এতটাই তীব্র হয় যে তা মূল আলোচনাকে ছাপিয়ে যায়।
সহজ বিদ্রূপ নয়, গভীর সংকট
এই প্রবণতাকে শুধু ব্যঙ্গ করে উড়িয়ে দেওয়া সহজ, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে বাস্তব কিছু অসন্তোষ। কাজ ও মাতৃত্বের দ্বন্দ্বে অনেক নারী সত্যিই ক্লান্ত। সব কিছু একসঙ্গে পাওয়ার স্বপ্ন তাঁদের হতাশ করেছে। সেই শূন্যস্থানেই এই নারীজগৎ সহজ উত্তর আর আরামদায়ক কল্পনার আশ্রয় দেয়।
শেষ কথা
নারীদের জীবনের জটিল প্রশ্নগুলো নিয়ে গভীর আলোচনা কঠিন এবং অস্বস্তিকর। অতীতের নারীবাদী চিন্তাবিদদের উদ্ধৃতি টানতে হয়, যা অনেকের কাছে বিরক্তিকর। তাই সেই পথে না গিয়ে ঝলমলে শিরোনাম, নারীত্বের সাজসজ্জা আর উৎসবের পোশাকেই মনোযোগ দেওয়া সহজ। কিন্তু এই সহজ পথই কি নারীদের ভবিষ্যৎ ভাবনার ঠিকানা, সেটা এখন বড় প্রশ্ন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















