বছরের এই সময়টায় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ গির্জামুখী হন। বড়দিন ঘিরে আবার ফিরে আসে মেরি, যোসেফ আর সেই শিশুযিশুর গল্প, যাঁকে থাকার জায়গা না পেয়ে শুয়িয়ে রাখা হয়েছিল গোয়ালঘরে। খ্রিস্টান মিশনারিদের বিশ্বাস, এই গল্প আরও বহু মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারলে আরও আত্মা আলোকিত হতে পারে। সেই লক্ষ্যেই এবার নতুন সঙ্গী হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
বাইবেল অনুবাদের দীর্ঘ ইতিহাস
বাইবেল ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অনূদিত গ্রন্থ। সম্পূর্ণ বাইবেল পাওয়া যায় সাতশোর বেশি ভাষায়। তবু পৃথিবীতে এখনো প্রায় সাত হাজার জীবিত ভাষা রয়েছে, যাদের অনেকগুলোর কাছেই এই ধর্মগ্রন্থ পৌঁছায়নি। অতীতে বাইবেল অনুবাদ ছিল ধীর, জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। পুরনো নিয়মের বিপুল শব্দসংখ্যা, নতুন নিয়মের অস্পষ্ট গ্রিক ভাষা এবং শব্দ বাছাইয়ের ধর্মতাত্ত্বিক প্রভাব অনুবাদকদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ইতিহাসে এমন সময়ও গেছে, যখন মাতৃভাষায় বাইবেল অনুবাদের অপরাধে মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গতি
এই বাস্তবতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনুবাদ প্রক্রিয়ায় গতি এনে দিয়েছে। আগে যেখানে একটি নতুন ভাষায় সম্পূর্ণ বাইবেল অনুবাদে পনেরো বছর বা তারও বেশি সময় লাগত, সেখানে এখন বড় ভাষা মডেলের সহায়তায় নতুন নিয়মের একটি পরিশীলিত অনুবাদ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে প্রায় দুই বছরে। পুরনো নিয়ম শেষ করতে লাগছে ছয় বছরের মতো সময়। লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, দুই হাজার তেত্রিশ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি ভাষায় অন্তত বাইবেলের কোনো অংশ পৌঁছে দেওয়া। এই উদ্যোগে যুক্ত সংস্থাগুলোর জোট জানাচ্ছে, তারা ইতিমধ্যেই লক্ষ্যের অর্ধেকের বেশি পথ অতিক্রম করেছে।
প্রযুক্তি ও বিশ্বাসের মিলন
এই অগ্রগতির পেছনে রয়েছে প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর উন্মুক্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক একটি বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ভাষা অনুবাদ মডেল মূলত আফ্রিকা ও এশিয়ার ভাষাকে ইন্টারনেটে দৃশ্যমান করার উদ্দেশ্যে তৈরি হলেও, তা এখন বাইবেল অনুবাদের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে কম ব্যবহৃত বা স্বল্প উপাত্তের ভাষায় কাজ করা সহজ নয়। অনেক ক্ষেত্রে অনুবাদকদের আগে হাতে করে কিছু পাঠ অনুবাদ করে মডেলকে শেখাতে হয়। কতটা তথ্য দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে, সেটিই এখন বড় গবেষণার বিষয়।
সংশয় ও সীমাবদ্ধতা
সব খ্রিস্টান এই প্রযুক্তি ব্যবহারে একমত নন। কেউ কেউ মনে করেন, এতে পবিত্র কাজের মানবিক ও আত্মিক দিক ক্ষুণ্ন হতে পারে। তবে প্রযুক্তির পক্ষে থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু সহায়ক। খসড়া তৈরি, ব্যাকরণ যাচাই, অর্থ ও ধর্মতাত্ত্বিক সামঞ্জস্য নিশ্চিত করার দায়িত্ব এখনো মানুষের হাতেই। তাছাড়া নাম, রূপক ও সাংস্কৃতিক ধারণা বোঝার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট। কোনো কোনো শব্দের সরাসরি প্রতিশব্দ না থাকায় স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হয়।
ভাষা, সংস্কৃতি ও ভবিষ্যৎ
বিভিন্ন সমাজে অনুভূতি ও বিশ্বাসের কেন্দ্র ভিন্নভাবে কল্পনা করা হয়। কোথাও হৃদয়, কোথাও যকৃত বা পাকস্থলীকে ভাবনার কেন্দ্র ধরা হয়। তাই একই ধর্মীয় সত্য বোঝাতে স্থানীয় উপমা ব্যবহার করা জরুরি। অনেক খ্রিস্টানের বিশ্বাস, সব ভাষায় বাইবেল পৌঁছালে খ্রিস্টের প্রত্যাবর্তন ঘটবে। আবার কেউ একে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে দেখেন। ফলে এই উদ্যোগ শুধু বিশ্বাসের বিস্তার নয়, নতুন ভাষা প্রযুক্তির বিকাশেও ভূমিকা রাখছে।
মূল কীফ্রেজ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বাইবেল অনুবাদ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















