ইন্টারনেটের পরবর্তী রূপ আর শুধু মানুষ-কেন্দ্রিক থাকছে না। খোঁজা, কেনাকাটা, পরিকল্পনা বা ছোটখাটো কাজ—সবই ধীরে ধীরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে তুলে দেওয়ার পথে ওয়েব। যাকে বলা হচ্ছে এজেন্টনির্ভর ইন্টারনেট, যেখানে মানুষ নির্দেশ দেবে, আর ডিজিটাল এজেন্ট সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে।
স্বপ্ন থেকে বাস্তবতার পথে
১৯৯৯ সালে বিশ্বব্যাপী ওয়েবের উদ্ভাবক টিম বার্নার্স-লি কল্পনা করেছিলেন এমন এক বুদ্ধিমান ওয়েব, যেখানে মানুষের হয়ে কাজ করবে যন্ত্র। এত বছরেও ইন্টারনেট মূলত মানুষের হাতেই থেকেছে। খোঁজার জন্য টাইপ করা, কেনার আগে ক্লিক করা, তথ্য পেতে ঘাঁটাঘাঁটি—সবই ছিল ম্যানুয়াল। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতিতে সেই স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
এজেন্ট কীভাবে বদলাচ্ছে অভিজ্ঞতা
আজকের ভাষাভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, নথি সংক্ষেপ করতে পারে, যুক্তি বিশ্লেষণ করতে পারে। নতুন প্রজন্মের সফটওয়্যার এজেন্ট এসব ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত করছে কাজ করার সামর্থ্য। তারা শুধু তথ্য দেবে না, প্রয়োজনে বুকিং করবে, সাবস্ক্রিপশন বাতিল করবে বা অর্থ ফেরতের আবেদনও করবে।
ওয়েবের ভাষার বাধা

সমস্যা হলো, ইন্টারনেটের অবকাঠামো মানুষের জন্য তৈরি। বিভিন্ন সেবা তাদের নিজস্ব নিয়মে কথা বলে। কৃত্রিম এজেন্টদের জন্য প্রতিটি সেবার আলাদা ভাষা শেখা কঠিন। এই বাধা কাটাতে তৈরি হচ্ছে একক যোগাযোগের নিয়ম, যাতে এজেন্টরা সহজে অনলাইন সেবার সঙ্গে কথা বলতে পারে এবং মানুষের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
মানক তৈরির দৌড়
এই নতুন ওয়েবের দখল নিতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন সংস্থা আলাদা আলাদা নিয়ম ও কাঠামো প্রস্তাব করছে। লক্ষ্য একটাই—যে মানক সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে, তার মাধ্যমেই ভবিষ্যতের এজেন্টরা কাজ করবে। সম্প্রতি বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে খোলা মানক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যা এজেন্টদের পারস্পরিক যোগাযোগকে আরও সহজ করবে।
চ্যাট করেই ওয়েব ব্যবহার
মানুষের চোখের জন্য তৈরি ওয়েবকে এজেন্টবান্ধব করতে নতুন ব্যবস্থা আসছে। কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এমন ওয়েব পদ্ধতি চালু করছে, যেখানে যেকোনো সাইটের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে প্রয়োজন মেটানো যাবে। বহু মেনু ঘাঁটার বদলে এক বাক্যে প্রশ্ন করলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত ফল।

ব্রাউজার যুদ্ধের নতুন অধ্যায়
নব্বইয়ের দশকের ব্রাউজার যুদ্ধের মতোই এবার লড়াই এজেন্টকে কেন্দ্র করে। নতুন ধরনের ব্রাউজার ইতিমধ্যেই আসছে, যা ইমেইল সামলাবে, ফ্লাইট খুঁজবে, এমনকি সরাসরি কেনাকাটাও করবে। এতে প্রচলিত অনলাইন ব্যবসায়ীরা কিছুটা শঙ্কিত, কারণ মানুষের বদলে ক্রেতা হয়ে উঠছে কৃত্রিম এজেন্ট।
বিজ্ঞাপনের নতুন বাস্তবতা
বর্তমান ইন্টারনেট মানুষের মনোযোগ বিক্রি করে চলে। ভবিষ্যতে সেই মনোযোগ হবে এজেন্টের। বিপণনকারীদের তখন মানুষ নয়, অ্যালগরিদমকে সন্তুষ্ট করতে হবে। পছন্দ, র্যাংকিং আর অবস্থান নির্ধারণের লড়াই চলবে যন্ত্রের চোখে।
ঝুঁকি আর সতর্কতা
এজেন্ট যত বেশি কাজ করবে, ততই বাড়বে ঝুঁকি। ভুল সিদ্ধান্ত, বিভ্রান্ত ব্যাখ্যা বা ক্ষতিকর নির্দেশে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবেদনশীল কাজে মানুষের উপস্থিতি রাখা জরুরি। কোথাও শুধু তথ্য পড়ার অনুমতি, কোথাও আবার মানুষের অনুমোদন ছাড়া কাজ নয়—এভাবেই ভারসাম্য গড়তে হবে।
.png)
ভবিষ্যতের ইন্টারনেট
সব ঝুঁকি সত্ত্বেও প্রযুক্তি নির্মাতারা আশাবাদী। তাদের ধারণা, ইন্টারনেট ধীরে ধীরে এমন এক ব্যবস্থায় যাবে, যেখানে মানুষ আর সবকিছু শুরু করবে না। বরং এজেন্ট নিজেরাই সময়মতো কাজ এগিয়ে নেবে। এভাবেই গড়ে উঠতে পারে একেবারে ভিন্ন ধরনের নতুন ওয়েব।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















