বিশ্বসংগীতের অনেক অমূল্য মুহূর্ত আজ নীরবে ঝুঁকির মুখে। সত্তর ও আশির দশকে রেকর্ড করা অসংখ্য গান সংরক্ষিত আছে পুরোনো চৌম্বক টেপে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব টেপ ক্ষয়ে যাচ্ছে। ঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে হারিয়ে যেতে পারে সংগীত ইতিহাসের বড় একটি অংশ।
কেন বিপদে পড়েছে পুরোনো গান
ডিজিটাল যুগের আগে গান রেকর্ড করা হতো চৌম্বক টেপে। তখন সেটাই ছিল সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। কিন্তু কয়েক দশক পর দেখা যাচ্ছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টেপ দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোথাও ছাঁচ ধরছে, কোথাও আবার টেপ একে অন্যের সঙ্গে লেগে যাচ্ছে। চালাতে গেলেই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

সময় ফুরিয়ে আসছে
বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সত্তর ও আশির দশকের টেপ। সে সময় টেপ তৈরির উপকরণে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল, যার ক্ষতিকর প্রভাব এখন স্পষ্ট। অনেক টেপ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে সামান্য দেরি হলেই সেগুলো আর কখনো বাজানো যাবে না। তাই সংরক্ষণবিদদের কাছে এটি সত্যিই সময়ের বিরুদ্ধে দৌড়।
নীরব এক কারিগরের গল্প
নিউ জার্সির একটি ছোট কর্মশালায় কাজ করেন কেলি প্রিবল। তিনি একজন অডিও সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ। বাইরে থেকে সাধারণ মানুষ হয়তো তার নাম খুব একটা জানে না, কিন্তু সংগীত জগতের বহু বড় শিল্পীর গান বেঁচে আছে তার হাত ধরে। পুরোনো বাক্স খুলে টেপ পরীক্ষা করা, চোখের সামনে ধীরে ধীরে রিল ঘোরা—এভাবেই শুরু হয় তার প্রতিদিনের কাজ।

ভাঙা টেপে নতুন প্রাণ
অনেক টেপ এমনভাবে লেগে যায় যে খুলতে গেলেই ছিঁড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তখন প্রিবল বিশেষ তরলে টেপ ভিজিয়ে রাখেন, কখনো কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত। পরে বিশেষ যন্ত্র দিয়ে ধীরে ধীরে আলাদা করেন আটকে থাকা স্তরগুলো। শুকানোর জন্য তিনি নিজেই বানিয়েছেন যন্ত্র, যেখানে সাধারণ চুল শুকানোর ড্রায়ারও ব্যবহার করা হয়। লক্ষ্য একটাই, অল্প সময়ের জন্য হলেও টেপ চালু করা, যাতে গান ডিজিটালে তুলে নেওয়া যায়।
তারকাদের হারাতে বসা সুর
এইভাবে বাঁচানো হয়েছে বহু বিখ্যাত শিল্পীর গান। বব ডিলান, ব্রুস স্প্রিংস্টিনসহ আরও অনেক শিল্পীর রেকর্ডিং একসময় প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিছু ক্ষেত্রে মূল টেপ আর বাঁচানো যায়নি, তখন ব্যবহার করতে হয়েছে কপি। শব্দের পার্থক্য খুব সূক্ষ্ম হলেও সংগীতপ্রেমীদের কাছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।

টাকার অঙ্ক আর কঠিন সিদ্ধান্ত
সমস্যা শুধু প্রযুক্তির নয়, অর্থেরও। হাজার হাজার টেপ সংরক্ষণ করতে গেলে প্রয়োজন বিপুল অর্থ। সব টেপ একসঙ্গে বাঁচানো অনেক সময় সম্ভব হয় না। তখন সিদ্ধান্ত নিতে হয় কোন গান আগে রক্ষা করা হবে। ইতিহাস বাঁচানো জরুরি, কিন্তু তার মূল্য কত—এই প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়।
ভঙ্গুর এক ইতিহাস
বিশ্বসংগীতের কতটা অংশ ঝুঁকিতে আছে, তার সঠিক হিসাব নেই। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, দেরি হলে ক্ষতি আর পূরণ করা যাবে না। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যারা এসব টেপ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, তাদের হাতেই আজ সংগীত ইতিহাসের ভবিষ্যৎ।


সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















