১২:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

জীবনের টানাপোড়েনের কথাকার, ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জোয়ানা ট্রলোপের প্রয়াণ

জীবনের সম্পর্ক, দাম্পত্য টানাপোড়েন আর পারিবারিক জটিলতাকে সহজ ভাষায় গভীরভাবে তুলে ধরা ব্রিটিশ লেখক জোয়ানা ট্রলোপ আর নেই। বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারের নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল বিরাশি বছর। তাঁর সাহিত্য সংস্থা জানিয়েছে মৃত্যুর খবর, তবে মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি।

সাহিত্যে জনপ্রিয়তার সঙ্গে বিতর্ক
জোয়ানা ট্রলোপ ছিলেন এমন এক লেখক, যাঁর উপন্যাস বিপুল জনপ্রিয়তা পেলেও সমালোচনার মুখে পড়েছে বহুবার। ইংল্যান্ডের স্বচ্ছল প্রাদেশিক জীবনের প্রতীক চুল্লির নাম ধরে তাঁর বইকে ব্যঙ্গ করে বলা হতো আগা উপন্যাস। গির্জা ও ধর্মযাজকদের নিয়ে লেখা কয়েকটি কাহিনির কারণে তাঁকে উনিশ শতকের লেখক অ্যান্থনি ট্রলোপের সঙ্গে তুলনা করা হতো। এই তুলনা তিনি বরাবরই নাকচ করেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর লেখাও আরও গাঢ়, সাহসী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে ওঠে।

জন্ম থেকে লেখক হয়ে ওঠা
উনিশশো তেতাল্লিশ সালের নয় ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের গ্লস্টারশায়ারের মিনচিনহ্যাম্পটনে জন্ম জোয়ানা ট্রলোপের। মা রোজমেরি হজসন ছিলেন শিল্পী ও লেখক, বাবা আর্থার ট্রলোপ ছিলেন ব্যাংকার। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শেষে তিনি কিছুদিন ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তরে কাজ করেন। পরে ক্যারোলাইন হার্ভে ছদ্মনামে ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন।

সমকালীন উপন্যাসে সাফল্য
উনিশশো আটাশি সালে দ্য কয়ার উপন্যাসের মাধ্যমে নিজের নামেই সমকালীন উপন্যাস লেখা শুরু করেন তিনি। এই পর্বের বইগুলোই তাঁকে খ্যাতির শিখরে তোলে। শূন্য দাম্পত্য, প্রেমের সম্পর্ক, আত্মপরিচয়ের লড়াই আর মানবিক যাজকদের গল্প তাঁর লেখায় বারবার ফিরে এসেছে। একের পর এক বই বিক্রির তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে।

Best-selling British writer Joanna Trollope has died at 82

ব্যক্তিজীবনের ভাঙাগড়া
জোয়ানা ট্রলোপের ব্যক্তিজীবনও ছিল টানাপোড়েনে ভরা। ব্যাংকার ডেভিড পটারকে বিয়ে করে তাঁর দুই কন্যা হয়। পরে সেই দাম্পত্য ভেঙে যায়। এরপর টেলিভিশন লেখক ইয়ান কার্টিসকে বিয়ে করলেও সেই সম্পর্কও টেকেনি। সঙ্গীতশিল্পী জেসন কাউচাকের সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল, সেটিও তাঁর মৃত্যুর আগে শেষ হয়। পুরুষের সঙ্গে বসবাসের তুলনায় কুকুরের সঙ্গে থাকা কম উত্তেজনাপূর্ণ বলে করা তাঁর রসিক মন্তব্য ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।

সমালোচকদের চোখে ট্রলোপ
তাঁর উপন্যাসের চরিত্ররা ছিল বয়স্ক হলেও জীবন্ত। এক সমালোচক লিখেছিলেন, তাঁর বৃদ্ধ চরিত্ররা একদিকে জেদি ও আত্মকেন্দ্রিক, অন্যদিকে আবেগী ও ভালোবাসার যোগ্য। আরেক সমালোচনায় নারীর আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদার উচ্চকণ্ঠ উপস্থিতির কথা উঠে আসে। লেখক নিজে অবশ্য নিজের কাজকে নিয়ে ছিলেন সংযত। তিনি বলতেন, তাঁর লেখা খুব স্পষ্ট ও পরিষ্কার, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক বা অলঙ্কৃত হওয়ার দাবি তিনি করেন না।

অস্টেনের ছায়া ও নিজের অবস্থান
দুই হাজার তেরো সালে তিনি জেন অস্টেনের সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটির আধুনিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে নিজেকে কখনোই অস্টেনের সমকক্ষ ভাবেননি। তাঁর মতে, মহান আর ভালো লেখকের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে, আর তিনি ভালো লেখকের দিকেই পড়েন।

শেষ বিদায়
জোয়ানা ট্রলোপ রেখে গেছেন তাঁর দুই কন্যা লুইস ও অ্যান্টোনিয়া, দুই সৎপুত্র এবং পাঁচ নাতি নাতনি। জীবনের জটিল আবেগ আর নীরব নাটককে সহজ ভাষায় ধরার যে দক্ষতা তিনি দেখিয়েছেন, তা তাঁকে ব্রিটিশ সাহিত্যে স্মরণীয় করে রাখবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

জীবনের টানাপোড়েনের কথাকার, ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জোয়ানা ট্রলোপের প্রয়াণ

০৫:০০:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

জীবনের সম্পর্ক, দাম্পত্য টানাপোড়েন আর পারিবারিক জটিলতাকে সহজ ভাষায় গভীরভাবে তুলে ধরা ব্রিটিশ লেখক জোয়ানা ট্রলোপ আর নেই। বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারের নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল বিরাশি বছর। তাঁর সাহিত্য সংস্থা জানিয়েছে মৃত্যুর খবর, তবে মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি।

সাহিত্যে জনপ্রিয়তার সঙ্গে বিতর্ক
জোয়ানা ট্রলোপ ছিলেন এমন এক লেখক, যাঁর উপন্যাস বিপুল জনপ্রিয়তা পেলেও সমালোচনার মুখে পড়েছে বহুবার। ইংল্যান্ডের স্বচ্ছল প্রাদেশিক জীবনের প্রতীক চুল্লির নাম ধরে তাঁর বইকে ব্যঙ্গ করে বলা হতো আগা উপন্যাস। গির্জা ও ধর্মযাজকদের নিয়ে লেখা কয়েকটি কাহিনির কারণে তাঁকে উনিশ শতকের লেখক অ্যান্থনি ট্রলোপের সঙ্গে তুলনা করা হতো। এই তুলনা তিনি বরাবরই নাকচ করেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর লেখাও আরও গাঢ়, সাহসী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে ওঠে।

জন্ম থেকে লেখক হয়ে ওঠা
উনিশশো তেতাল্লিশ সালের নয় ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের গ্লস্টারশায়ারের মিনচিনহ্যাম্পটনে জন্ম জোয়ানা ট্রলোপের। মা রোজমেরি হজসন ছিলেন শিল্পী ও লেখক, বাবা আর্থার ট্রলোপ ছিলেন ব্যাংকার। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শেষে তিনি কিছুদিন ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তরে কাজ করেন। পরে ক্যারোলাইন হার্ভে ছদ্মনামে ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন।

সমকালীন উপন্যাসে সাফল্য
উনিশশো আটাশি সালে দ্য কয়ার উপন্যাসের মাধ্যমে নিজের নামেই সমকালীন উপন্যাস লেখা শুরু করেন তিনি। এই পর্বের বইগুলোই তাঁকে খ্যাতির শিখরে তোলে। শূন্য দাম্পত্য, প্রেমের সম্পর্ক, আত্মপরিচয়ের লড়াই আর মানবিক যাজকদের গল্প তাঁর লেখায় বারবার ফিরে এসেছে। একের পর এক বই বিক্রির তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে।

Best-selling British writer Joanna Trollope has died at 82

ব্যক্তিজীবনের ভাঙাগড়া
জোয়ানা ট্রলোপের ব্যক্তিজীবনও ছিল টানাপোড়েনে ভরা। ব্যাংকার ডেভিড পটারকে বিয়ে করে তাঁর দুই কন্যা হয়। পরে সেই দাম্পত্য ভেঙে যায়। এরপর টেলিভিশন লেখক ইয়ান কার্টিসকে বিয়ে করলেও সেই সম্পর্কও টেকেনি। সঙ্গীতশিল্পী জেসন কাউচাকের সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল, সেটিও তাঁর মৃত্যুর আগে শেষ হয়। পুরুষের সঙ্গে বসবাসের তুলনায় কুকুরের সঙ্গে থাকা কম উত্তেজনাপূর্ণ বলে করা তাঁর রসিক মন্তব্য ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।

সমালোচকদের চোখে ট্রলোপ
তাঁর উপন্যাসের চরিত্ররা ছিল বয়স্ক হলেও জীবন্ত। এক সমালোচক লিখেছিলেন, তাঁর বৃদ্ধ চরিত্ররা একদিকে জেদি ও আত্মকেন্দ্রিক, অন্যদিকে আবেগী ও ভালোবাসার যোগ্য। আরেক সমালোচনায় নারীর আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদার উচ্চকণ্ঠ উপস্থিতির কথা উঠে আসে। লেখক নিজে অবশ্য নিজের কাজকে নিয়ে ছিলেন সংযত। তিনি বলতেন, তাঁর লেখা খুব স্পষ্ট ও পরিষ্কার, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক বা অলঙ্কৃত হওয়ার দাবি তিনি করেন না।

অস্টেনের ছায়া ও নিজের অবস্থান
দুই হাজার তেরো সালে তিনি জেন অস্টেনের সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটির আধুনিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে নিজেকে কখনোই অস্টেনের সমকক্ষ ভাবেননি। তাঁর মতে, মহান আর ভালো লেখকের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে, আর তিনি ভালো লেখকের দিকেই পড়েন।

শেষ বিদায়
জোয়ানা ট্রলোপ রেখে গেছেন তাঁর দুই কন্যা লুইস ও অ্যান্টোনিয়া, দুই সৎপুত্র এবং পাঁচ নাতি নাতনি। জীবনের জটিল আবেগ আর নীরব নাটককে সহজ ভাষায় ধরার যে দক্ষতা তিনি দেখিয়েছেন, তা তাঁকে ব্রিটিশ সাহিত্যে স্মরণীয় করে রাখবে।