প্যারিসে এখন শুধু ফ্যাশন কিংবা সুগন্ধির জন্য ভিড় নয়, শহরের রাস্তায় রাস্তায় নতুন করে তৈরি হচ্ছে চকলেটের গন্তব্য। তারকাখ্যাত পেস্ট্রি শিল্পী থেকে শুরু করে তরুণ সৃজনশীল কারিগররা মিলে প্যারিসকে গড়ে তুলছেন বিশ্বের সেরা চকলেট শহরের দাবিদার হিসেবে। ব্রাসেলস আর জুরিখের পাশে দাঁড়িয়ে এখন প্যারিসও বলছে, চকলেট এখানে শুধু মিষ্টি নয়, এক ধরনের সংস্কৃতি।
নতুন প্রজন্মের চকলেট দর্শন
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্যারিসে যেসব নতুন চকলেট দোকান খুলেছে, সেগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই আলাদা। এই প্রজন্মের চকলেট প্রস্তুতকারীরা কাঁচামালকে দেখছেন জীবন্ত উপাদান হিসেবে। নৈতিক উৎস, টেকসই চাষ আর ছোট কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার প্রবণতা বেড়েছে। চকলেট এখন আর পণ্যমাত্র নয়, বরং স্বাদ, ইতিহাস আর অনুভূতির মিশ্রণ।
সেলিব্রিটি পেস্ট্রি শিল্পীদের আগমন
এই ঢেউয়ের সবচেয়ে আলোচিত নাম সেড্রিক গ্রোলেট। তার নতুন দোকান সেড্রিক এ লা শকলাতেরিতে ঢুকলেই চোখে পড়ে গলতে থাকা চকলেটের দেয়াল আর বিশাল বাদামের মতো ঝুলন্ত শিল্পকর্ম। খেলাচ্ছলে বানানো চকলেট বার, মার্শম্যালো ভরা ভালুক কিংবা লেবুর মতো দেখতে কেক—সবই দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে। তবে কৌতুকের আড়ালেও রয়েছে গভীর স্বাদ, বিশেষ করে গাঢ় চকলেট আর ভ্যানিলার সূক্ষ্ম মেলবন্ধন।

তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আরও পরিচিত মুখ। এলউড বুয়াজ্জা আর নিনা মেতায়েরের মতো পুরস্কারজয়ী পেস্ট্রি শিল্পীরা প্যারিসের বিভিন্ন এলাকায় নতুন চকলেট দোকান খুলে শহরের মানচিত্র বদলে দিচ্ছেন।
অপেরা এলাকায় চকলেটের কেন্দ্র
প্যারিসের অপেরা এলাকা এখন কার্যত চকলেটপ্রেমীদের মিলনস্থল। এখানে জেড জেনিনের দোকানটি প্রথম দেখায় গয়নার শোরুম বলে ভুল হতে পারে। সাদা দেয়াল আর স্বর্ণালি ছোঁয়ার মাঝে সাজানো পিরামিড আকৃতির চকলেটগুলো দূর দেশের গল্প শোনায়। নাম আর উপাদানে উঠে আসে সাহারা থেকে কেরালা পর্যন্ত নানা ভৌগোলিক ইঙ্গিত। একটি মাত্র কাকাও খামার থেকে সংগৃহীত চকলেট ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তিনি তুলে ধরছেন উৎসের গুরুত্ব।
একই এলাকায় ইনফিনিমঁ শকলার দোকানে চকলেটের স্বাদ আরও সাহসী। সামুদ্রিক শৈবাল, জলপাই তেল কিংবা ফলের জেলের মতো উপাদান দিয়ে তৈরি চকলেট প্যারিসের চিরচেনা স্বাদের সীমা ভেঙে দিচ্ছে। একক উৎসের চকলেট বারের নামের সঙ্গে জুড়ে থাকছে খামারের পরিচয়, যেন প্রতিটি টুকরোই একেকটি ভ্রমণ।
নদীপাড় আর খালঘেঁষা সৃজনশীলতা
কানাল সাঁ মার্তাঁ এলাকায় উইলিয়াম আর্তিগের দোকানটি নীরব অথচ গভীর। তার তৈরি চকলেটে ফরাসি বাদামের স্বাদ আর আধুনিক নকশার মেলবন্ধন। ছোট একটি চকলেট স্কয়ার তাকে এনে দিয়েছে দেশের সেরা চকলেট পুরস্কার, যা তরুণ কারিগরদের জন্য অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে উঠেছে।

ব্রাজিলের রঙিন ছোঁয়া
প্যারিসের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে ব্রাজিলীয় ব্র্যান্ড ডেঙ্গোর দোকান। উজ্জ্বল রং, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল আর ন্যায্য বাণিজ্যের চর্চা তাদের পরিচয়। সমতল চকলেটের ওপর শুকনো কলা, কাজু কিংবা আমাজনের বিশেষ ফল ব্যবহার করে তারা দেখাচ্ছে, চকলেট কীভাবে একটি দেশের পরিচয় বহন করতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















