০৬:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
মস্কোতে নির্বাসিত আসাদ: বিলাসের আড়ালে নিঃসঙ্গ জীবন, রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ভাঙল নীরবতা, ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্নে ভাভনা মেনন অস্ট্রেলিয়ার নায়ক, সিরিয়ার গর্ব আহমেদ ঝড়বৃষ্টিতে ধ্বংসস্তূপে চাপা গাজা, লাশ উদ্ধারেই যুদ্ধের মতো লড়াই একটি ভাঙা বাড়ি: আজকের বিজয় দিবস মিলানে সৌদি ঐতিহ্যের উজ্জ্বল উপস্থিতি, বিশ্বদরবারে সংস্কৃতির শক্ত বার্তা দূষিত ধোঁয়ায় ঢাকা দিল্লি, উত্তর ভারতে ভেঙে পড়ল দৃশ্যমানতা অস্ট্রেলিয়ার বন্ডি বিচে রক্তাক্ত উৎসব, বন্দুক সহিংসতায় ১৫ প্রাণহানি ৭৫ বছরের বন্ধন জোরদার করতে জর্ডানে মোদি, শুরু তিন দেশ সফর সিডনির বন্ডি সৈকতে বন্দুক তাণ্ডব, শোকস্তব্ধ অস্ট্রেলিয়া, অস্ত্র আইন আরও কঠোরের পথে

২ লাখ ১০ হাজার বছরের মানবপথের সাক্ষী ফায়া প্যালিওল্যান্ডস্কেপ

আফ্রিকার বাইরে মানুষের প্রাচীনতম যাত্রার নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফায়া প্যালিওল্যান্ডস্কেপ। শারজাহর মরুভূমির বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে থাকা এই প্রত্নতাত্ত্বিক ভূদৃশ্য শুধু বালিয়াড়ি, ওয়াদি আর চুনাপাথরের গুহার গল্প বলে না; এটি বহন করে ডাইনোসরের যুগের সামুদ্রিক জীবের ফসিল আর মানব সভ্যতার প্রথম পদচিহ্নের ইতিহাস। প্রায় ৯৫ হাজার হেক্টর জুড়ে থাকা এই এলাকা মরুভূমি অঞ্চলের প্রথম প্রস্তরযুগীয় স্থান হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।

আফ্রিকা থেকে আরব উপদ্বীপে ভিন্ন এক যাত্রাপথ
ফায়া প্যালিওল্যান্ডস্কেপের গুরুত্ব তুলে ধরে ম্লেইহা প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র। এখানে প্রদর্শনীতে দেখানো হয় কীভাবে প্রাচীন মানুষ আফ্রিকা থেকে আরব উপদ্বীপে এসেছিল। প্রচলিত সিনাই উপদ্বীপের পথ নয়, বরং রুব আল খালি মরুভূমির দক্ষিণ প্রান্ত ধরে দক্ষিণ-পূর্ব আরব অঞ্চলে প্রবেশের বিকল্প পথের প্রমাণ মিলেছে এই এলাকায়।

প্রাগৈতিহাসিক সমুদ্রের ফসিল আর পাথরের ভাষা
মরুভূমির বুকে উন্মুক্ত পাথরের গায়ে আজও লুকিয়ে আছে সামুদ্রিক জীবের ফসিল। বালু আর ধুলোর স্তর সরিয়ে পানি ঢাললেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে লক্ষ লক্ষ বছর আগের সেই চিহ্ন। এই পাথরই জানায়, একসময় এখানেই ছিল প্রাচীন সমুদ্র।

ফায়া একের গুহা থেকে হাজারো পাথরের হাতিয়ার
ভ্রমণের শুরু হয় ফায়া এক এলাকা দিয়ে। এখানে ধসে পড়া বিশাল চুনাপাথরের আশ্রয়স্থল প্রমাণ করে প্রায় দুই লাখ দশ হাজার বছর আগে মানুষের বসবাস। এই স্থানসহ পুরো এলাকায় এখন পর্যন্ত পঁয়ত্রিশ হাজারের বেশি পাথরের হাতিয়ার পাওয়া গেছে, যা মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উন্মোচন করেছে।

ওয়াদি গুহায় জীবনের ছাপ
ফায়া নয়, দশ, এগারো ও পনেরো—প্রতিটি গুহাই ভিন্ন সময়ের গল্প বলে। ফায়া পনেরো এলাকায় একসময় পানির ঝরনা ছিল। এখানে পাওয়া ছাইয়ের স্তর প্রাচীন অগ্নিকুণ্ডের চিহ্ন বহন করে, আর পাথরের অস্ত্র ও তীরের ফলক নিয়ে যায় খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম সহস্রাব্দে। একই স্থানে তিনজন মানুষের দেহাবশেষ ও প্রাণীর হাড়ও মিলেছে।
ফায়া দশ এলাকায় ছিল পাথর কেটে হাতিয়ার তৈরির কেন্দ্র, যা পরে দাহ করা মানব অস্থি রাখার আচারস্থলে রূপ নেয়। ফায়া নয় ও এগারো গুহা ব্যবহৃত হয়েছে লৌহ যুগ ও ইসলাম-পূর্ব সময়ে সমাধিস্থল হিসেবে।

আল বুহাইসের সমাধি আর প্রাণিজ ইতিহাস
বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত আল বুহাইস অঞ্চলে মিলেছে নিওলিথিক যুগের অসংখ্য সমাধি। শুধু আল বুহাইস আঠারো এলাকা থেকেই পাওয়া গেছে প্রায় পাঁচ শতাধিক কবর, যা প্রাচীন সমাধি প্রথা সম্পর্কে বিরল ধারণা দেয়। গবেষণায় আরও জানা যায়, এই অঞ্চলে প্রাগৈতিহাসিক কালে বাস করত বন্য ছাগল, ওরিক্স, উট, গাধা এবং বিলুপ্ত অরকস প্রজাতি।

সংরক্ষণের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ
ফায়া প্যালিওল্যান্ডস্কেপের মূল অঞ্চল ও সংরক্ষিত বাফার এলাকা ভবিষ্যৎ উন্নয়ন থেকে এই ঐতিহ্যকে রক্ষা করছে। শারজাহ প্রত্নতত্ত্ব কর্তৃপক্ষের মতে, এই স্বীকৃতি শুধু শারজাহ নয়, পুরো অঞ্চলের ঐতিহ্য সংরক্ষণে এক বড় অর্জন।

জনপ্রিয় সংবাদ

মস্কোতে নির্বাসিত আসাদ: বিলাসের আড়ালে নিঃসঙ্গ জীবন, রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন

২ লাখ ১০ হাজার বছরের মানবপথের সাক্ষী ফায়া প্যালিওল্যান্ডস্কেপ

০৩:৪০:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আফ্রিকার বাইরে মানুষের প্রাচীনতম যাত্রার নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফায়া প্যালিওল্যান্ডস্কেপ। শারজাহর মরুভূমির বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে থাকা এই প্রত্নতাত্ত্বিক ভূদৃশ্য শুধু বালিয়াড়ি, ওয়াদি আর চুনাপাথরের গুহার গল্প বলে না; এটি বহন করে ডাইনোসরের যুগের সামুদ্রিক জীবের ফসিল আর মানব সভ্যতার প্রথম পদচিহ্নের ইতিহাস। প্রায় ৯৫ হাজার হেক্টর জুড়ে থাকা এই এলাকা মরুভূমি অঞ্চলের প্রথম প্রস্তরযুগীয় স্থান হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।

আফ্রিকা থেকে আরব উপদ্বীপে ভিন্ন এক যাত্রাপথ
ফায়া প্যালিওল্যান্ডস্কেপের গুরুত্ব তুলে ধরে ম্লেইহা প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র। এখানে প্রদর্শনীতে দেখানো হয় কীভাবে প্রাচীন মানুষ আফ্রিকা থেকে আরব উপদ্বীপে এসেছিল। প্রচলিত সিনাই উপদ্বীপের পথ নয়, বরং রুব আল খালি মরুভূমির দক্ষিণ প্রান্ত ধরে দক্ষিণ-পূর্ব আরব অঞ্চলে প্রবেশের বিকল্প পথের প্রমাণ মিলেছে এই এলাকায়।

প্রাগৈতিহাসিক সমুদ্রের ফসিল আর পাথরের ভাষা
মরুভূমির বুকে উন্মুক্ত পাথরের গায়ে আজও লুকিয়ে আছে সামুদ্রিক জীবের ফসিল। বালু আর ধুলোর স্তর সরিয়ে পানি ঢাললেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে লক্ষ লক্ষ বছর আগের সেই চিহ্ন। এই পাথরই জানায়, একসময় এখানেই ছিল প্রাচীন সমুদ্র।

ফায়া একের গুহা থেকে হাজারো পাথরের হাতিয়ার
ভ্রমণের শুরু হয় ফায়া এক এলাকা দিয়ে। এখানে ধসে পড়া বিশাল চুনাপাথরের আশ্রয়স্থল প্রমাণ করে প্রায় দুই লাখ দশ হাজার বছর আগে মানুষের বসবাস। এই স্থানসহ পুরো এলাকায় এখন পর্যন্ত পঁয়ত্রিশ হাজারের বেশি পাথরের হাতিয়ার পাওয়া গেছে, যা মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উন্মোচন করেছে।

ওয়াদি গুহায় জীবনের ছাপ
ফায়া নয়, দশ, এগারো ও পনেরো—প্রতিটি গুহাই ভিন্ন সময়ের গল্প বলে। ফায়া পনেরো এলাকায় একসময় পানির ঝরনা ছিল। এখানে পাওয়া ছাইয়ের স্তর প্রাচীন অগ্নিকুণ্ডের চিহ্ন বহন করে, আর পাথরের অস্ত্র ও তীরের ফলক নিয়ে যায় খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম সহস্রাব্দে। একই স্থানে তিনজন মানুষের দেহাবশেষ ও প্রাণীর হাড়ও মিলেছে।
ফায়া দশ এলাকায় ছিল পাথর কেটে হাতিয়ার তৈরির কেন্দ্র, যা পরে দাহ করা মানব অস্থি রাখার আচারস্থলে রূপ নেয়। ফায়া নয় ও এগারো গুহা ব্যবহৃত হয়েছে লৌহ যুগ ও ইসলাম-পূর্ব সময়ে সমাধিস্থল হিসেবে।

আল বুহাইসের সমাধি আর প্রাণিজ ইতিহাস
বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত আল বুহাইস অঞ্চলে মিলেছে নিওলিথিক যুগের অসংখ্য সমাধি। শুধু আল বুহাইস আঠারো এলাকা থেকেই পাওয়া গেছে প্রায় পাঁচ শতাধিক কবর, যা প্রাচীন সমাধি প্রথা সম্পর্কে বিরল ধারণা দেয়। গবেষণায় আরও জানা যায়, এই অঞ্চলে প্রাগৈতিহাসিক কালে বাস করত বন্য ছাগল, ওরিক্স, উট, গাধা এবং বিলুপ্ত অরকস প্রজাতি।

সংরক্ষণের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ
ফায়া প্যালিওল্যান্ডস্কেপের মূল অঞ্চল ও সংরক্ষিত বাফার এলাকা ভবিষ্যৎ উন্নয়ন থেকে এই ঐতিহ্যকে রক্ষা করছে। শারজাহ প্রত্নতত্ত্ব কর্তৃপক্ষের মতে, এই স্বীকৃতি শুধু শারজাহ নয়, পুরো অঞ্চলের ঐতিহ্য সংরক্ষণে এক বড় অর্জন।