০৩:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

চল্লিশে ফের ক্লাসরুমে ফেরা, বদলে যাওয়া জীবনের বড় সিদ্ধান্ত

ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে থাকা সময়ে অনেকেই যখন আয়ের শীর্ষে পৌঁছান, ঠিক তখনই অনেকে নতুন করে ক্লাসরুমে ফিরছেন। চাকরিচ্যুতি, স্থবির বেতন আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবের ভয়ে চল্লিশের কোঠায় পৌঁছানো বহু কর্মী আবার কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হচ্ছেন। কেউ সম্পূর্ণ ভিন্ন পেশায় যাচ্ছেন, কেউ আবার উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চাইছেন

মধ্যবয়সে পড়াশোনার কঠিন বাস্তবতা
চল্লিশে পড়াশোনায় ফেরা সহজ নয়। এই বয়সে কাজ, পরিবার ও পড়াশোনার ভার একসঙ্গে সামলাতে হয়। সহপাঠীরা যখন সর্বোচ্চ আয়ের সময়ে, তখন অনেককে নতুন করে ঋণের বোঝা নিতে হচ্ছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক খরচ গড়ে প্রায় ত্রিশ হাজার ডলার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খরচ আরও বেশি। তবু অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘ জীবনের বাস্তবতায় এই বিনিয়োগ ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।

দীর্ঘ কর্মজীবনের পরিকল্পনা
মানুষ এখন আগের মতো পঁয়ষট্টিতে অবসর নিচ্ছে না। সিন্ডি উডি চল্লিশে মাস্টার্স ও ডক্টরেট শেষ করে এখন শিক্ষকতায় যুক্ত। তাঁর মতে, নিজের ওপর বিনিয়োগই সবচেয়ে লাভজনক সিদ্ধান্ত। চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করতে গিয়ে তাঁকে রাত জেগে লেখালেখি করতে হয়েছে, পরিবারে কাজ ভাগ করে দিতে হয়েছে, টেলিভিশন ছেড়ে দিতে হয়েছে। তবু তিনি মনে করেন, সামনে আরও বহু বছর কাজ করার সুযোগ থাকায় এই পরিশ্রম সার্থক।

ডিগ্রি ও সনদের গুরুত্ব
অনেকে কলেজে না গিয়েও কর্মজীবনে এগিয়েছেন, কিন্তু শীর্ষ পদে পৌঁছাতে গিয়ে ডিগ্রির অভাব টের পেয়েছেন। কেভিন করেনথাল দীর্ঘদিন অলাভজনক খাতে কাজ করেও ডিগ্রি না থাকায় নির্বাহী পদে যেতে পারেননি। চল্লিশে পড়াশোনায় ফিরে একের পর এক সনদ ও ডিগ্রি অর্জনের পর এখন তিনি জাতীয় পর্যায়ের একটি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক। তাঁর অভিজ্ঞতায়, দক্ষতা থাকলেও ডিগ্রি ছাড়া অনেক দরজা খোলে না।

কারিগরি প্রশিক্ষণে নতুন আগ্রহ
শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, কারিগরি ও শিক্ষানবিশ কর্মসূচিতেও মধ্যবয়সীদের ভিড় বাড়ছে। কম খরচে এসব প্রশিক্ষণ শেষ করা যায় এবং এসব পেশা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ঝুঁকি তুলনামূলক কম। পেনসিলভানিয়ার একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের এক-চতুর্থাংশই চল্লিশের কোঠায়, যারা ভালো বেতন ও স্থিতিশীলতার খোঁজে নতুন দক্ষতা শিখছেন।

পেশা বদলের সাহসী গল্প
ভিক্টোরিয়া মাইনার গবাদিপশু পালন করলেও পুরুষপ্রধান মাংস প্রক্রিয়াজাত শিল্পে টিকে থাকতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন অনুভব করেন। চার বছরের শিক্ষানবিশ কর্মসূচি শেষে তিনি সরকারি পরিদর্শকের চাকরির প্রস্তাব পান, যা শারীরিক পরিশ্রম কম এবং দীর্ঘমেয়াদে কাজের সুযোগ দেয়। তাঁর কথায়, এখন শক্তির চেয়ে মস্তিষ্কের ব্যবহারই বেশি উপযোগী।

একইভাবে লাটয়া হল দীর্ঘদিন রাঁধুনির কাজ করে বুঝেছিলেন, এই পেশায় স্থায়িত্ব নেই। চল্লিশে সফটওয়্যার প্রকৌশল পড়তে গিয়ে গাড়ি বিক্রি করে, ভোরে বাস বদলে ক্লাসে পৌঁছেছেন। শেষ পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে তিনি আবারও পড়াশোনায় ফেরার স্বপ্ন দেখছেন। এসব গল্পই দেখাচ্ছে, মধ্যবয়সে শিক্ষায় ফেরা শুধু প্রয়োজন নয়, অনেকের জন্য নতুন জীবনের শুরু।

#চল্লিশে_পড়াশোনা #ক্যারিয়ার_পরিবর্তন #নতুন_দক্ষতা #শিক্ষায়_ফেরা #মধ্যবয়স #পেশা_বদলচল্লিশে ফের ক্লাসরুমে ফেরা, বদলে যাওয়া জীবনের বড় সিদ্ধান্ত

 

জনপ্রিয় সংবাদ

চল্লিশে ফের ক্লাসরুমে ফেরা, বদলে যাওয়া জীবনের বড় সিদ্ধান্ত

১২:৪২:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে থাকা সময়ে অনেকেই যখন আয়ের শীর্ষে পৌঁছান, ঠিক তখনই অনেকে নতুন করে ক্লাসরুমে ফিরছেন। চাকরিচ্যুতি, স্থবির বেতন আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবের ভয়ে চল্লিশের কোঠায় পৌঁছানো বহু কর্মী আবার কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হচ্ছেন। কেউ সম্পূর্ণ ভিন্ন পেশায় যাচ্ছেন, কেউ আবার উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চাইছেন

মধ্যবয়সে পড়াশোনার কঠিন বাস্তবতা
চল্লিশে পড়াশোনায় ফেরা সহজ নয়। এই বয়সে কাজ, পরিবার ও পড়াশোনার ভার একসঙ্গে সামলাতে হয়। সহপাঠীরা যখন সর্বোচ্চ আয়ের সময়ে, তখন অনেককে নতুন করে ঋণের বোঝা নিতে হচ্ছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক খরচ গড়ে প্রায় ত্রিশ হাজার ডলার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খরচ আরও বেশি। তবু অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘ জীবনের বাস্তবতায় এই বিনিয়োগ ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।

দীর্ঘ কর্মজীবনের পরিকল্পনা
মানুষ এখন আগের মতো পঁয়ষট্টিতে অবসর নিচ্ছে না। সিন্ডি উডি চল্লিশে মাস্টার্স ও ডক্টরেট শেষ করে এখন শিক্ষকতায় যুক্ত। তাঁর মতে, নিজের ওপর বিনিয়োগই সবচেয়ে লাভজনক সিদ্ধান্ত। চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করতে গিয়ে তাঁকে রাত জেগে লেখালেখি করতে হয়েছে, পরিবারে কাজ ভাগ করে দিতে হয়েছে, টেলিভিশন ছেড়ে দিতে হয়েছে। তবু তিনি মনে করেন, সামনে আরও বহু বছর কাজ করার সুযোগ থাকায় এই পরিশ্রম সার্থক।

ডিগ্রি ও সনদের গুরুত্ব
অনেকে কলেজে না গিয়েও কর্মজীবনে এগিয়েছেন, কিন্তু শীর্ষ পদে পৌঁছাতে গিয়ে ডিগ্রির অভাব টের পেয়েছেন। কেভিন করেনথাল দীর্ঘদিন অলাভজনক খাতে কাজ করেও ডিগ্রি না থাকায় নির্বাহী পদে যেতে পারেননি। চল্লিশে পড়াশোনায় ফিরে একের পর এক সনদ ও ডিগ্রি অর্জনের পর এখন তিনি জাতীয় পর্যায়ের একটি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক। তাঁর অভিজ্ঞতায়, দক্ষতা থাকলেও ডিগ্রি ছাড়া অনেক দরজা খোলে না।

কারিগরি প্রশিক্ষণে নতুন আগ্রহ
শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, কারিগরি ও শিক্ষানবিশ কর্মসূচিতেও মধ্যবয়সীদের ভিড় বাড়ছে। কম খরচে এসব প্রশিক্ষণ শেষ করা যায় এবং এসব পেশা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ঝুঁকি তুলনামূলক কম। পেনসিলভানিয়ার একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের এক-চতুর্থাংশই চল্লিশের কোঠায়, যারা ভালো বেতন ও স্থিতিশীলতার খোঁজে নতুন দক্ষতা শিখছেন।

পেশা বদলের সাহসী গল্প
ভিক্টোরিয়া মাইনার গবাদিপশু পালন করলেও পুরুষপ্রধান মাংস প্রক্রিয়াজাত শিল্পে টিকে থাকতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন অনুভব করেন। চার বছরের শিক্ষানবিশ কর্মসূচি শেষে তিনি সরকারি পরিদর্শকের চাকরির প্রস্তাব পান, যা শারীরিক পরিশ্রম কম এবং দীর্ঘমেয়াদে কাজের সুযোগ দেয়। তাঁর কথায়, এখন শক্তির চেয়ে মস্তিষ্কের ব্যবহারই বেশি উপযোগী।

একইভাবে লাটয়া হল দীর্ঘদিন রাঁধুনির কাজ করে বুঝেছিলেন, এই পেশায় স্থায়িত্ব নেই। চল্লিশে সফটওয়্যার প্রকৌশল পড়তে গিয়ে গাড়ি বিক্রি করে, ভোরে বাস বদলে ক্লাসে পৌঁছেছেন। শেষ পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে তিনি আবারও পড়াশোনায় ফেরার স্বপ্ন দেখছেন। এসব গল্পই দেখাচ্ছে, মধ্যবয়সে শিক্ষায় ফেরা শুধু প্রয়োজন নয়, অনেকের জন্য নতুন জীবনের শুরু।

#চল্লিশে_পড়াশোনা #ক্যারিয়ার_পরিবর্তন #নতুন_দক্ষতা #শিক্ষায়_ফেরা #মধ্যবয়স #পেশা_বদলচল্লিশে ফের ক্লাসরুমে ফেরা, বদলে যাওয়া জীবনের বড় সিদ্ধান্ত