০৩:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

শরণার্থীরা দারিদ্র্য দিয়ে শুরু করলেও দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে

যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে আসা মানুষের বড় একটি অংশ শুরুতে দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটালেও অল্প সময়ের মধ্যেই তারা অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। সরকারি আদমশুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করে করা একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থীরা কর্মসংস্থান, ব্যবসা এবং কর প্রদানে শক্ত অবস্থান তৈরি করে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে তারা সরকারি সুবিধা থেকে যতটা নেয়, তার চেয়েও বেশি অবদান রাখে রাজস্বে।

শরণার্থী গ্রহণের প্রেক্ষাপট
সত্তরের দশক থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে তিন মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থী প্রবেশ করেছে। মানবিক কারণে বাসের অনুমতি পেতে আসা এসব মানুষের বেশির ভাগই যুদ্ধ, সহিংসতা কিংবা নিপীড়ন থেকে পালিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে শরণার্থী নীতি কঠোর হওয়ায় তাদের অবদান ও বাস্তবতা নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

শুরুর দারিদ্র্য, পরের সাফল্য
গবেষণায় বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রথম দিকে শরণার্থীদের আয় সাধারণত কম থাকে এবং তারা সরকারি সহায়তার ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়। তবে আট বছরের মাথায় এই চিত্র বদলে যায়। নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম বিশ বছরে একজন শরণার্থী গড়ে সরকারি সুবিধার চেয়ে প্রায় একুশ হাজার ডলার বেশি কর প্রদান করে। স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের আরেক বিশ্লেষণে দেখা যায়, দীর্ঘ সময়ে ব্যয় ও কর প্রদানের ভারসাম্য প্রায় সমান, বরং কর আদায় সামান্য বেশি।

ভাষা ও দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জ
সব গল্প যে ইতিবাচক, তা নয়। অনেক শরণার্থী ইংরেজি ভাষায় তুলনামূলক দুর্বল থাকে এবং একটি অংশ বহু বছর পরও দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়ে যায়। তবুও এক দশকের বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা শরণার্থীদের গড় পারিবারিক আয় দেশটির সামগ্রিক গড় আয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। দারিদ্র্যের হারও ধীরে ধীরে সমান হয়ে আসে।

উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প
চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি শরণার্থীরা নতুন কাজের সুযোগও তৈরি করছে। বিভিন্ন শহরে কফিশপ, ত্বক পরিচর্যা প্রতিষ্ঠান, মুদিদোকানসহ নানা ব্যবসা গড়ে তুলছে তারা। একটি শহরে ছোট ব্যবসার প্রায় অর্ধেকই অভিবাসীদের উদ্যোগে পরিচালিত, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গতি এনেছে।

নীতি ও বিতর্ক
শরণার্থী নীতি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছেই। আফগান ও সোমালি শরণার্থীদের ঘিরে সাম্প্রতিক বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবুও অর্থনীতিবিদদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ইতিহাসে শরণার্থীরাই সবচেয়ে স্পষ্ট সাফল্যের উদাহরণ, যারা শুরুতে সহায়তা নিলেও শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিতে শক্ত ভিত গড়ে তোলে।

#শরণার্থী #যুক্তরাষ্ট্র #অর্থনীতি #অভিবাসন #কর্মসংস্থান #উদ্যোক্তা #করদাতা

জনপ্রিয় সংবাদ

শরণার্থীরা দারিদ্র্য দিয়ে শুরু করলেও দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে

০১:০২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে আসা মানুষের বড় একটি অংশ শুরুতে দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটালেও অল্প সময়ের মধ্যেই তারা অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। সরকারি আদমশুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করে করা একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থীরা কর্মসংস্থান, ব্যবসা এবং কর প্রদানে শক্ত অবস্থান তৈরি করে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে তারা সরকারি সুবিধা থেকে যতটা নেয়, তার চেয়েও বেশি অবদান রাখে রাজস্বে।

শরণার্থী গ্রহণের প্রেক্ষাপট
সত্তরের দশক থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে তিন মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থী প্রবেশ করেছে। মানবিক কারণে বাসের অনুমতি পেতে আসা এসব মানুষের বেশির ভাগই যুদ্ধ, সহিংসতা কিংবা নিপীড়ন থেকে পালিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে শরণার্থী নীতি কঠোর হওয়ায় তাদের অবদান ও বাস্তবতা নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

শুরুর দারিদ্র্য, পরের সাফল্য
গবেষণায় বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রথম দিকে শরণার্থীদের আয় সাধারণত কম থাকে এবং তারা সরকারি সহায়তার ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়। তবে আট বছরের মাথায় এই চিত্র বদলে যায়। নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম বিশ বছরে একজন শরণার্থী গড়ে সরকারি সুবিধার চেয়ে প্রায় একুশ হাজার ডলার বেশি কর প্রদান করে। স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের আরেক বিশ্লেষণে দেখা যায়, দীর্ঘ সময়ে ব্যয় ও কর প্রদানের ভারসাম্য প্রায় সমান, বরং কর আদায় সামান্য বেশি।

ভাষা ও দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জ
সব গল্প যে ইতিবাচক, তা নয়। অনেক শরণার্থী ইংরেজি ভাষায় তুলনামূলক দুর্বল থাকে এবং একটি অংশ বহু বছর পরও দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়ে যায়। তবুও এক দশকের বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা শরণার্থীদের গড় পারিবারিক আয় দেশটির সামগ্রিক গড় আয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। দারিদ্র্যের হারও ধীরে ধীরে সমান হয়ে আসে।

উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প
চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি শরণার্থীরা নতুন কাজের সুযোগও তৈরি করছে। বিভিন্ন শহরে কফিশপ, ত্বক পরিচর্যা প্রতিষ্ঠান, মুদিদোকানসহ নানা ব্যবসা গড়ে তুলছে তারা। একটি শহরে ছোট ব্যবসার প্রায় অর্ধেকই অভিবাসীদের উদ্যোগে পরিচালিত, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গতি এনেছে।

নীতি ও বিতর্ক
শরণার্থী নীতি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছেই। আফগান ও সোমালি শরণার্থীদের ঘিরে সাম্প্রতিক বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবুও অর্থনীতিবিদদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ইতিহাসে শরণার্থীরাই সবচেয়ে স্পষ্ট সাফল্যের উদাহরণ, যারা শুরুতে সহায়তা নিলেও শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিতে শক্ত ভিত গড়ে তোলে।

#শরণার্থী #যুক্তরাষ্ট্র #অর্থনীতি #অভিবাসন #কর্মসংস্থান #উদ্যোক্তা #করদাতা