ক্যামেরার ফ্রেমে এক বছরের প্রাণ-প্রকৃতি
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ২০২৫ সালের প্রাণী ও প্রকৃতি-কেন্দ্রিক বছরের সেরা কিছু ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রকৃতির জীবনের ভঙ্গুরতা ও স্থিতিস্থাপকতা একসঙ্গে ধরা পড়েছে। ছবিগুলো কখনও খুব কাছ থেকে—একটি ছোট প্রাণীর মুহূর্ত, এক টুকরো আলো, নড়াচড়া—আবার কখনও বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে—যেখানে পরিবেশ বদলের ইঙ্গিত স্পষ্ট। এই সংগ্রহ প্রকৃতিকে সাজসজ্জা হিসেবে দেখায় না; বরং মানুষী প্রভাব, জলবায়ু চাপ, আর পরিবেশগত পরিবর্তনের মধ্যেও যেভাবে প্রাণ টিকে থাকে—সেটাই মূল গল্প।
এখানে ‘টিকে থাকা’ই শিরোনাম। কোথাও জন্ম, কোথাও চলাচল, কোথাও স্থিরতা। আবার এমন ফ্রেমও আছে, যা অস্বস্তি তৈরি করে—কারণ সেগুলো দেখায় বাস্তুতন্ত্র বদলে গেলে প্রাণীরা কীভাবে নতুন বাস্তবতায় মানিয়ে নিতে বাধ্য হয়। একটি ছবিতে দেখা যায়, রাশিয়ার কাছের একটি দ্বীপে পরিত্যক্ত গবেষণা কেন্দ্রের সামনে একটি মেরু ভালুক—চারপাশে তুষার নয়, ঘাস। একটি ফ্রেমেই বদলে যাওয়া ঋতু ও উষ্ণ আর্কটিকের ইঙ্গিত উঠে আসে, কোনো গ্রাফ ছাড়াই।
এই গ্যালারি দেখায়, প্রকৃতি নিয়ে ফটোজার্নালিজম কেন জরুরি। প্রাণীরা সংবাদ সম্মেলন করে না। পরিবেশগত পরিবর্তন অনেক সময় ধীর, অসম, এবং চোখ এড়িয়ে যায়। ছবি সেই পরিবর্তনকে এক মুহূর্তে ‘দৃশ্যমান’ করে তোলে—যা পাঠককে দূরের ‘ক্লাইমেট’ ধারণা থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতার কাছাকাছি নিয়ে আসে।
ক্যাপশন ছাড়াই ছবিগুলো কী বলছে
বছরশেষের গ্যালারির শক্তি হলো সময়কে সংকুচিত করা। একটি প্রাণীর ছবি পুরো একটি মৌসুমের ইঙ্গিত দিতে পারে—খাদ্য খোঁজা, বংশবৃদ্ধি, অভিবাসন, বা বেঁচে থাকার সংগ্রাম। এপি’র নির্বাচন বিভিন্ন স্কেলে যায়—ক্ষুদ্র পোকা, বড় স্তন্যপায়ী, উড়ন্ত পাখি—যাতে বোঝা যায় একই গল্পের কত স্তর আছে।
আরেকটি বিষয়, ছবিতে মানুষ না থাকলেও মানুষের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। পরিত্যক্ত স্থাপনা, বেড়া, শহরের আলো, বোর্ডওয়াক, খামার—এই সব ‘চিহ্ন’ মনে করিয়ে দেয়, বন্যপ্রকৃতি এখন আমাদের অবকাঠামোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ‘বন্য’ আর ‘পরিচালিত’ জীবনের সীমারেখা ক্রমেই ঝাপসা হচ্ছে। অনেক প্রজাতিই এখন এই ওভারল্যাপ বা মিশ্র বাস্তবতায় বাস করে।
কিছু ফ্রেম নিখাদ সৌন্দর্য দেখায়। কিছু ফ্রেম চাপ ও টানাপোড়েন। পাখির উড়ান বা পালকে বোঝা যায় পৃথিবী ‘সীমান্তহীন’—কিন্তু আবাসস্থল হারানো, উষ্ণ সমুদ্র, ভূমি ব্যবহার বদল—এসব সীমান্তও আছে। গ্যালারিকে তর্ক করতে হয় না; দেখালেই হয়।
কেন এটি শুধু নান্দনিকতা নয়
সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্যপ্রাণীর ছবি অনেক সময় বিনোদনের মতো দেখা হয়। কিন্তু এ ধরনের ছবি জনরেকর্ড হিসেবেও কাজ করতে পারে। এগুলো সেই বাস্তবতা নথিভুক্ত করে, যা বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক ও স্থানীয় মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় আলোচনা করেন। ঘাসের মধ্যে মেরু ভালুকের মতো ছবি বরফ, খাদ্যপ্রাপ্যতা, আর দীর্ঘমেয়াদি টিকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ক্ষুদ্র প্রাণীর ক্লোজ-আপ মনে করিয়ে দেয়—জীববৈচিত্র্য মানে শুধু ‘আইকনিক’ প্রাণী নয়, অসংখ্য ক্ষুদ্র জীবন।
এই সংগ্রহ অন্য ধরনের মনোযোগও দাবি করে। এটি দর্শককে ধীর করে। তর্ক নয়, পর্যবেক্ষণ তৈরি করে। দ্রুত নিউজ-সাইকেলের যুগে সেটাই বড়। রাজনীতি ও সংঘাতের ভিড়ে প্রকৃতির খবর হারিয়ে যেতে পারে, কিন্তু পরিবেশগত বদল থামে না।
সে অর্থে গ্যালারিটি কেবল এক বছরের ভিজ্যুয়াল সারসংক্ষেপ নয়। এটি ইঙ্গিত দেয়—প্রকৃতি ও প্রাণজগৎও একই ‘হেডলাইন স্পেস’-এর অংশ। খবর শুধু মানুষের বক্তব্য নয়; খবর হলো পৃথিবী কী করছে—নিঃশব্দে, ধারাবাহিকভাবে, এবং কখনও কখনও অস্বস্তিকরভাবে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















