বয়স সত্তর পেরোলেই যুক্তরাজ্যে প্রতি দশজনের একজনের মস্তিষ্কে আলঝেইমারের মতো পরিবর্তন ধরা পড়ছে। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এই পরিবর্তন শনাক্ত হলেও তা এখনই রোগ নির্ণয় নয়, তবে চিকিৎসার উপযোগী মানুষের সংখ্যা সরকারি ধারণার তুলনায় বহুগুণ বেশি।
গবেষণায় কী মিলেছে
যুক্তরাজ্যের বাস্তব জনগোষ্ঠীভিত্তিক সবচেয়ে স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে সাম্প্রতিক এই গবেষণা। সত্তর বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে আলঝেইমারের সঙ্গে যুক্ত প্রোটিনের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। হিসাব বলছে, এই বয়সী এক মিলিয়নের বেশি মানুষ জাতীয় স্বাস্থ্য নির্দেশিকার চিকিৎসা মানদণ্ডে পড়তে পারেন। অথচ সরকারি হিসাবে অর্থায়ন থাকলে সম্ভাব্য যোগ্য মানুষের সংখ্যা ধরা হয়েছিল মাত্র সত্তর হাজারের মতো।
প্রাথমিক শনাক্তে বড় অগ্রগতি
গবেষকেরা বলছেন, এই ফলাফল আগাম ও নির্ভুল শনাক্তে বড় সম্ভাবনা তৈরি করেছে। আলঝেইমার গবেষণা সংস্থার নীতিবিষয়ক প্রধান ডেভিড থমাসের মতে, এমন উচ্চমানের গবেষণাই রক্তপরীক্ষা কীভাবে চিকিৎসায় ব্যবহার হবে তা বোঝাতে সাহায্য করবে। জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায় এই পরীক্ষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে আরও প্রমাণ জরুরি।

ধারণা ভাঙার ইঙ্গিত
কিংস কলেজ লন্ডন, স্টাভাঙ্গার বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও গথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণার প্রধান লেখক অধ্যাপক ডাগ আরসল্যান্ড বলেন, বার্ধক্যজনিত বিশ্বে ডিমেনশিয়ার মূল্যায়ন ও চিকিৎসা বড় চ্যালেঞ্জ। সহজ রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে যে পরিবর্তনগুলো মানসিক সক্ষমতা ক্ষয়ে ভূমিকা রাখে, তা ধরা সম্ভব হয়েছে। এই ফলাফল দীর্ঘদিনের ধারণা, যেমন নারীদের ওপর রোগের বেশি প্রভাব—এসবও প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
কীভাবে হলো গবেষণা
আগের হিসাব ছিল ছোট ক্লিনিকভিত্তিক নমুনার ওপর। নতুন গবেষণায় প্রায় এগারো হাজার পাঁচশ জনকে দৈবচয়ন করে রক্তের বায়োমার্কার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সম্প্রতি অনুমোদিত পি টাউ দুই এক সাত পরীক্ষায় আগের চেয়ে অনেক আগেই আলঝেইমারের পরিবর্তন শনাক্ত সম্ভব। তবে এটি কেবল বর্তমান পরিবর্তন মাপে, কে ভবিষ্যতে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হবেন তা বলে না। এই দিকটি নিয়ে পরবর্তী গবেষণার কথা জানিয়েছেন গবেষকরা। পারিবারিক চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করে প্রাথমিক সেবায় এই পরীক্ষা কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটিও আলোচনায়।
সংখ্যার চাপ আর বাস্তবতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গবেষণা দেখায় আমরা এমন এক সময়ে ঢুকছি যখন ডিমেনশিয়া আর অসহায়তার বিষয় নয়। তবে সম্ভাব্য উপকারভোগীর সংখ্যা এত বেশি যে বর্তমান ব্যয়ে সবার চিকিৎসা দেওয়া জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার পক্ষে কঠিন। বয়সভিত্তিক হিসাবে পঞ্চাশ ও ষাটের ঘরে আট শতাংশের কম মানুষের চিহ্ন পাওয়া গেছে, সত্তরের ঘরে এক তৃতীয়াংশের একটু বেশি এবং নব্বই পেরোনোদের মধ্যে প্রায় দুই তৃতীয়াংশে পরিবর্তন রয়েছে।

ভবিষ্যতের চিত্র
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে প্রায় দশ লাখ মানুষ ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন, যা পঁয়ষট্টি ঊর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে চৌদ্দ জনে একজনের সমান। ধারণা করা হচ্ছে, দুই হাজার চল্লিশ সালে এই সংখ্যা বেড়ে চৌদ্দ লাখে পৌঁছাবে। এতে এখনও ডিমেনশিয়ায় রূপ না নেওয়া প্রাথমিক আলঝেইমার পরিবর্তনধারী মানুষদের হিসাব ধরা হয়নি।
#আলঝেইমার #ডিমেনশিয়া #স্বাস্থ্যগবেষণা #বার্ধক্য #মস্তিষ্কস্বাস্থ্য #রক্তপরীক্ষা #স্বাস্থ্যসংবাদ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















