দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে স্যাচুরেটেড চর্বিকে হৃদরোগের প্রধান ঝুঁকি হিসেবে দেখা হয়েছে। লাল মাংস, মাখন, পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার ও ভাজাভুজি কম খাওয়ার পরামর্শই ছিল পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য সংস্থা গুলোর মূল বার্তা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেই প্রচলিত ধারণা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্তাদের বক্তব্য ও রাজনৈতিক বিতর্কের জেরে স্যাচুরেটেড চর্বি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো স্পষ্টভাবে সতর্কতার পক্ষে কথা বলে।
স্যাচুরেটেড চর্বি আসলে কী
চর্বির গঠন অনুযায়ী মূলত দুই ধরনের চর্বি রয়েছে। স্যাচুরেটেড চর্বি সাধারণত ঘরের তাপমাত্রায় জমাট থাকে এবং প্রাণিজ উৎসে বেশি পাওয়া যায়। মাখন, পনির, গরু ও শূকরের মাংসের পাশাপাশি নারকেল ও পাম তেল ও চর্বি থাকে। অন্যদিকে আনস্যাচুরেটেড চর্বি তরল প্রকৃতির হয় এবং মাছ, অ্যাভোকাডো, বাদাম, বীজ ও উদ্ভিজ্জ তেলে বেশি থাকে।

গবেষণা কী বলছে
পঞ্চাশ ও ষাটের দশক থেকেই গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যতালিকায় স্যাচুরেটেড চর্বি কমালে রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমে। একাধিক ক্লিনিক্যাল গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, স্যাচুরেটেড চর্বির বদলে আনস্যাচুরেটেড চর্বি গ্রহণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এই তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি খাদ্যনির্দেশিকায় স্যাচুরেটেড চর্বি সীমিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। পরবর্তী কয়েক দশকের গবেষণাও মূলত একই দিকেই ইঙ্গিত করেছে।
কেন আবার প্রশ্ন উঠছে
সম্প্রতি কিছু প্রভাবশালী মহল দাবি তুলেছে, মানব সভ্যতার প্রাচীন খাদ্যাভ্যাসে স্যাচুরেটেড চর্বি ছিল, তাই এটি ক্ষতিকর নয়। তাদের মতে, উদ্ভিজ্জ তেল স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটিয়েছে। তবে পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই দাবির পক্ষে শক্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং স্যাচুরেটেড চর্বি কমিয়ে আন স্যাচুরেটেড চর্বি বাড়ানোর ফলেই গত কয়েক দশকে হৃদরোগে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

সব স্যাচুরেটেড চর্বি কি সমান ক্ষতিকর
এখানেই কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্যের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। গবেষণায় দেখা যায়, দই বা পনিরের মতো কিছু পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার সব সময় সরাসরি ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত নয়। কিন্তু প্রক্রিয়াজাত মাংস ও অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেগুলো স্যাচুরেটেড চর্বি বেশি, সেগুলো স্পষ্টভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তবু সামগ্রিকভাবে স্যাচুরেটেড চর্বি বেশি খাওয়ার কোনো স্বাস্থ্যগত লাভ নেই বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
আপনার জন্য এর মানে কী
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, খাদ্যনির্দেশিকায় যদি স্যাচুরেটেড চর্বি বাড়ানোর বার্তা যায়, তবে দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে আনস্যাচুরেটেড চর্বিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ এখনো সবচেয়ে নিরাপদ পথ। ফলমূল, শাকসবজি, শস্য, মাছ ও উদ্ভিজ্জ তেলভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে স্বাভাবিকভাবেই স্যাচুরেটেড চর্বি কমে আসে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















