মোবাইল ফোন মানুষের সংযোগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে তা অনেকের জীবনে একাকিত্ব, বিচ্ছিন্নতা আর সম্পর্কের ভাঙনকে আরও তীব্র করে তুলছে। এই বাস্তবতাই এখন নতুন ভাষা পাচ্ছে নাটকের মঞ্চে। লন্ডনের থিয়েটারগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক প্রযোজনায় অনলাইন সংস্কৃতির ক্ষয়িষ্ণু প্রভাব উঠে আসছে, যেখানে পর্দার আলো মানুষের মুখের আলো ঢেকে দিচ্ছে।
পর্ন ও ক্ষমতার জটিল সম্পর্ক
লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট থিয়েটারে মঞ্চস্থ নতুন নাটকে দেখা যায় এক তরুণ গবেষকের গল্প, যিনি সাহিত্যের গভীর তত্ত্ব নিয়ে কাজ করলেও অনলাইন পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্ত। তার যুক্তিতে ক্ষমতা ও আকাঙ্ক্ষা একে অপরের সঙ্গে জড়িত, আর এই কল্পনাগুলো লজ্জার বিষয় হওয়া উচিত নয়। কিন্তু বাস্তব জীবনে এই আসক্তি ধীরে ধীরে তার সম্পর্কগুলোকে শুষে নিচ্ছে। প্রেমিকের উপস্থিতিতেও ফোনের পর্দা হয়ে উঠছে প্রধান সঙ্গী। এই অস্বস্তিকর নীরবতা দর্শককে বাধ্য করে ভাবতে, সম্পর্ক আসলে কোথায় আটকে যাচ্ছে।
ডিজিটাল সংস্কৃতি ও মঞ্চের ভাষা
গত এক বছরে লন্ডনের মঞ্চে অনলাইন ডেটিং, পুরুষতান্ত্রিক অনলাইন গোষ্ঠী কিংবা আত্মমুগ্ধ ডিজিটাল চরিত্রের গল্প ঘুরে ফিরে এসেছে। প্রযুক্তি যে মানুষের ভেতরের একাকিত্বকে বাড়িয়ে দিচ্ছে, তা নাট্যকারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ অতিরিক্ত অনলাইন থাকা মানে অনেক সময় নীরব ও অন্তর্মুখী থাকা। তবু সেই নীরবতারই বাহ্যিক রূপ খুঁজে নিচ্ছে মঞ্চ।

পুরোনো নাটকে নতুন পর্দা
একটি ক্লাসিক নাটকের সাম্প্রতিক পুনরুজ্জীবনে স্মার্টফোন হয়ে উঠেছে মঞ্চসজ্জার অবিচ্ছেদ্য অংশ। গৃহকর্মী দুই বোনের ঈর্ষা, ক্ষোভ আর প্রতিশোধের কল্পনা সরাসরি ফোনের ক্যামেরায় ধরা পড়ে, যা মঞ্চের দেয়ালে বড় পর্দায় ভেসে ওঠে। সামাজিক মাধ্যমের রঙিন কিন্তু বিকৃত ভাষা ব্যবহার করে এই প্রযোজনা দেখায়, অনলাইন খ্যাতির লোভ কীভাবে আত্মঘৃণা আর হিংসাকে উসকে দেয়।
পর্দা ও মঞ্চের মিলন
সাম্প্রতিক আরেকটি সংগীতনাট্যে নায়িকা মঞ্চ ছেড়ে থিয়েটারের বারান্দায় গিয়ে দর্শকদের গান শোনান, আর ভেতরের দর্শকরা তা পর্দায় দেখেন। এই দৃশ্য শুধু নাট্যকৌশল নয়, বরং ক্ষমতা আর খ্যাতির আধুনিক রূপক। দর্শকরাই তখন নিজেদের ফোনে সেই মুহূর্ত ধারণ করে ছড়িয়ে দেন।
থিয়েটার ও অনলাইনের ভবিষ্যৎ
ছোট ভিডিওর যুগে থিয়েটারের আলাদা সুবিধা আছে। সামাজিক মাধ্যমের ভিডিও আর নাটক—দুটোই আসলে অভিনয়নির্ভর। পার্থক্য শুধু একটির জন্ম আজ, আরেকটির হাজার বছর আগে। তাই ডিজিটাল পর্দা মঞ্চে আরও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। শর্ত একটাই, প্রযুক্তির ব্যবহার যেন নাটকের গভীরতাকে বাড়ায়, ঢেকে না ফেলে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















