লন্ডনের ইতিহাসে আলোচিত এক প্রাচীন নারীর পরিচয় নিয়ে দীর্ঘদিনের ধারণা এবার বদলে গেল আধুনিক বিজ্ঞান ও উন্নত ডিএনএ প্রযুক্তির হাত ধরে বিচি হেড নারী নামে পরিচিত এই ব্যক্তিকে একসময় ব্রিটেনের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী বলে মনে করা হলেও নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে ভিন্ন বাস্তবতা
রোমান শাসনামলের ব্রিটেনের এই নারীর দেহাবশেষ দুই হাজার বারো সালে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের ইস্টবর্ন টাউন হলের সংগ্রহশালা থেকে উদ্ধার করা হয়। কার্বন পরীক্ষায় জানা যায় খ্রিস্টীয় একশ ঊনত্রিশ থেকে তিনশ এগারোর মধ্যবর্তী সময়ে তার মৃত্যু হয়। অর্থাৎ রোমান শাসনের সময়েই তার জীবনকাল শেষ হয়েছিল
প্রথম ধারণা কীভাবে তৈরি হয়েছিল
দুই হাজার তেরো সালে গবেষকেরা তার খুলির গঠন বিশ্লেষণ করে ধারণা করেন তিনি আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের দক্ষিণ দিক থেকে এসেছিলেন। সেই সময় খুলি মাপজোকের পদ্ধতিকে বংশগত উৎস নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হতো। এই কারণেই তাকে ব্রিটেনের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়
এরপর দুই হাজার সতেরো সালে সীমিত জেনেটিক বিশ্লেষণে তার ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে যোগসূত্র থাকতে পারে বলে ধারণা উঠে আসে। তবে এই গবেষণাও ছিল আংশিক তথ্যনির্ভর
উন্নত ডিএনএ প্রযুক্তিতে নতুন সত্য
সাম্প্রতিক গবেষণায় উন্নতমানের প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন এই নারী আদতে দক্ষিণ ইংল্যান্ডেই জন্মেছিলেন। গবেষকেরা জানিয়েছেন তার জিনগত বৈশিষ্ট্য রোমান যুগের স্থানীয় ব্রিটিশ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিল রাখে

লন্ডনের প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরের গবেষক উইলিয়াম মার্শ জানান আধুনিক ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এই নারীর প্রকৃত উৎস নির্ণয় সম্ভব হয়েছে। তার মতে বিজ্ঞান এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো ধারণা সংশোধন করাও গবেষণার অংশ
নারীর চেহারা ও জীবনযাত্রার ধারণা
ডিএনএ তথ্যের সঙ্গে তার খুলির ত্রিমাত্রিক স্ক্যান মিলিয়ে গবেষকেরা একটি প্রতিকৃতি তৈরি করেছেন। সেখানে দেখা যায় তার চুল ছিল হালকা রঙের ত্বক উজ্জ্বল এবং চোখ নীল। উচ্চতা ছিল প্রায় পাঁচ ফুটের কম এবং মৃত্যুকালে বয়স ছিল আঠারো থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে
তার পায়ের একটি সেরে ওঠা ক্ষত ইঙ্গিত দেয় জীবনের কোনো এক সময়ে তিনি গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন তবে সেটি প্রাণঘাতী ছিল না। হাড়ে থাকা কার্বন ও নাইট্রোজেনের মাত্রা বিশ্লেষণ করে জানা যায় তার খাদ্যতালিকায় সামুদ্রিক খাবারের পরিমাণ ছিল বেশি
বিজ্ঞান নিজেই নিজেকে সংশোধন করছে
গবেষণার প্রধান লেখক সেলিনা ব্রেস বলেন বিজ্ঞান সব সময় পরিবর্তনশীল। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন তথ্য পাওয়া যায় এবং আগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করাই গবেষকের দায়িত্ব
বাইরের বিশেষজ্ঞরাও এই গবেষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন এটি বিজ্ঞানের আত্মসংশোধনের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। একই সঙ্গে তারা প্রশ্ন তুলেছেন শুধু খুলির গঠন বিশ্লেষণ করে বংশগত পরিচয় নির্ধারণের পদ্ধতি আদৌ কতটা কার্যকর
এই গবেষণা দেখিয়ে দিল ইতিহাসের অনেক অধ্যায়ই চূড়ান্ত নয়। আধুনিক বিজ্ঞান পুরোনো গল্পকে নতুনভাবে লিখছে এবং অতীতকে বোঝার পথ আরও স্পষ্ট করছে
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















