নাইল নদের তীরে গড়ে ওঠা সভ্যতার শিকড় নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রশ্নে নতুন আলোর দেখা মিলেছে। প্রাচীন মিসরের এক ব্যক্তির সম্পূর্ণ জিনগত মানচিত্র বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, পিরামিড নির্মাণের সময়কার সমাজ শুধু উত্তর আফ্রিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এর সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার মানুষেরও গভীর যোগ ছিল। এই গবেষণা প্রাচীন বিশ্বের মানুষের চলাচল ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ সম্পর্কে নতুন ধারণা দিচ্ছে ।
ডিএনএ বিশ্লেষণে কী মিলল
গবেষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় চার হাজার পাঁচশ থেকে চার হাজার আটশ বছর আগের এক পুরুষের দেহাবশেষ থেকে নেওয়া ডিএনএতে দেখা গেছে, তার জিনগত পরিচয়ের প্রায় আশি শতাংশ উত্তর আফ্রিকার প্রাচীন জনগোষ্ঠী থেকে এসেছে। বাকি অংশের উৎস পশ্চিম এশিয়া ও মেসোপটেমিয়া অঞ্চল। এতদিন এই অঞ্চলের সঙ্গে মিশরের সম্পর্ক মূলত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে সীমিত ছিল, এবার প্রথমবারের মতো সরাসরি জিনগত প্রমাণ মিলল।
সংরক্ষণের ব্যতিক্রমী সৌভাগ্য
এই ব্যক্তি মমি করা ছিলেন না। তাকে একটি মাটির পাত্রে সিল করে কবর দেওয়া হয়েছিল, যা ডিএনএ সংরক্ষণের জন্য অপ্রত্যাশিতভাবে সহায়ক হয়েছে। গবেষকরা দাঁতের ভেতরের অংশ থেকে জিনগত উপাদান সংগ্রহ করেন। গরম আবহাওয়ার দেশ হওয়া সত্ত্বেও এই পদ্ধতির কারণে ডিএনএ অক্ষত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শ্রমজীবন আর সামাজিক মর্যাদার দ্বন্দ্ব
কঙ্কাল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যক্তি দীর্ঘদিন কঠোর শারীরিক পরিশ্রমে যুক্ত ছিলেন। হাড়ে বাত, অস্থিক্ষয় ও ভার বহনের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। গবেষকদের মতে, তিনি সম্ভবত কুমার বা ভারী কাজে যুক্ত কারিগর ছিলেন। তবে তার দাফনের ধরন তুলনামূলক মর্যাদাপূর্ণ, যা সাধারণ শ্রমজীবীর ক্ষেত্রে বিরল। এতে সামাজিক অবস্থান নিয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
ইতিহাস বোঝার নতুন সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মাত্র একটি নমুনা হলেও প্রাচীন মিসরের জনগোষ্ঠীর উৎস ও চলাচল বোঝার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। ভবিষ্যতে আরও ডিএনএ বিশ্লেষণ হলে জানা যাবে, কখন এবং কীভাবে পশ্চিম এশিয়া থেকে মানুষ নীল নদের সভ্যতায় যুক্ত হয়েছিল।
#প্রাচীনমিসর #ডিএনএগবেষণা #পিরামিডযুগ #মানবইতিহাস #প্রত্নতত্ত্ব #বিজ্ঞানসংবাদ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















