০৫:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
সোনার ঝলক অটুট বিশ্ববাজারে, দুবাইয়ে ক্রেতাদের বাড়তি চাপ ত্রাণকেন্দ্রেই মিলবে এক হাজার রিঙ্গিতের বন্যা সহায়তা, দ্রুত অর্থ পেতে নতুন সিদ্ধান্ত সমুদ্রের গোধূলি জগতে অজানা প্রাণের সন্ধান, গভীর সাগরেও জলবায়ু সংকটের ছায়া রাধিকা আপ্টের নতুন মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলারে নায়ক খলনায়কের সীমারেখা ভেঙে পড়ছে রেমিট্যান্স না সোনা, কোন পথে বেশি সঞ্চয়? প্রবাসীদের নতুন হিসাব মালয়েশিয়ায় ভয়াবহ বন্যা, ছয় রাজ্যে ঘরছাড়া হাজারো মানুষ হরমোনজনিত সমস্যার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি: সিঙ্গাপুরের বহু নারীর প্রজনন ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ঝিলমিল পুঁতির জাদুতে বিক্রি শেষ মিনিটেই, ঘরে বসে গড়ে ওঠা এক শিল্পীর সাফল্যের গল্প এমন ভয়ংকর পরিবেশ দেখার জন্য এই সরকারকে আনা হয়নি: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ক্রিসমাস উপহারে সৌন্দর্যের ঝলক, সব বাজেটেই প্রস্তুত বিশ্ববিখ্যাত সেট

ঝিলমিল পুঁতির জাদুতে বিক্রি শেষ মিনিটেই, ঘরে বসে গড়ে ওঠা এক শিল্পীর সাফল্যের গল্প

ঝকঝকে পুঁতি আর সূক্ষ্ম সেলাইয়ের মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে এক অনন্য শিল্পভুবন। সিঙ্গাপুরের শিল্পী তেরেসা লিমের হাতে তৈরি কানের দুল এখন অনলাইনে প্রকাশের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি দুল আলাদা, আলো পড়লেই বদলে যায় তার ঝিলিক, বদলে যায় রঙের অনুভূতি।

শৈশবের হাতের কাজ থেকে পেশার পথ

শিল্পী তেরেসা লিম, যিনি সামাজিক মাধ্যমে পরিচিত টিটিহিহি নামে, ছোটবেলা থেকেই হাতের কাজের প্রতি আকৃষ্ট। ডিজিটাল আঁকিবুঁকি থেকে শুরু করে সূচিকর্ম, নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। লাসাল আর্ট কলেজে ফ্যাশন টেক্সটাইল ডিজাইন পড়ার সময়ই সূচ-সুতোর সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পড়াশোনা শেষে ফ্রিল্যান্স চিত্রশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন, ফ্যাশন অনুষ্ঠান আর উৎসবে আঁকা প্রতিকৃতিই ছিল তার আয়ের ভরসা।

মহামারিতে বদলে যাওয়া জীবন

সময় লাগত বেশি, আয় হতো কম। একেকটি সূচিকর্মে প্রতিকৃতি বানাতে লেগে যেত প্রায় দেড় সপ্তাহ। এর মধ্যেই মহামারি এসে থামিয়ে দেয় অনুষ্ঠান জগত। ঘরে বসে নতুন পথ খোঁজার সময়েই জন্ম নেয় ভাবনা, শিল্পকে পরার উপযোগী করে তোলার।

পুঁতির কানে ঝুলে পড়া শিল্প

বছরের পর বছর জমিয়ে রাখা পুঁতি আর ঝিলিক দেওয়া উপকরণ জুড়ে দিতে শুরু করেন তিনি। বন্ধুদের উপহার দেওয়া কানের দুল অনলাইন বৈঠকে নজর কাড়ে। সেখান থেকেই বিক্রির অনুরোধ আসতে থাকে। শুরুটা সামাজিক মাধ্যমেই, পরে বাড়তে থাকা চাহিদার কারণে তৈরি করতে হয় নিজস্ব ওয়েবসাইট।

মাসে একবার, মিনিটেই শেষ

এখন প্রতি মাসে চার থেকে সাতটি নতুন নকশা প্রকাশ করেন তেরেসা। প্রতিটি নকশার দুল হাতে সেলাই করা হয় বলে সংখ্যাও সীমিত। একেকটি নকশায় সর্বোচ্চ ত্রিশ জোড়া দুল তৈরি হয়। দাম নির্ভর করে আকার আর কাজের জটিলতার ওপর। অর্ডার ফরম খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব জায়গা পূর্ণ হয়ে যায়।

শিল্পী, মা আর ঘরের স্টুডিও

দুই ছোট কন্যা আর গবেষক স্বামীকে নিয়ে ঘরের মধ্যেই তার কাজের জগৎ। মেয়েরা স্কুলে থাকার সময়ই সূচ-সুতো হাতে বসে পড়েন তিনি। ছোট নকশায় আধা ঘণ্টা, বড় নকশায় লাগে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত সময়। দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে গিয়ে নিয়মিত চিকিৎসার শরণাপন্ন হতে হলেও কাজের আনন্দে ক্লান্তি ভুলে যান।

বড় হওয়ার চেয়ে অর্থপূর্ণ থাকা

ব্যবসা বড় করার চেয়ে নিজের কাজকে মানুষের গায়ে দেখতেই বেশি আনন্দ পান তেরেসা। তাই বাজার আর মেলায় অংশ নেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন বহুবার। তার কাছে এই কানের দুল শুধু অলংকার নয়, ছোট ছোট শিল্পকর্ম। অপেক্ষার মধ্যেই নাকি এর আসল মূল্য।

ভবিষ্যৎ স্বপ্ন

আগামী দিনে একক প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে তার। পাশাপাশি নতুন মাধ্যমে কাজ করার কথাও ভাবছেন। তবু সব কিছুর মাঝে সবচেয়ে বড় আনন্দ একটাই, ঝিলমিল করা পুঁতির সঙ্গে কাজ করা। রোদ পড়লে স্টুডিও ভরে ওঠে আলোয়, আর কাজের জায়গা হয়ে ওঠে এক আনন্দের খেলার মাঠ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সোনার ঝলক অটুট বিশ্ববাজারে, দুবাইয়ে ক্রেতাদের বাড়তি চাপ

ঝিলমিল পুঁতির জাদুতে বিক্রি শেষ মিনিটেই, ঘরে বসে গড়ে ওঠা এক শিল্পীর সাফল্যের গল্প

০৩:৫৯:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

ঝকঝকে পুঁতি আর সূক্ষ্ম সেলাইয়ের মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে এক অনন্য শিল্পভুবন। সিঙ্গাপুরের শিল্পী তেরেসা লিমের হাতে তৈরি কানের দুল এখন অনলাইনে প্রকাশের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি দুল আলাদা, আলো পড়লেই বদলে যায় তার ঝিলিক, বদলে যায় রঙের অনুভূতি।

শৈশবের হাতের কাজ থেকে পেশার পথ

শিল্পী তেরেসা লিম, যিনি সামাজিক মাধ্যমে পরিচিত টিটিহিহি নামে, ছোটবেলা থেকেই হাতের কাজের প্রতি আকৃষ্ট। ডিজিটাল আঁকিবুঁকি থেকে শুরু করে সূচিকর্ম, নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। লাসাল আর্ট কলেজে ফ্যাশন টেক্সটাইল ডিজাইন পড়ার সময়ই সূচ-সুতোর সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পড়াশোনা শেষে ফ্রিল্যান্স চিত্রশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন, ফ্যাশন অনুষ্ঠান আর উৎসবে আঁকা প্রতিকৃতিই ছিল তার আয়ের ভরসা।

মহামারিতে বদলে যাওয়া জীবন

সময় লাগত বেশি, আয় হতো কম। একেকটি সূচিকর্মে প্রতিকৃতি বানাতে লেগে যেত প্রায় দেড় সপ্তাহ। এর মধ্যেই মহামারি এসে থামিয়ে দেয় অনুষ্ঠান জগত। ঘরে বসে নতুন পথ খোঁজার সময়েই জন্ম নেয় ভাবনা, শিল্পকে পরার উপযোগী করে তোলার।

পুঁতির কানে ঝুলে পড়া শিল্প

বছরের পর বছর জমিয়ে রাখা পুঁতি আর ঝিলিক দেওয়া উপকরণ জুড়ে দিতে শুরু করেন তিনি। বন্ধুদের উপহার দেওয়া কানের দুল অনলাইন বৈঠকে নজর কাড়ে। সেখান থেকেই বিক্রির অনুরোধ আসতে থাকে। শুরুটা সামাজিক মাধ্যমেই, পরে বাড়তে থাকা চাহিদার কারণে তৈরি করতে হয় নিজস্ব ওয়েবসাইট।

মাসে একবার, মিনিটেই শেষ

এখন প্রতি মাসে চার থেকে সাতটি নতুন নকশা প্রকাশ করেন তেরেসা। প্রতিটি নকশার দুল হাতে সেলাই করা হয় বলে সংখ্যাও সীমিত। একেকটি নকশায় সর্বোচ্চ ত্রিশ জোড়া দুল তৈরি হয়। দাম নির্ভর করে আকার আর কাজের জটিলতার ওপর। অর্ডার ফরম খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব জায়গা পূর্ণ হয়ে যায়।

শিল্পী, মা আর ঘরের স্টুডিও

দুই ছোট কন্যা আর গবেষক স্বামীকে নিয়ে ঘরের মধ্যেই তার কাজের জগৎ। মেয়েরা স্কুলে থাকার সময়ই সূচ-সুতো হাতে বসে পড়েন তিনি। ছোট নকশায় আধা ঘণ্টা, বড় নকশায় লাগে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত সময়। দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে গিয়ে নিয়মিত চিকিৎসার শরণাপন্ন হতে হলেও কাজের আনন্দে ক্লান্তি ভুলে যান।

বড় হওয়ার চেয়ে অর্থপূর্ণ থাকা

ব্যবসা বড় করার চেয়ে নিজের কাজকে মানুষের গায়ে দেখতেই বেশি আনন্দ পান তেরেসা। তাই বাজার আর মেলায় অংশ নেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন বহুবার। তার কাছে এই কানের দুল শুধু অলংকার নয়, ছোট ছোট শিল্পকর্ম। অপেক্ষার মধ্যেই নাকি এর আসল মূল্য।

ভবিষ্যৎ স্বপ্ন

আগামী দিনে একক প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে তার। পাশাপাশি নতুন মাধ্যমে কাজ করার কথাও ভাবছেন। তবু সব কিছুর মাঝে সবচেয়ে বড় আনন্দ একটাই, ঝিলমিল করা পুঁতির সঙ্গে কাজ করা। রোদ পড়লে স্টুডিও ভরে ওঠে আলোয়, আর কাজের জায়গা হয়ে ওঠে এক আনন্দের খেলার মাঠ।