দীর্ঘ অস্থিরতা, বাণিজ্যযুদ্ধ আর সরকারি অচলাবস্থার পরও দুই হাজার পঁচিশ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি। পরিসংখ্যান বলছে, দেশটি টিকে গেছে। কিন্তু সেই টিকে থাকার গল্পের আড়ালে লুকিয়ে আছে ভিন্ন বাস্তবতা। নতুন বছরে পা রাখার মুখে বহু আমেরিকান চাকরি, খরচ আর ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

ডেটা ফিরলেও স্বস্তি ফেরেনি
সরকারি অচলাবস্থার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অর্থনৈতিক তথ্য আবার প্রকাশ শুরু হয়েছে। সেই তথ্যের চিত্র জটিল। নভেম্বর মাসে চাকরি সৃষ্টি মোটামুটি ভালো হলেও বেকারত্ব বেড়েছে। খুচরা বিক্রি শক্তিশালী থাকলেও মজুরি বৃদ্ধির গতি কমেছে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা ঠান্ডা হলেও এখনো স্বস্তির জায়গায় পৌঁছায়নি। অর্থাৎ অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে এক অস্বস্তিকর স্থবিরতায়।
ভয়াবহ পূর্বাভাস ভাঙলেও সমস্যার শেষ নয়
গত বসন্তে অনেক অর্থনীতিবিদ শুল্কনীতির কারণে লাগামছাড়া মূল্যস্ফীতি বা মন্দার আশঙ্কা করেছিলেন। বাস্তবে সেই ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়নি। বরং তৃতীয় প্রান্তিকে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক শক্ত ছিল। সারাবছরের হিসাব এলে দেখা যেতে পারে, মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের পর প্রবৃদ্ধি প্রায় দেড় শতাংশের কাছাকাছি। তবে আগের বছরের তুলনায় এই গতি কম। মন্দা না হলেও ধীরে ধীরে ক্ষয় হওয়া বাস্তবতা অস্বীকার করা যাচ্ছে না।

জীবনযাত্রার খরচে সাধারণ মানুষের হাঁপানি
জরিপে স্পষ্ট, বেশির ভাগ মানুষ মনে করছেন অর্থনীতি তাঁদের পক্ষে কাজ করছে না। ভোগব্যয় মূলত ধনী পরিবারের হাত ধরে চলছে। বাড়ির মালিক হওয়া এখনো বহু মানুষের নাগালের বাইরে। শিশু পরিচর্যা ব্যয়বহুলই রয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিল বাড়ছে, স্বাস্থ্যবিমার ভর্তুকি শেষ হলে প্রিমিয়াম আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এসব মিলিয়ে দৈনন্দিন জীবন ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
শক্তি আছে, কিন্তু সবার জন্য নয়
বাণিজ্যযুদ্ধের ধাক্কা সামাল দিতে অর্থনীতিতে অপ্রত্যাশিত শক্তির উৎসও ছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির জন্য তথ্যকেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ বেড়েছে। শেয়ারবাজারও এই আশাবাদে চাঙা ছিল, যা ভোগব্যয়কে কিছুটা ঠেকিয়ে রেখেছে। তবে এই সুফল মূলত ধনী শ্রেণির ঘরেই ঢুকেছে। শ্রমবাজার নরম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের মজুরি চাপের মুখে। ফলে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান আরও স্পষ্ট।

অসম চাপ আর বৈষম্যের বাস্তবতা
সাম্প্রতিক স্নাতকদের জন্য চাকরি পাওয়া এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হয়ে উঠেছে। কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকদের বেকারত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকেত হিসেবে ধরা হচ্ছে। সরকারি খাতে কাটছাঁটের প্রভাবও তাঁদের ওপর বেশি পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আজ যে চাপ কিছু গোষ্ঠীর ওপর দেখা যাচ্ছে, কাল তা সবার জীবনেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সতর্ক আশাবাদে ভবিষ্যৎ
তবু অনেক পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, আগামী বছরে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে। কর ছাড়ের ফলে ফেরত অর্থ ভোগব্যয়ে সহায়তা করতে পারে। সুদের হার কমায় ব্যবসা ও ভোক্তা উভয়ই সুবিধা পেতে পারেন। সবচেয়ে বড় আশা, দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পর নীতিগত স্থিরতা ফিরলে বিনিয়োগ আবার গতি পাবে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উচ্ছ্বাস থেমে গেলে বা নতুন নীতিগত ধাক্কা এলে এই আশাবাদও নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















