
আইপিজিএমএন্ডআর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে গবেষণার জন্য স্বাধীনতা পূর্ব ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন আইপিজিএম এন্ড আর-কে গবেষণা করার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক দূরবস্থার মধ্যেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে সুষ্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে আইপিজিএম এন্ড আর-কে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) যখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে শাহবাগে স্থানান্তর করা হয় তখন শয্যা সংখ্যা ছিল ৩০০। বঙ্গবন্ধু শয্যা সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৮ই অক্টোবর তৎকালীন আইপিজিএমএন্ডআর-এ কেন্দ্রীয় রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের উদ্বোধন করেন। ১৯৯৬ সালে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা বর্তমানে বিশ্ব নেতার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-কে নিয়ে এককভাবে সরকার গঠন করার মাত্র দু’ বছরের মধ্যে ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেশের প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়”। প্রকৃতপক্ষে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঐকান্তিক সদিচ্ছাতেই পূরণ হয়েছিলো এদেশের চিকিৎসক সমাজের তিন দশকের দাবি। ১৯৯৮ সালে দেশের একমাত্র মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন। বাস্তবেই বাংলাদেশের মানুষের চিকিৎসাসেবার আশা-ভরসা ও আস্থার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
চিকিৎসা শিক্ষা: তৎকালীন আইপিজিএম এন্ড আর এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ৭টি কোর্স দিয়ে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমডি, এমএস, এমপিএইচ, এমফিল, ডিপ্লোমাসহ পোস্ট গ্রাজুয়েট বিষয়ের সংখ্যা ১০৬টি। রেসিডেন্সী কোর্সের সংখ্যা ৭০টি। অধিভুক্ত মেডিক্যাল কলেজ ও ইন্সটিটিউটের সংখ্যা ৫৪টি। অনুষদের সংখ্যা ৭টি। বিভাগের সংখ্যা ৫৭টি। রয়েছে ইনস্টিটিউট অফ পেডিয়াট্রিক নিউরোডিসঅর্ডার এন্ড অটিজম (ইপনা)। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিবছর ৮ শতাধিক ছাত্রছাত্রী ভর্তি হচ্ছেন এবং প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত থাকছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। দেশের শিক্ষার্থী ছাড়াও নেপাল, ভারত, বতসোয়ানা, সোমালিয়া, ইরান, কানাডা, মালদ্বীপ, অস্ট্রেলিয়া, ভূটানসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীগণ লেখাপড়া করছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। চালু করা হয়েছে বহুল প্রত্যাশিত পিএইচডি প্রোগ্রাম।

স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা: বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা দিবস নিয়মিত পালিত হচ্ছে। প্রতি বছর শিক্ষক, শিক্ষার্থীকে গবেষণা মঞ্জুরী প্রদান করা হচ্ছে। গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ইম্পিরিয়াল কলেজ অফ লন্ডন, ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হসপিস এন্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার এলায়েন্স, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, রকফেলার ফাউন্ডেশন, জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টে নির্ধারণে ও টিকার কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিশ্বমানের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এ বিষয়ে একাধিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। খাদ্যে ক্ষতিকারক উপাদানের উপস্থিতি (ফুড হ্যাজার্ড) নিয়ে, পুষ্টি বিষয়ে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমানের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। গবেষণার মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের কার্যকর উপায় ও ভ্যাক্সসিনসহ ওষুধ আবিষ্কারের সুযোগ রয়েছে। এটা করা সম্ভব হলে বিশ্বব্যাপী শতকোটি মানুষকে ডায়াবেটিসহ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণসহ বিভিন্ন কারণে নিত্য নুতন ভাইরাস ও বহু দিনের পুরাতন প্রাণঘাতী ভাইরাস সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। তাই স্বাস্থ্যসেবায় গবেষণার বিকল্প নাই। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাট উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে তাদের এই উৎসাহের প্রধান কারণ হচ্ছে গবেষণা কার্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহায়তা, প্রয়োজনীয় নির্দেশনাদান ও উৎসাহব্যঞ্জক ভাষণ প্রদান অব্যাহত রাখা। গবেষণায় বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি পেলে এক্ষেত্রে গবেষণার মানন্নোয়নে আরো অগ্রগতি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে গড়ে ২০ লক্ষাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। প্রতি বছর মেজর ও মাইনর অপারেশনসহ কমপক্ষে ৫০ হাজার রোগীর অপারেশন করা হয়। বহির্বিভাগে প্রতিদিন নতুন পুরাতন মিলিয়ে ৮০০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। বৈকালিক স্পেশালাইজড আউটডোরে প্রতিদিন ১০০০ রোগী সেবা গ্রহন করছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা প্রায় ২০০০টি, এরমধ্যে অর্ধেকই গরীব রোগীদের জন্য বিনা ভাড়ার বিছানা। এসকল শয্যাতে ভর্তিকৃত রোগীদের ২৪ ঘণ্টাই সেবা দেয়া হচ্ছে। এখানে রয়েছে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা। রেডিওথেরাপি, পেট স্ক্যান, এমআরআই, সিটিস্ক্যান ও টিস্যু বায়োপসি’র মতো ব্যয়বহুল পরীক্ষাও এখানে তুলনামূলকভাবে কম খরচে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ মেশিনের মাধ্যমে করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালসহ ৫ সহ¯্রাধিক জনবল নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। গণমানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মহাজোট সরকার গঠনের পর থেকেই অর্জিত হয়েছে এ অসামান্য সাফল্য।

সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ষোষিত ‘রূপকল্প ২০৪১,’ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর সাথে সাযুজ্য রেখে এই হাসপাতালের সকল কার্যক্রম ডিজিলাইজেশন করা প্রয়োজন। ফলে সেবা দানকারী ও সেবা গ্রহণকারী হবে স্মার্ট সিটিজেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হবে স্মার্ট গর্ভনেন্স এবং পর্যাক্রমে এ উদ্যোগ দেশ ও সমাজের স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট সোসাইটি গঠনে ভূমিকা রাখবে।পরিশেষে বলতে চাই যে, দেশের মেডিক্যাল শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান চির স্মরণীয় ও অনস্বীকার্য। বর্তমান বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে ও উন্নত বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে সকল বাধা পেরিয়ে দেশকে অগ্রগতি ও উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে চিকিৎসা শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোঃ নূরুল হক এর নেতৃত্বে এখানে কর্মরত সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো এই হোক ২৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অঙ্গীকার।
Sarakhon Report 



















