শীত এলেই রাতের আকাশ যেন আরও গভীর, আরও স্বচ্ছ। ডিসেম্বর, জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিতে খালি চোখেই বোঝা যায়, তারা গুলো অন্য সময়ের তুলনায় বেশি উজ্জ্বল ও স্পষ্ট। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এর পেছনে রয়েছে পৃথিবীর অবস্থান আর আমাদের ছায়াপথের গঠনগত এক বিশেষ কারণ।
পৃথিবীর অবস্থান আর ছায়াপথের দিক
জেদ্দা জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, শীতের রাতে পৃথিবীর অন্ধকার দিকটি ছায়াপথের সেই অংশের দিকে মুখ করে থাকে, যেখানে সূর্য অবস্থান করছে। এই অংশটি ছায়াপথের বাইরের প্রান্তের দিকে হওয়ায় সেখানে তারার সংখ্যা তুলনামূলক কম। ফলে পটভূমির আলো কম থাকে, আকাশ হয় আরও গাঢ় ও পরিষ্কার। এই অন্ধকার পটভূমিতে একেকটি তারা আলাদা করে উজ্জ্বল ভাবে চোখে পড়ে।
গ্রীষ্মের আকাশ কেন ঝাপসা লাগে
এর ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যায় গ্রীষ্মকালে। জুন, জুলাই আর আগস্টে রাতের আকাশ মুখ করে থাকে ছায়াপথের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের দিকে। এই অংশে রয়েছে অসংখ্য তারা, যাদের সম্মিলিত আলো আকাশকে বেশি উজ্জ্বল করে তোলে। অতিরিক্ত আলো ছড়িয়ে পড়ায় আকাশে এক ধরনের ঝাপসা ভাব তৈরি হয়, ফলে আলাদা করে কোনো তারা ততটা স্পষ্ট লাগে না।
ছায়াপথের বিস্তৃতি ও সূর্যের অবস্থান
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের ছায়াপথের ব্যাস প্রায় এক লাখ আলোকবর্ষ। এর কেন্দ্র পৃথিবী থেকে প্রায় পঁচিশ হাজার থেকে আটাশ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তবে ঘন ধূলিকণার কারণে এই কেন্দ্রটি দৃশ্যমান আলোয় সরাসরি দেখা যায় না। সূর্য ও আমাদের সৌরজগৎ রয়েছে ছায়াপথের একটি ছোট বাহুতে, যাকে বলা হয় ওরিয়ন বাহু। এই বাহুর প্রস্থ প্রায় সাড়ে তিন হাজার আলোকবর্ষ এবং দৈর্ঘ্য প্রায় দশ হাজার আলোকবর্ষ।
শীতের আকাশে মিথুন রাশির আধিপত্য
শীতকালের আকাশে মিথুন রাশি বিশেষভাবে চোখে পড়ে। এই রাশির উজ্জ্বল তারাগুলোও সৌরজগতের মতো একই বাহুর অংশ। ফলে শীতের রাতের আকাশে তারাদের ঝলমলে উপস্থিতি আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















