সময়ের একমুখী প্রবাহ কেন থামে না
সময় কেন কেবল সামনে এগোয় এবং কেন অতীতে ফেরা অসম্ভব—এই শতাব্দীপ্রাচীন প্রশ্নের নতুন ব্যাখ্যা হাজির করেছেন চীনের একদল গবেষক। তাঁদের মতে, সময়ের পেছনে ফেরার ধারণা কেবল কল্পবিজ্ঞানের গল্পেই মানায়, বাস্তব পদার্থবিজ্ঞানে নয়।
হাইনান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ান্টাম ব্যাখ্যা
দক্ষিণ চীনের হাইনান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ চাই ছিংইউ ও তাঁর গবেষক দল কোয়ান্টাম স্তরে সময়ের দিকনির্দেশনা নিয়ে একটি নতুন তত্ত্ব প্রস্তাব করেছেন। এই ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কেন ভাঙা ডিম আবার জোড়া লাগানো যায় না বা মানুষ কেন বয়সে তরুণ হতে পারে না—যদিও পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্রগুলো কাগজে-কলমে সময়কে উল্টো দিকে চলার অনুমতি দেয়।

পর্যবেক্ষণনির্ভর নয়, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ফল
আগের অনেক তত্ত্বের সঙ্গে এই গবেষণার বড় পার্থক্য হলো, এখানে কোনো পর্যবেক্ষণ, মাপজোক বা বাইরের হস্তক্ষেপের ওপর নির্ভর করা হয়নি। গবেষকদের দাবি, সময়ের দিকনির্দেশনা নিজেই কোয়ান্টাম কণাগুলোর পারস্পরিক সংযোগ থেকে স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয়। অর্থাৎ, সময়ের তীর বা সময়ের একমুখী চলন প্রকৃতির অতি ক্ষুদ্র স্তরেই গেঁথে আছে।
কোয়ান্টাম সংযোগই সময়ের তীর
গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কোয়ান্টাম অংশগুলো যখন একে অন্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তখন সেই সংযোগ থেকেই সময়ের সামনে এগোনোর প্রবণতা তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াই ব্যাখ্যা করে কেন বাস্তব জীবনে সময় উল্টো দিকে ঘোরে না, যতই তাত্ত্বিকভাবে তা সম্ভব মনে হোক।

পুরোনো তত্ত্বের সঙ্গে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
উনিশ শতকের শেষ দিকে অস্ট্রীয় পদার্থবিদ লুডভিগ বোল্টসম্যান বলেছিলেন, বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যবস্থা সাধারণত শৃঙ্খলা থেকে বিশৃঙ্খলার দিকে যায়। এই বিশৃঙ্খলার প্রবণতাকেই বলা হয় এনট্রপি, যা সময়ের সামনের দিকে চলার ব্যাখ্যা দেয়। চীনা গবেষকদের নতুন তত্ত্ব সেই ধারণার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আরও গভীর কোয়ান্টাম ব্যাখ্যা যুক্ত করেছে।
গবেষণার গুরুত্ব
আন্তর্জাতিক জার্নাল অ্যানালস অব ফিজিকসে প্রকাশিত এই গবেষণা সময় নিয়ে মানুষের চিরন্তন কৌতূহলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অতীতে ফেরার স্বপ্ন হয়তো সিনেমায় রয়ে যাবে, কিন্তু সময় কেন বাস্তবে একদিকেই এগোয়—তার ব্যাখ্যায় এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















