চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত খনি কোম্পানি জিয়াংসি কপার ১২০ কোটি ডলারের চুক্তিতে ইকুয়েডরের একটি গুরুত্বপূর্ণ তামা প্রকল্প অধিগ্রহণের পথে এগিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি লন্ডনে তালিকাভুক্ত খনি কোম্পানি সলগোল্ডের সব শেয়ার কিনতে সম্মত হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে।
প্রস্তাব বদল ও শেয়ারহোল্ডারদের সমর্থন
গত মাসে দেওয়া আগের প্রস্তাব সলগোল্ডের পরিচালনা পর্ষদ প্রত্যাখ্যান করলেও পরে চীনা কোম্পানিটি দর বাড়ালে অবস্থান বদলায় বোর্ড। পাশাপাশি বড় শেয়ারহোল্ডার বিএইচপি বিলিটন ও নিউমন্টও অধিগ্রহণের পক্ষে সম্মতি দেয়। জিয়াংসি কপার এরই মধ্যে সলগোল্ডের ১২ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার মালিকানায় রেখেছিল, আর বিএইচপি ও নিউমন্টের প্রত্যেকের হাতে ছিল ১০ দশমিক ৩ শতাংশ করে শেয়ার।

চূড়ান্ত দর ও মূল্যায়ন
চূড়ান্ত প্রস্তাবে সলগোল্ডের প্রতি শেয়ারের দাম ধরা হয়েছে ২৮ পেন্স নগদ। এতে কোম্পানিটির মোট মূল্য দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৮৬ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড বা ১২০ কোটি ডলার। এটি ১৯ নভেম্বরের দর থেকে প্রায় ৪৩ শতাংশ বেশি। আগের প্রস্তাবে শেয়ারপ্রতি ২৬ পেন্স দেওয়া হয়েছিল, যা ২৮ নভেম্বর সর্বসম্মতভাবে নাকচ করেছিল সলগোল্ডের বোর্ড। বড়দিনের আগের দিন লন্ডন বাজারে সলগোল্ডের শেয়ার বন্ধ হয়েছিল ২৫ দশমিক ৬৫ পেন্সে।
চুক্তি সম্পন্নের সময় ও প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ
সব শর্ত পূরণ হলে আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার কথা। তখন ইকুয়েডরের ক্যাসকাবেল প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ নেবে জিয়াংসি কপার। এটি দেশটির অন্যতম বড় তামা, সোনা ও রুপার খনি প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত।
কোম্পানি কর্তাদের বক্তব্য
জিয়াংসি কপারের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেনারেল ম্যানেজার ঝৌ শাওবিং বলেন, সলগোল্ডের বোর্ড ও বড় শেয়ারহোল্ডারদের সমর্থনে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট। ক্যাসকাবেল প্রকল্পের সম্ভাবনা নিয়েও তিনি আশাবাদী।

সলগোল্ডের প্রধান নির্বাহী ড্যান ভুজসিস বলেন, অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা ও শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বোর্ড মনে করেছে এই প্রস্তাব গ্রহণ করাই কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের সর্বোত্তম স্বার্থে।
স্বাধীন উন্নয়ন বনাম নিশ্চিত বাস্তবায়ন
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দেওয়া নথিতে সলগোল্ড জানায়, তারা ক্যাসকাবেল প্রকল্প নিজস্ব কৌশলে উন্নয়নের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকলেও জিয়াংসির প্রস্তাব গ্রহণ প্রকল্প বাস্তবায়নে নিশ্চিততা এনে দেবে। এককভাবে ভবিষ্যৎ মূল্য তৈরির অনিশ্চয়তার সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত তুলনা করে দেখা হয়েছে বলে বোর্ড উল্লেখ করেছে।
ক্যাসকাবেল প্রকল্পের অবস্থান ও সম্ভাবনা
ক্যাসকাবেল প্রকল্পটি ইকুয়েডরের উত্তরের ইমবাবুরা প্রদেশে, কলম্বিয়া সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। ২০২৮ সালে উৎপাদন শুরু হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পটিতে দুটি বড় খনিজ ভাণ্ডার রয়েছে—আলপালা ও তান্দায়ামা-আমেরিকা। এগুলো অ্যান্ডিজ পর্বতমালার পোরফিরি বেল্টের অংশ, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় তামা সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।

উৎপাদন ও খনি জীবদ্দশা
সলগোল্ডের করা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রকল্পটির খনি জীবনকাল ধরা হয়েছে ২৮ বছর। বছরে গড়ে উৎপাদন হতে পারে ১ লাখ ২৩ হাজার টন তামা, ২ লাখ ৭৭ হাজার আউন্স সোনা ও ৭ লাখ ৯৪ হাজার আউন্স রুপা।
বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন
সিটিগ্রুপের হংকংভিত্তিক বিশ্লেষক জিমি ফেং বলেন, চুক্তিটি জিয়াংসি কপারের জন্য ইতিবাচক। উন্নয়ন পর্যায়ের প্রাথমিক বিনিয়োগ ব্যয় প্রায় ১৫৫ কোটি ডলার ধরা হলেও প্রস্তাবিত দাম আকর্ষণীয় বলে তিনি মনে করেন।
বিদেশি সম্পদ অধিগ্রহণে জিয়াংসির কৌশল
বিদেশে খনিজ সম্পদ কেনায় জিয়াংসি কপার দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। গত নভেম্বরের শেষ দিকে এক বিনিয়োগকারী আলোচনায় ঝৌ শাওবিং বলেন, সম্পদ অধিগ্রহণই কোম্পানির শীর্ষ কৌশল। জিয়াংসি প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিশ্বজুড়ে খনি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে।

অর্থায়ন ও আর্থিক সক্ষমতা
সলগোল্ড অধিগ্রহণে অভ্যন্তরীণ তহবিল ও ব্যাংক ঋণের সমন্বয়ে অর্থ জোগানো হবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। সেপ্টেম্বরের শেষে তাদের কাছে নগদ ও ব্যাংক আমানত মিলিয়ে ছিল প্রায় ৬১ হাজার ৬৫০ কোটি ইউয়ান।
বাজার প্রতিক্রিয়া
চুক্তির খবরে শেয়ারবাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জে জিয়াংসি কপারের শেয়ার সকালে কিছুটা কমলেও দিন শেষে আগের দিনের তুলনায় প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে বন্ধ হয়। হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ার তালিকাভুক্ত থাকলেও বড়দিনের কারণে সেদিন লেনদেন হয়নি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















