ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাইকে কেন্দ্র করে চালু হলো নতুন একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পের অংশ হিসেবে আগামী পাঁচ বছরে বিমানবন্দর খাতে এক লাখ কোটি রুপি বিনিয়োগের পরিকল্পনার সূচনা করল আদানি গ্রুপ। বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে নবি মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

নবি মুম্বাই বিমানবন্দরের প্রাথমিক কার্যক্রম
মূল শহরের পূর্বদিকে অবস্থিত নবি মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি শুরুতে একটি রানওয়ে ও সীমিত সংখ্যক এয়ারলাইনের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১২ ঘণ্টা বিমান চলাচল হচ্ছে। আদানি গ্রুপের বিমানবন্দর ইউনিটের পরিচালক জিত আদানি জানান, জানুয়ারির শেষ নাগাদ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৪টি বিমান ওঠানামার সক্ষমতা অর্জন করবে এই বিমানবন্দর।
প্রথম ধাপের বিনিয়োগ ও যাত্রী সক্ষমতা
বিমানবন্দরের প্রথম ধাপে প্রায় ১৯ হাজার ৬০০ কোটি রুপি বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। এই ধাপ সম্পূর্ণ হলে বছরে প্রায় দুই কোটি যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। জিত আদানির ভাষায়, রক্ষণশীল হিসাব অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রথম ধাপের সব কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে।
যাত্রীদের জন্য সাশ্রয়ী বাণিজ্যিক সুবিধা
বিমানবন্দরটি ব্যস্ত হয়ে উঠলে এর বাণিজ্যিক কেন্দ্র সব ধরনের আয়ের যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে পরিচালিত হবে। আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শহরের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি দামে খাবার বা পণ্য বিক্রির প্রচলিত ধারণা তারা অনুসরণ করতে চায় না।
দ্বিতীয় ধাপের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা
২০৩০ সালের মধ্যে বিমানবন্দরের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই ধাপে অন্তত ৩০ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করা হবে। তখন বার্ষিক যাত্রী ধারণক্ষমতা বেড়ে পাঁচ থেকে সাত কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতের বিমানবন্দর সম্প্রসারণ লক্ষ্য
ভারত সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশে কমপক্ষে ৩৫০টি বিমানবন্দর গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৬০টি বিমানবন্দর রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আসামের গুয়াহাটিতে আদানি গ্রুপ নির্মিত একটি নতুন টার্মিনাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বেসরকারি অংশীদারিত্ব ও আদানির আগ্রহ
চলতি বছর সরকার দেশজুড়ে ১১টি বিমানবন্দর বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। উদ্দেশ্য ছিল বিমানবন্দর খাতকে আধুনিকায়ন ও রাজস্ব বাড়ানো। আদানি গ্রুপ জানিয়েছে, এসব ইজারার সবগুলোতেই তারা দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী।
চ্যালেঞ্জের মধ্যেও নতুন সূচনা
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিমান চলাচল বাজার হিসেবে পরিচিত ভারতের জন্য বছরটি ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। জুনে লন্ডনগামী একটি যাত্রীবাহী বিমানের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ডিসেম্বরে জনবল সংকটের কারণে দেশের সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ সংস্থায় ব্যাপক ভোগান্তিও দেখা দেয়।
বৃহত্তর অবকাঠামো কৌশলে আদানি গ্রুপ
আদানির বিমানবন্দর বিনিয়োগ বৃহত্তর অবকাঠামো কৌশলের অংশ। প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক তথ্যকেন্দ্র ও পারমাণবিক জ্বালানির মতো খাতেও বিস্তারের পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি মুম্বাই শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এশিয়ার অন্যতম বড় বস্তি ধারাভি পুনর্গঠনের কাজেও যুক্ত হতে আগ্রহী আদানি গ্রুপ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















