চীনের বাইরে বিরল খনিজের বিকল্প সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভিয়েতনামে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান এলএস ইকো এনার্জি। রোবট, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগকে চীনের আধিপত্য মোকাবিলার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভিয়েতনামে নতুন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা
এলএস ইকো এনার্জি জানিয়েছে, তারা হো চি মিন সিটিতে একটি ধাতু প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে তুলবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন দক্ষিণ কোরীয় ওন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। এই কারখানা যুক্তরাষ্ট্রে নির্মাণাধীন তাদের চুম্বক উৎপাদন কারখানার জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করবে।

চীনের বাইরে সরবরাহ শৃঙ্খল গঠনের উদ্যোগ
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চীনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ নিয়ন্ত্রণ ভাঙার যে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা চলছে, তার অংশ হিসেবেই ভিয়েতনামে বিনিয়োগ বাড়ছে। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার একাধিক কোম্পানি ইতিমধ্যে দেশটির খনি খাতে প্রবেশ করেছে। আগে ধারণা করা হতো, বিরল খনিজ মজুদের দিক থেকে ভিয়েতনাম বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটি ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।
কোন কাজে ব্যবহৃত হবে এই খনিজ
এলএস ইকো এনার্জির কারখানায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন খনি কোম্পানি থেকে আনা বিরল খনিজের অক্সাইড পরিশোধন করা হবে। এসব উপাদান দিয়ে তৈরি হয় স্থায়ী চুম্বক, যা রোবটের ড্রাইভ মোটর, বায়ু টারবাইন ও বৈদ্যুতিক গাড়ির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার অন্য বিনিয়োগকারীরা

ভিয়েতনামের বিরল খনিজ বাজারে প্রবেশ করছে দক্ষিণ কোরিয়ার আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে ট্রাইডেন্ট, যারা যুক্তরাষ্ট্রের জোয়েটিকের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পোসকোও এই খাতে আগ্রহ দেখিয়েছে। ভিয়েতনামের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চলতি বছরে অন্তত দুইবার বৈঠক করেছে পোসকো। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ব্ল্যাকস্টোন মিনারেলস ও এএসএম ইতিমধ্যে ভিয়েতনামে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
চীনের ওপর নির্ভরতা নিয়ে উদ্বেগ
গত বছর এলএস ইকো এনার্জি ঘোষণা দিয়েছিল, তারা ভিয়েতনামে ধাতব সংকর ধাতুর কারখানা গড়ে তুলে চীননির্ভরতা কমানোর বাজারে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। বিশ্বের বিরল খনিজের বড় অংশ চীনের হাতে থাকায় এবং দেশটি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। ফলে চীনের ওপর নির্ভরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক শিল্পখাত।

ভিয়েতনামের নিজস্ব চ্যালেঞ্জ ও নীতিনিয়ন্ত্রণ
তবে ভিয়েতনাম থেকেও স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করা সহজ নয়। চলতি মাসেই দেশটির সংসদ নিজস্ব রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করেছে। সংসদের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, খনি উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে একটি বন্ধ মূল্যশৃঙ্খল গড়ে তুলতে হবে, যাতে কাঁচামাল সরাসরি রপ্তানি না হয়ে যায়।
এলএস গ্রুপের উপস্থিতি ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
এলএস ইকো এনার্জির সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার এলএস কেবল অ্যান্ড সিস্টেম, যাদের ভিয়েতনামের ডং নাই প্রদেশে একটি কারখানা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী লি সাং হো জানিয়েছেন, কেবল ব্যবসার গণ্ডি ছাড়িয়ে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ খাতে বড় পরিসরে ব্যবসা সম্প্রসারণ করাই তাদের লক্ষ্য।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















