০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৮) রাশিয়া, চীন ও ইরানের মাঝের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন তারেক রহমান নরওয়ের বড়দিনে বিতর্কিত খাবার লুটেফিস্কের প্রত্যাবর্তন, ঐতিহ্যেই ফিরছে স্বাদ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৫) নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব? যে রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি, সেই চালকের আদালতে জবানবন্দি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

রাশিয়া, চীন ও ইরানের মাঝের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বৃহত্তর মধ্য এশিয়া অঞ্চলে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে। রাশিয়া, চীন ও ইরানের মাঝখানে অবস্থিত এই অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্র। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে একটি শান্তি ঘোষণার মধ্যস্থতা করেছে, যার মাধ্যমে প্রায় চার দশকের বৈরিতার অবসান ঘটেছে। ওই চুক্তির অংশ হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো পরিচালনা করবে। পাশাপাশি সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আতিথ্য দেন এবং কাজাখস্তানকে আব্রাহাম চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেন।

এই সব পদক্ষেপ একত্রে বৃহত্তর মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। একই সঙ্গে এই প্রত্যাবর্তনকে সহজ করেছে অঞ্চলে তুরস্কের প্রভাবের সাম্প্রতিক উত্থান, যা দীর্ঘ সময় পর রাশিয়া ও চীনের আধিপত্যের একটি কার্যকর পাল্টা ভারসাম্য তৈরি করেছে। ইরানের দুর্বল হয়ে পড়াও ওয়াশিংটনের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।

তবে রাশিয়া ও ইরান সহজে সরে দাঁড়াবে না। মস্কো ও তেহরানের কাছে অঞ্চলটির দেশগুলোর জন্য দেওয়ার মতো খুব বেশি কিছু না থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্র যে কাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে তা ভাঙচুর করার মতো উপকরণ তাদের হাতে এখনো রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ সফল করতে হলে ওয়াশিংটনকে রাশিয়া ও ইরানের হুমকি মোকাবিলা করতে হবে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়বে যদি মধ্য এশিয়ার দেশগুলো ও আজারবাইজানকে আলাদা আলাদা নীতি নয়, বরং একটি জোট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে মধ্য এশিয়া, কাস্পিয়ান সাগর ও দক্ষিণ ককেশাস নিয়ে গঠিত এই ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আবার দৃশ্যমান হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকে এই দেশগুলোর স্বাধীনতা সুসংহত করতে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু গত দুই দশকে ওয়াশিংটন কার্যত এই অঞ্চলকে অবহেলা করেছে। রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক ও চীনের মতো শক্তির মিলনস্থল হওয়া সত্ত্বেও এবং বিপুল জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার থাকার পরও এই অবহেলা বিস্ময়কর ছিল।

এই অবহেলার অবসান ঘটিয়ে সাম্প্রতিক চুক্তিগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুট পরিচালনা করবে, যার নাম আন্তর্জাতিক শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ট্রাম্প রুট। এর মাধ্যমে অঞ্চলটির নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হবে। ২০২৬ সালে এই রুট চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে সড়ক ও রেলপথ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই রেলপথ কৃষ্ণসাগর থেকে চীনের সীমান্ত পর্যন্ত পণ্য পরিবহন বাড়াতে সহায়ক হবে। একই সময়ে নতুন জ্বালানি রুট চালুর মাধ্যমে জ্বালানি বাণিজ্যও বাড়বে।

বিভিন্ন সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রত্যাবর্তন সহজ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তুর্কি রাষ্ট্রগুলোর একটি জোটের উত্থান, যা দক্ষিণ ককেশাসে তুরস্ক ও আজারবাইজানকে এবং মধ্য এশিয়ায় কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানকে একত্র করেছে। সম্প্রতি মধ্য এশিয়ার দেশগুলো আজারবাইজানকে আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা কাঠামোর পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার করেছে।

এই জোট প্রথমবারের মতো অঞ্চলে রাশিয়া ও চীনের বিপরীতে একটি কার্যকর পাল্টা শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে মস্কোর অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপের চেষ্টা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে রাখার উদ্যোগ, কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বেইজিংয়ের মুখোমুখি না হয়েও চীনের প্রভাব বিস্তার সীমিত করতে পারছে।

ট্রাম্প প্রশাসন শুরুতেই বুঝেছিল যে মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এখন বৃহত্তর মধ্য এশিয়াতেও আঙ্কারার ভূমিকা স্পষ্টভাবে বাড়ছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের স্বার্থের মিল থাকায়, ওয়াশিংটন তুরস্কের এই উত্থানকে কাজে লাগাতে পারছে।

ইরানের শক্তি হ্রাসও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনকে সহজ করেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের পর আর্মেনিয়া, যা দীর্ঘদিন ইরানের ওপর নির্ভরশীল ছিল, বুঝতে পারে যে নিরাপত্তার জন্য তেহরানের ওপর আর ভরসা করা যাবে না। যুদ্ধের পর আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান সিদ্ধান্ত নেন যে ইরানের ওপর নির্ভরশীল থাকার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করে আজারবাইজান ও তুরস্কের সঙ্গে শান্তির পথে এগোনোই শ্রেয়।

বৃহত্তর মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো এমন একটি বৃহত্তর চিত্রের অংশ, যেখানে তুর্কি ও মার্কিন প্রভাব বাড়ছে এবং রাশিয়া ও ইরানের প্রভাব কমছে। তবে তেহরান ও মস্কো এত সহজে হার মানবে না। অঞ্চলটি তাদের সীমান্তের কাছেই অবস্থিত, ফলে তারা এই পরিবর্তন ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতেই পারে।

এক সময় জর্জিয়া ছিল এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। কিন্তু মস্কো জর্জিয়ার ক্ষমতাসীন অলিগার্ক বিদজিনা ইভানিশভিলিকে ব্যবহার করে দেশটিকে পশ্চিমা প্রভাব থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।

আর্মেনিয়ায় এখনো রাশিয়ার দুটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং জ্বালানি খাতসহ প্রায় সব কৌশলগত অবকাঠামোর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ আছে। মস্কো ইতিমধ্যে সামভেল কারাপেতিয়ান নামের এক অলিগার্ককে পাঠিয়ে আর্মেনিয়ার যুক্তরাষ্ট্রপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে এবং বিশেষ করে আর্মেনীয় চার্চের ভেতরে রুশপন্থী শক্তিকে উৎসাহ দিচ্ছে।

আজারবাইজানের কিয়েভে অবস্থিত দূতাবাসে রাশিয়ার ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও কাকতালীয় ছিল না বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি বাকুকে ভয় দেখানোর একটি প্রচেষ্টা। ইরান বারবার আজারবাইজানকে হুমকি দিয়েছে এবং ট্রাম্প রুটের বিরোধিতা ঘোষণা করেছে। রাশিয়া ও ইরান প্রায় সব আঞ্চলিক দেশেই এমন নেটওয়ার্ক বজায় রেখেছে, যা সক্রিয় করে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা সম্ভব।

বৃহত্তর মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্যের জন্য রাশিয়া ও ইরানের হুমকি প্রতিহত করতে ধারাবাহিক মনোযোগ প্রয়োজন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে একটি গোষ্ঠী হিসেবে কাছে টানার উদ্যোগ আশাব্যঞ্জক। একসঙ্গে থাকলে এই দেশগুলো রাশিয়া ও ইরানের চাপের বিরুদ্ধে বেশি আত্মবিশ্বাসী হতে পারে।

এই উদ্যোগের আওতায় মধ্য এশিয়ার পাশাপাশি আজারবাইজানকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রায়ই ওয়াশিংটন ভৌগোলিক ও  ডেমোক্রেটিক  বিভাজনের কারণে আলাদা নীতি অনুসরণ করে, যা কার্যকর নয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিত ইরানের জন্য স্পষ্ট লাল রেখা নির্ধারণ করা। আন্তর্জাতিক শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ট্রাম্প রুটের সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনে তেহরান যেন বাধা দিতে না পারে, তা নিশ্চিত করা জরুরি। এই করিডোর চালু হলে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো স্থলবেষ্টিত অবস্থার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। এটি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এবং একই সঙ্গে রাশিয়া, চীন ও ইরানের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

এই অঞ্চলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী পদক্ষেপ হতে পারে একটি রাষ্ট্রপতি সফর। মধ্য এশিয়া এখনো বিশ্বের একমাত্র বড় অঞ্চল, যেখানে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট যাননি। সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সম্মেলনে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ঐতিহাসিক সমরকন্দ শহর সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ট্রাম্প যদি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন, তবে এটি স্পষ্ট বার্তা দেবে যে যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তর মধ্য এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদে থাকতে প্রস্তুত।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৮)

রাশিয়া, চীন ও ইরানের মাঝের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন

০৮:০০:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বৃহত্তর মধ্য এশিয়া অঞ্চলে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে। রাশিয়া, চীন ও ইরানের মাঝখানে অবস্থিত এই অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্র। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে একটি শান্তি ঘোষণার মধ্যস্থতা করেছে, যার মাধ্যমে প্রায় চার দশকের বৈরিতার অবসান ঘটেছে। ওই চুক্তির অংশ হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো পরিচালনা করবে। পাশাপাশি সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আতিথ্য দেন এবং কাজাখস্তানকে আব্রাহাম চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেন।

এই সব পদক্ষেপ একত্রে বৃহত্তর মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। একই সঙ্গে এই প্রত্যাবর্তনকে সহজ করেছে অঞ্চলে তুরস্কের প্রভাবের সাম্প্রতিক উত্থান, যা দীর্ঘ সময় পর রাশিয়া ও চীনের আধিপত্যের একটি কার্যকর পাল্টা ভারসাম্য তৈরি করেছে। ইরানের দুর্বল হয়ে পড়াও ওয়াশিংটনের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।

তবে রাশিয়া ও ইরান সহজে সরে দাঁড়াবে না। মস্কো ও তেহরানের কাছে অঞ্চলটির দেশগুলোর জন্য দেওয়ার মতো খুব বেশি কিছু না থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্র যে কাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে তা ভাঙচুর করার মতো উপকরণ তাদের হাতে এখনো রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ সফল করতে হলে ওয়াশিংটনকে রাশিয়া ও ইরানের হুমকি মোকাবিলা করতে হবে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়বে যদি মধ্য এশিয়ার দেশগুলো ও আজারবাইজানকে আলাদা আলাদা নীতি নয়, বরং একটি জোট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে মধ্য এশিয়া, কাস্পিয়ান সাগর ও দক্ষিণ ককেশাস নিয়ে গঠিত এই ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আবার দৃশ্যমান হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকে এই দেশগুলোর স্বাধীনতা সুসংহত করতে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু গত দুই দশকে ওয়াশিংটন কার্যত এই অঞ্চলকে অবহেলা করেছে। রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক ও চীনের মতো শক্তির মিলনস্থল হওয়া সত্ত্বেও এবং বিপুল জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার থাকার পরও এই অবহেলা বিস্ময়কর ছিল।

এই অবহেলার অবসান ঘটিয়ে সাম্প্রতিক চুক্তিগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুট পরিচালনা করবে, যার নাম আন্তর্জাতিক শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ট্রাম্প রুট। এর মাধ্যমে অঞ্চলটির নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হবে। ২০২৬ সালে এই রুট চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে সড়ক ও রেলপথ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই রেলপথ কৃষ্ণসাগর থেকে চীনের সীমান্ত পর্যন্ত পণ্য পরিবহন বাড়াতে সহায়ক হবে। একই সময়ে নতুন জ্বালানি রুট চালুর মাধ্যমে জ্বালানি বাণিজ্যও বাড়বে।

বিভিন্ন সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রত্যাবর্তন সহজ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তুর্কি রাষ্ট্রগুলোর একটি জোটের উত্থান, যা দক্ষিণ ককেশাসে তুরস্ক ও আজারবাইজানকে এবং মধ্য এশিয়ায় কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানকে একত্র করেছে। সম্প্রতি মধ্য এশিয়ার দেশগুলো আজারবাইজানকে আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা কাঠামোর পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার করেছে।

এই জোট প্রথমবারের মতো অঞ্চলে রাশিয়া ও চীনের বিপরীতে একটি কার্যকর পাল্টা শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে মস্কোর অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপের চেষ্টা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে রাখার উদ্যোগ, কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বেইজিংয়ের মুখোমুখি না হয়েও চীনের প্রভাব বিস্তার সীমিত করতে পারছে।

ট্রাম্প প্রশাসন শুরুতেই বুঝেছিল যে মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এখন বৃহত্তর মধ্য এশিয়াতেও আঙ্কারার ভূমিকা স্পষ্টভাবে বাড়ছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের স্বার্থের মিল থাকায়, ওয়াশিংটন তুরস্কের এই উত্থানকে কাজে লাগাতে পারছে।

ইরানের শক্তি হ্রাসও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনকে সহজ করেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের পর আর্মেনিয়া, যা দীর্ঘদিন ইরানের ওপর নির্ভরশীল ছিল, বুঝতে পারে যে নিরাপত্তার জন্য তেহরানের ওপর আর ভরসা করা যাবে না। যুদ্ধের পর আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান সিদ্ধান্ত নেন যে ইরানের ওপর নির্ভরশীল থাকার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করে আজারবাইজান ও তুরস্কের সঙ্গে শান্তির পথে এগোনোই শ্রেয়।

বৃহত্তর মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো এমন একটি বৃহত্তর চিত্রের অংশ, যেখানে তুর্কি ও মার্কিন প্রভাব বাড়ছে এবং রাশিয়া ও ইরানের প্রভাব কমছে। তবে তেহরান ও মস্কো এত সহজে হার মানবে না। অঞ্চলটি তাদের সীমান্তের কাছেই অবস্থিত, ফলে তারা এই পরিবর্তন ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতেই পারে।

এক সময় জর্জিয়া ছিল এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। কিন্তু মস্কো জর্জিয়ার ক্ষমতাসীন অলিগার্ক বিদজিনা ইভানিশভিলিকে ব্যবহার করে দেশটিকে পশ্চিমা প্রভাব থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।

আর্মেনিয়ায় এখনো রাশিয়ার দুটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং জ্বালানি খাতসহ প্রায় সব কৌশলগত অবকাঠামোর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ আছে। মস্কো ইতিমধ্যে সামভেল কারাপেতিয়ান নামের এক অলিগার্ককে পাঠিয়ে আর্মেনিয়ার যুক্তরাষ্ট্রপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে এবং বিশেষ করে আর্মেনীয় চার্চের ভেতরে রুশপন্থী শক্তিকে উৎসাহ দিচ্ছে।

আজারবাইজানের কিয়েভে অবস্থিত দূতাবাসে রাশিয়ার ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও কাকতালীয় ছিল না বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি বাকুকে ভয় দেখানোর একটি প্রচেষ্টা। ইরান বারবার আজারবাইজানকে হুমকি দিয়েছে এবং ট্রাম্প রুটের বিরোধিতা ঘোষণা করেছে। রাশিয়া ও ইরান প্রায় সব আঞ্চলিক দেশেই এমন নেটওয়ার্ক বজায় রেখেছে, যা সক্রিয় করে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা সম্ভব।

বৃহত্তর মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্যের জন্য রাশিয়া ও ইরানের হুমকি প্রতিহত করতে ধারাবাহিক মনোযোগ প্রয়োজন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে একটি গোষ্ঠী হিসেবে কাছে টানার উদ্যোগ আশাব্যঞ্জক। একসঙ্গে থাকলে এই দেশগুলো রাশিয়া ও ইরানের চাপের বিরুদ্ধে বেশি আত্মবিশ্বাসী হতে পারে।

এই উদ্যোগের আওতায় মধ্য এশিয়ার পাশাপাশি আজারবাইজানকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রায়ই ওয়াশিংটন ভৌগোলিক ও  ডেমোক্রেটিক  বিভাজনের কারণে আলাদা নীতি অনুসরণ করে, যা কার্যকর নয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিত ইরানের জন্য স্পষ্ট লাল রেখা নির্ধারণ করা। আন্তর্জাতিক শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ট্রাম্প রুটের সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনে তেহরান যেন বাধা দিতে না পারে, তা নিশ্চিত করা জরুরি। এই করিডোর চালু হলে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো স্থলবেষ্টিত অবস্থার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। এটি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এবং একই সঙ্গে রাশিয়া, চীন ও ইরানের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

এই অঞ্চলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী পদক্ষেপ হতে পারে একটি রাষ্ট্রপতি সফর। মধ্য এশিয়া এখনো বিশ্বের একমাত্র বড় অঞ্চল, যেখানে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট যাননি। সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সম্মেলনে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ঐতিহাসিক সমরকন্দ শহর সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ট্রাম্প যদি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন, তবে এটি স্পষ্ট বার্তা দেবে যে যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তর মধ্য এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদে থাকতে প্রস্তুত।