মেগা প্রকল্পে বড় অর্থপ্রবাহ
তুরস্ক জানিয়েছে, দেশটির আক্কুয়ু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে রাশিয়া নতুন করে ৯ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন দিয়েছে। ভূমধ্যসাগর উপকূলে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পকে তুরস্কের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে দেখা হয়। ফলে অর্থায়নের এই ঘোষণা শুধু নির্মাণ অগ্রগতির প্রশ্ন নয়; এটি তুরস্কের দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নীতি এবং রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের গভীরতাও তুলে ধরে।
পারমাণবিক প্রকল্পের বড় বৈশিষ্ট্য হলো—এগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং কঠোর নিয়ন্ত্রক কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হয়। কাজ থেমে গেলে বা বিলম্ব হলে ব্যয় দ্রুত বাড়ে। তাই নতুন অর্থায়ন প্রকল্পকে গতিশীল রাখতে এবং বাজারকে বার্তা দিতে পারে যে তহবিল প্রবাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা কমছে। একই সঙ্গে এটি ঠিক করে দেয়—আক্কুয়ু তুরস্ক-রাশিয়া সম্পর্কের একটি কেন্দ্রীয় ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসেট’ হিসেবে থাকছে।

জ্বালানি নিরাপত্তা বনাম নির্ভরতার ঝুঁকি
তুরস্কের যুক্তি সাধারণত জ্বালানি নিরাপত্তা। পারমাণবিক বিদ্যুৎ ‘বেসলোড’ উৎপাদন দিতে পারে, অর্থাৎ দিন-রাত স্থিতিশীলভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ। গ্যাসের দাম ওঠানামা, আমদানির ঝুঁকি, কিংবা সরবরাহ বিঘ্ন—এসবের প্রভাব তুলনামূলক কম। তবে অন্যদিকে নির্ভরতার প্রশ্নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বড় অঙ্কের অর্থায়ন, প্রযুক্তিগত অংশগ্রহণ, সম্ভাব্য জ্বালানি জোগান ও দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ—যদি একক বিদেশি অংশীদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকে, তাহলে তা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ‘লেভারেজ’ তৈরি করতে পারে।
তুরস্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে রাশিয়ার সঙ্গেও বাস্তববাদী সহযোগিতা চালিয়েছে—বিশেষ করে জ্বালানি, পর্যটন ও বাণিজ্যে। আক্কুয়ু সেই ভারসাম্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণগুলোর একটি। ফলে নতুন অর্থায়নের খবরে নজর থাকবে—এই অর্থপ্রবাহ কোন কাঠামোতে এসেছে, পেমেন্ট চ্যানেল কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, এবং প্রকল্পের শাসনব্যবস্থায় (গভর্ন্যান্স) কার নিয়ন্ত্রণ কতটা।

পরবর্তী ধাপে কী গুরুত্বপূর্ণ
সামনের সময়ে কয়েকটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে। প্রথমত, নির্মাণ ও কমিশনিং টাইমলাইন—কবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে, ধাপে ধাপে কত ইউনিট যুক্ত হবে। দ্বিতীয়ত, গ্রিড ইন্টিগ্রেশন—পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থিতিশীল হলেও তুলনামূলকভাবে অনমনীয়, তাই গ্রিড আপগ্রেড, চাহিদা পূর্বাভাস এবং রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা দরকার। তৃতীয়ত, জননিরাপত্তা ও নজরদারি—ভূমিকম্প ঝুঁকি, জরুরি প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা, এবং নিয়ন্ত্রক স্বচ্ছতা নিয়ে স্থানীয় উদ্বেগ সময়ের সঙ্গে বাড়তে পারে।
যদি অর্থায়নের ফলে প্রকল্প গতি পায়, তুরস্ক এটিকে আমদানি-ঝুঁকি কমানো এবং বাড়তি বিদ্যুৎচাহিদা পূরণের অগ্রগতি হিসেবে তুলে ধরতে পারে। আর যদি বিলম্ব ও ব্যয়বৃদ্ধি চলতে থাকে, তাহলে এটি আবারও রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্র হতে পারে—বিশেষ করে ‘কৌশলগত অবকাঠামো’ কতটা একক বিদেশি অংশীদারের ওপর নির্ভরশীল হবে, সেই প্রশ্নে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















