পরবর্তী অর্থবছরের জন্য ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাব করেছে জাপান সরকার। একদিকে অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর চাপ, অন্যদিকে লাগামছাড়া ঋণ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ—এই দুইয়ের মাঝামাঝি অবস্থান থেকেই নতুন বাজেটের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে টোকিও। সরকারের লক্ষ্য, ব্যয় বাড়ালেও নতুন ঋণের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বাজারের আস্থা ধরে রাখা।
সারাক্ষণ ডেস্ক
অর্থনীতি চাঙা রাখতে রেকর্ড ব্যয়
সরকারি প্রস্তাব অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া অর্থবছরের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে একশ বাইশ ট্রিলিয়ন ইয়েনের বেশি, যা জাপানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই ব্যয়ের মাধ্যমে ভোগ বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা ও নীতিগত গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ জোরদার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সক্রিয় রাজস্ব নীতির মূল ভিত্তিই এই বাজেট, যা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সহায়ক হবে বলে সরকারের বিশ্বাস।
ঋণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান
বাজেট প্রস্তাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সংযম। সরকার জানিয়েছে, নতুন বন্ড ইস্যু সীমিত রাখা হবে এবং মোট বাজেটে ঋণের ওপর নির্ভরতার হার কমিয়ে আনা হয়েছে প্রায় চব্বিশ শতাংশে, যা প্রায় তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। অর্থমন্ত্রী সাতসুকি কাটায়ামা বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রাজস্ব শৃঙ্খলা—দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে এই বাজেট তৈরি করা হয়েছে।

বাজার ও বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া
সাম্প্রতিক সময়ে অতিরিক্ত রাজস্ব ব্যয় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বেড়েছিল। তবে নতুন বাজেটে ঋণ নিয়ন্ত্রণের বার্তা আসার পর দীর্ঘমেয়াদি সরকারি বন্ডের সুদের হার কিছুটা কমেছে। এতে ইয়েনের ওপর চাপও সাময়িকভাবে হালকা হয়েছে বলে বাজার বিশ্লেষকদের মত।
মুদ্রাস্ফীতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপ
টোকিও অঞ্চলে মূল মূল্যস্ফীতি এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার ওপরে রয়েছে। দুর্বল ইয়েন ও খাদ্যপণ্যের দামের চাপ মূল্যস্ফীতি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েছে, যা গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। গভর্নর কাজুও উএদা স্পষ্ট করেছেন, অর্থনৈতিক উন্নতি ও মজুরি বাড়লে সুদ আরও বাড়ানোর পথ খোলা রয়েছে।
প্রতিরক্ষা ব্যয় ও শিল্প উৎপাদনের চিত্র
নতুন বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, গাড়ি ও ব্যাটারি উৎপাদন কমে যাওয়ায় শিল্প উৎপাদনে ধাক্কা লেগেছে। এসব বিষয় অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশ্লেষকেরা।
সামগ্রিকভাবে, রেকর্ড ব্যয়ের এই বাজেট জাপানের অর্থনীতিকে স্বল্পমেয়াদে সহায়তা দিতে পারে। তবে ঋণ, মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রানীতির সমন্বয় কতটা সফল হয়, সেটির দিকেই এখন তাকিয়ে আছে বাজার।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















