দশকের পর দশক ধরে বিদেশে শিশু দত্তক দেওয়ার প্রথা বন্ধের পথে হাঁটতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে এই ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। একই সঙ্গে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অতীতের দত্তক প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সত্য উদঘাটন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে সিউলের ব্যর্থতা নিয়ে।
সরকারি ঘোষণার প্রেক্ষাপট
শুক্রবার রাজধানী সিউলের সরকারি কমপ্লেক্সে এক ব্রিফিংয়ে দেশটির স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী লি সিউরান জানান, শিশু কল্যাণ নীতি আরও শক্তিশালী করার অংশ হিসেবেই বিদেশে দত্তক দেয়ার প্রক্রিয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য, সর্বোচ্চ দুই হাজার উনত্রিশ সালের মধ্যে বিদেশে দত্তকের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা।
দশকের পুরনো অভিযোগ নতুন করে সামনে
ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর দক্ষিণ কোরিয়ার জবাব প্রকাশ করে, যেখানে দত্তকপ্রাপ্তদের অভিযোগ সমাধানে স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনার অভাবের কথা তুলে ধরা হয়। অভিযোগ রয়েছে, বহু শিশুকে ভুয়া নথি তৈরি করে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল এবং কেউ কেউ বিদেশে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সত্তর ও আশির দশকে এই প্রক্রিয়া চরম আকার ধারণ করে, যখন প্রতিবছর হাজার হাজার শিশুকে পশ্চিমা দেশগুলোতে পাঠানো হতো।

সংখ্যার ভাষায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দুই হাজার পঁচিশ সালে মাত্র চব্বিশটি বিদেশি দত্তক অনুমোদন পেয়েছে। দুই হাজার পাঁচ সালে যেখানে এই সংখ্যা ছিল প্রায় দুই হাজার, আর আশির দশকে প্রতিবছর গড়ে ছয় হাজারের বেশি শিশু বিদেশে দত্তক দেওয়া হতো। এই পরিসংখ্যানই দেখাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রথা কমতির দিকে।
ভবিষ্যতের দিকে নজর, অতীত প্রশ্নে নীরবতা
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে অতীতের অনিয়মের চেয়ে ভবিষ্যৎ সংস্কারের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। লি সিউরান বলেন, আগে দত্তক কার্যক্রম মূলত বেসরকারি সংস্থাগুলোর হাতে ছিল এবং তারা শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ দেখার চেষ্টা করলেও সেখানে ভিন্ন স্বার্থ কাজ করে থাকতে পারে। এখন পুরো ব্যবস্থাকে সরকারি কাঠামোর আওতায় আনা হচ্ছে, যাতে আন্তর্জাতিক দত্তক আদৌ প্রয়োজনীয় কি না, তা নতুন করে মূল্যায়ন করা যায়। একই সঙ্গে দেশীয় দত্তক বাড়ানোর উদ্যোগ জোরদার করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও চাপ
জাতিসংঘের বিশেষ তদন্তকারীরা মনে করছেন, শুধু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নয়, অতীতের অভিযোগগুলোর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করাও জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বাইরে থাকা এই বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্ব পাচ্ছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য একটি বড় নীতিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















