গাজা উপত্যকায় তীব্র জ্বালানি সংকটের কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসা সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘ যুদ্ধ ও অবরোধে বিপর্যস্ত এই ফিলিস্তিনি অঞ্চলে মানবিক সংকট প্রতিদিন আরও গভীর হচ্ছে।
নুসেইরাতের আল-আওদা হাসপাতালে সংকট
মধ্য গাজার নুসেইরাত এলাকায় অবস্থিত আল-আওদা হাসপাতাল জানিয়েছে, জেনারেটর চালানোর মতো পর্যাপ্ত জ্বালানি না থাকায় বেশিরভাগ বিভাগে সেবা স্থগিত করতে হয়েছে। সাধারণ সময়ে এই হাসপাতালে প্রায় ষাট জন রোগী ভর্তি থাকেন এবং প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন।
হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় যুক্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আহমেদ মেহান্না জানান, জ্বালানির ঘাটতির কারণে জরুরি বিভাগ, প্রসূতি ও শিশু বিভাগ ছাড়া বাকি সব সেবা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ন্যূনতম এই সেবাগুলো চালু রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একটি ছোট জেনারেটর ভাড়া নিতে হয়েছে।
জ্বালানি মজুত নিয়ে উদ্বেগ
স্বাভাবিক অবস্থায় আল-আওদা হাসপাতালে প্রতিদিন এক হাজার থেকে বারোশো লিটার ডিজেল প্রয়োজন হয়। বর্তমানে সেখানে মজুত রয়েছে মাত্র আটশ লিটার। মেহান্না সতর্ক করে বলেন, এই সংকট দীর্ঘ হলে হাসপাতালের মৌলিক সেবা দেওয়ার সক্ষমতা সরাসরি হুমকির মুখে পড়বে। তিনি দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ত্রাণ প্রবাহ ও যুদ্ধবিরতির বাস্তবতা
অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি থাকলেও গাজায় মানবিক পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ছয়শ ত্রাণবাহী ট্রাক ঢোকার কথা থাকলেও বাস্তবে প্রবেশ করছে একশ থেকে তিনশ ট্রাক। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবিক সংস্থার মতে, এসব ট্রাকের বড় অংশই বাণিজ্যিক পণ্য বহন করে, যা গাজার বাইশ লাখ মানুষের অধিকাংশের নাগালের বাইরে।
ফলে গাজার বাসিন্দাদের প্রতিদিনের জীবন টিকে আছে জাতিসংঘের সহায়তা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ত্রাণের ওপর নির্ভর করে।
স্বাস্থ্য খাত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত
যুদ্ধের সময় গাজার স্বাস্থ্যখাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। সংঘাত চলাকালে বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে হামলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থাগুলো বর্তমানে গাজার মোট হাসপাতাল শয্যার একটি বড় অংশ পরিচালনা করছে। গুরুতর অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য থাকা সব স্থিতিশীলতা কেন্দ্রই আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় চলছে।
পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলে সহিংসতার ছায়া
এদিকে গাজা যুদ্ধের প্রভাব পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলেও ছড়িয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক এক হামলায় ইসরায়েলের উত্তরে দুইজন নিহত হওয়ার পর প্রতিশোধমূলক অভিযানের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলাকারীর গ্রামের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে গাজা ও আশপাশের অঞ্চলজুড়ে নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসা সেবার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















