ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টির ত্রিশজন নেতা দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে চিঠি দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক জোট বা আসন সমঝোতায় না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, জামায়াতের বিতর্কিত অতীত ভূমিকা ও সাম্প্রতিক বিভাজনমূলক কর্মকাণ্ড এনসিপির আদর্শ ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
চিঠি প্রদান ও আপত্তির কারণ
শনিবার এই স্মারকলিপি নাহিদ ইসলামের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন এনসিপির যুগ্ম সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন। স্মারকলিপিতে জামায়াতের সঙ্গে সম্ভাব্য জোট বা আসন ভাগাভাগির আলোচনার প্রতি স্পষ্ট আপত্তি জানানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ
চিঠিতে নেতারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। তাঁদের অভিযোগ, দলটি স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং গণহত্যাসহ নানা অপরাধে সহযোগিতা করেছিল। এই ইতিহাস বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও এনসিপির মূল নীতির সঙ্গে মৌলিকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়।
সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগ
স্মারকলিপিতে জামায়াতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়েও উদ্বেগ জানানো হয়। এর মধ্যে অন্যান্য দলে হস্তক্ষেপ, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো, এনসিপি ও এর ছাত্র সংগঠনের নারী সদস্যদের লক্ষ্য করে আক্রমণ এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নেতাদের মতে, এসব কার্যক্রম গণতান্ত্রিক রীতি ও সামাজিক সম্প্রীতির জন্য হুমকি

এনসিপির নৈতিক দায়িত্ব ও অবস্থান
নেতারা স্মরণ করিয়ে দেন, একটি গণতান্ত্রিক ও জনঅভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা দল হিসেবে এনসিপির দায়িত্ব মানবাধিকার, ধর্মীয় সহনশীলতা, নারী-পুরুষ সমতা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা, নাগরিক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক নীতিকে সমুন্নত রাখা। জামায়াতের সঙ্গে জোট এই নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং বিশেষ করে তরুণ ও সংস্কারপন্থী সমর্থকদের মধ্যে দলের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করবে বলে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
স্বতন্ত্র নির্বাচনের অঙ্গীকারের প্রসঙ্গ
চিঠিতে নাহিদ ইসলাম ও প্রধান সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীর আগের ঘোষণার কথাও উল্লেখ করা হয়, যেখানে তাঁরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার এবং ‘ডেমোক্রেটিক রিফর্ম অ্যালায়েন্স’ গঠনের কথা বলেছিলেন। নেতাদের মতে, কয়েকটি আসনের জন্য জামায়াতের সঙ্গে হাত মেলানো হলে এই নীতিগত অঙ্গীকার ভঙ্গ হবে, সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হবে এবং আস্থা কমে যাবে।
দলীয় ঐক্য ও নৈতিক রাজনীতির আহ্বান
স্মারকলিপিতে নেতারা দলীয় নেতৃত্বকে কৌশলগত লাভের চেয়ে নৈতিক বিবেচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান। জামায়াতের সঙ্গে সহযোগিতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি দলীয় ভেতরে নীতিগত ভিন্নমতকে সম্মান করার ওপরও জোর দেওয়া হয়, যাতে শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং ঐক্য আরও শক্ত হয়।
স্বাক্ষরকারীদের পরিচয়
এই স্মারকলিপিতে এনসিপির কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের মোট ত্রিশজন নেতা স্বাক্ষর করেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যুগ্ম সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীনসহ কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব, দক্ষিণাঞ্চল সংগঠক মো. শওকত আলী, যুগ্ম প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ নওরোজ শাহ, যুগ্ম সম্পাদক এস এম সাইফ মোস্তাফিজ, ফরিদুল হক, যুগ্ম প্রধান সংগঠক ইমন সাইয়েদ, মো. ওয়াহিদ উজ জামান, সাদিয়া ফারজানা দিনা, নুসরাত তাবাসসুম, মো. ফরহাদ আলম ভূঁইয়া, জাওয়াদুল করিমসহ কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















