০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

ওকে গাইতে দাও (পর্ব-৩)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪
  • 18

মণীশ রায়

তুষ্টিদের স্কুলটার চারপাশ ঘিরে রেখেছে ঘন গাছ-গাছালির মালা ; বড়-মাঝারি-ছোট সবধরনের গাছগুলো যেন লম্বা বিনুনির মতো সবুজ বেষ্টনী হয়ে স্কুলটাকে আগলে রাখছে। পাঁচিলের বাইরে থেকেও তা চোখে পড়ে। এমন কী , স্কুলের পাশ দিয়ে কেউ  হেঁটে গেলেও আপনা-আপনি মন ভালো হয়ে যায় ; যেন বৃক্ষরাজির ছায়া কেবল ছাত্র-ছাত্রিদের বেলায় নয়, ক্ষণিকের পথিককেও শীতল আবেশে ভরিয়ে দিতে কার্পণ্য  করে না।

স্কুলে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তুষ্টির মনে হয়, শন-ছাওয়া মাটির একটি ভেজা নরোম ঘরে সে ঢুকে পড়েছে। বেশিরভাগ গাছগুলোই বয়স্ক ; স্কুলটির বয়সের সঙ্গে মিল-তাল রেখে তারাও বেড়ে উঠছে ; গায়ে হাজারটা পরগাছা। সারাক্ষণ শালিক, চড়–ই আর দোয়েলের কিচির-মিচির। প্রজাপতির দল ফরফর করতে থাকে কলাগাছের ঝোপে আর লাগোয়া ফুলবাগানে। শীতের সময় রঙিন সব গাঁদাফুল এমনভাবে দল মেলে ফুটে থাকে যে তুষ্টির লোভ হয় ফুলগুলোর কার্পেটে ঘুমিয়ে পড়ার। ওখানে ঘুমিয়ে পুরো স্কুলটাকে দেখার ওর বড় শখ। হাতের গীটারটা নিয়ে টুং-টুং করে গান গাইলে মনটা যেন আরও ফুরফুরে লাগত, ‘ওলো সই , ওলো সই । আমার ইচ্ছা করে তোদের  মতো মনের কথা কই। ’

কিন্তু স্কুলটা ঠিক ওর মনের কথা শুনতে পায় না। চারপাশে উঁচু-লম্বা পাঁচিল আর দমবন্ধ গেট দিয়ে মোড়ানো। ভেতরে সবাই গুরুগম্ভীর। কারও মুখে হাসির বিন্দুমাত্র  লেশ নেই। যে দারোয়ান ছোটো গেটটা খুলে দেয় তাকে মনে হয় মেষপালক। সবাইকে নিয়ম করে স্কুলে ঢুকানো আর বের করা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই তার। ওর হাতে একটা লাঠি। এ লাঠিটা সে কেন হাতে রেখেছে তা তুষ্টির জানা নেই।

বুয়াগুলোও হাসে না। চোখেমুখে সন্দেহ আর অবিশ্বাস ; কেউ বাগানের দিকে সামান্য হেঁটে গেলেও তাদের অবিশ্বাসী চোখ নিমেষে বদলে যায় । এমনভাবে তাকায় যেন তুষ্টি একটা ফুলচোর। অথচ সে কখনও  ফুল ছিঁড়ে না। সে শুধু আলতো করে ওদের স্পর্শ করে দেখতে চায়। একটুখানি আদর দিলেই ওরা  তুষ্টির সঙ্গে খুব জমে ওঠে। না ঝরা পর্যন্ত  সেই ফুলটি ওকে মনে রাখে। আসা-যাওয়ার পথে ঠিক একবার হলেও  সেটির উপর তুষ্টির চোখ পড়ে। ওর তীব্র কল্পনাশক্তি  চারপাশে  তখন প্রাণসঞ্চার ঘটায়। সে মুখে কথা বলতে না পারলেও বিড়বিড় করে ঠিকই মনের কথা বলে,‘ হ্যারে তিসা, তোর গায়ের রঙ্গের মতো আমার মায়েরও একটা শাড়ি আছে। সেটা মা বিশেষ অনুষ্ঠানে পরে বাপির সঙ্গে বেড়াতে  যায়। তোর গায়ের খয়েরি ডোরাকাটা চিহ্নের  দিকে তাকালে মায়ের খয়েরি কটকি পাড়ের হলুদ শাড়িটার কথা মনে পড়ে। পহেলা ফাল্গুন এলে এই শাড়িটা পরে মা বাইওে যায় বাপির সঙ্গে। তুই কি কোথাও বেড়াতে যাস ?’

খয়েরি-হলুদ মেশা গাঁদা ফুলগুলো বাতাসে নড়ে চড়ে উঠতেই ফিক করে হেসে ফেলে তুষ্টি। বলে,‘সরি। তোরা তো আবার হাঁটতে জানিস না। যাবি কিভাবে ?’

দুজন বুয়ার সতর্ক চোখ ওর উপর। একজন অন্যজনের দিকে তাকায়। তুষ্টির সঙ্গে চোখাচোখি হতেই চেঁচিয়ে ওঠে একজন ,‘ আফা, বাগানে কিতা করুইন ? বড় আফা জানলে শাস্তি দিব কৈলাম।’

পাশের বুয়া ফিসফিস করে বলে,‘ মাইয়াডা ফাগল। দেহছ না ক্যামন ফিসফিস কইরা কতা কয় ? মনে অয় জিন-ভূত আছে লগে।’

তুষ্টি শুনতে পেলেও কথা বাড়ায় না। সে শ্রেণিকক্ষে  গিয়ে বসে থাকে। ওদের ক্লাস দোতলায়।  ইচ্ছে করে জানালার পাশে বেঞ্চে গিয়ে বসে সে।  নারকেলের অনেকগুলো  চিরল পাতা জানালার শার্সিতে এসে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।  সে  ক্লাসের টীচার যা বলে তা শোনার চেয়ে সেদিকে তাকিয়ে আনমনা হতেই বেশি ভালবাসে। শীতের হাওয়া আর চিরল পাতার ভেতর কি কি সব কথা বিনিময় হয়  তা জানার বড় কৌতূহল জাগে ওর মনে। একটা সবুজ রঙের অস্থির  টিয়া কোত্থেকে এসে নারকেলের মখমলি ডালে বসে বাতাসের সাথে মিতালি পাতাতে চায়। কিন্তু সবুজ ভেলভেট কাপড়ের মতন মসৃণ আর পিছল পাতায় বসে সুবিধা করতে  না পারায় উড়ে চলে যায় অন্য গাছে। তখন তুষ্টির মন খারাপ হয়ে পড়ে। পাখিটাকে আরও একটু দেখার জন্য মন আকুলি-বিকুলি করে।

সহসা টীচার ধমক দিয়ে ওঠে‘, তুষ্টি, তুমি কোনদিকে তাকিয়ে আছো ?’

আমতা আমতা করতে থাকায় টীচার এসে ওর সামনে দাঁড়ায়। বলে,‘ বলতো আমি কী পড়াচ্ছিলাম?’

তুষ্টি মনে করতে পারে না পড়ার কথা। সে অসহায়ভাবে কড়ই গাছের মগডালে বিশ্রাম নেয়া একটি দাঁড়কাকের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সেরকম সাহসও নেই যে টীচারের চোখের দিকে সরাসরি তাকাবে।

‘এই মেয়ে, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল ক্লাসে কী পড়ানো হচ্ছিল। বলে? ’ ধমকে ওঠেন টীচার।

‘সরি। বলতে পারব না।’

‘এতটা ক্যালাস ক্যান তুমি ? কি ভাবছিলে ?’

এসময় ক্লাসের সহপাঠীরা খিলখিল করে হেসে ওঠে ওর অসহায় অবস্থা দেখে। লজ্জায় তুষ্টির মাথা মাটির সঙ্গে মিশে যেতে চায়। কিন্তু টীচার  নাছোড়বান্দা । কিছুতেই ওকে কাঠগড়া থেকে নামতে দিচ্ছেন না। বারবার সরি বলার পরও তার জেদ থামছে না।

‘এরকম হলে কি করে চলবে ? জেবুন্নিছা স্কুলের বদনাম হয়ে যাবে তোমার মতো  দুইচারটা ছাত্রি থাকলে। হাউ ফানি ? এতক্ষণ তাহলে তুমি কি ভাবছিলে ? বল, বল ?’

‘সরি।’

‘সরি বললে সব শেষ ? তুমি আমার ক্লাসে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে। এটাই তোমার উচিৎ শিক্ষা। ডু ইট ?’

তুষ্টির  গাল বেয়ে অপমানের উষ্ণ অশ্রæ গড়িয়ে পড়ে।  ওর দুটো হাত কান আঁকড়ে রয়েছে। বুকের ভেতরটা জ্বলে-পুড়ে খাক। তবু সে আড়চোখে  নারকেল আর কড়ইগাছটার দিকে তাকায়। একটা দুটো চড়ই কিংবা শালিক এসে বসছে সেখানে, তুষ্টির চোখ চলে যাচ্ছে সেদিকে।  নারকেল গাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে চতুর এক কাঠবিড়ালি । তুষ্টির চোখ দুটো চকচক করছে তা দেখার জন্যে ।

কিন্তু টীচার ওর দিকে যেভাবে তাকিয়ে রয়েছে, তাতে ঘাড় ঘুরানোর কোনো সুযোগই নেই।

অনিচ্ছাসত্তে¡ও  ওর  মনমরা চেহারায়  ভেসে থাকা অশ্রæসজল করুণ দৃষ্টি পুরনো মোজাইকের উপর দাসী-বাঁদীদের মতো নতজানু হয়ে পড়ে থাকে !

 

ওকে গাইতে দাও (পর্ব-৩)

০৮:০০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪

মণীশ রায়

তুষ্টিদের স্কুলটার চারপাশ ঘিরে রেখেছে ঘন গাছ-গাছালির মালা ; বড়-মাঝারি-ছোট সবধরনের গাছগুলো যেন লম্বা বিনুনির মতো সবুজ বেষ্টনী হয়ে স্কুলটাকে আগলে রাখছে। পাঁচিলের বাইরে থেকেও তা চোখে পড়ে। এমন কী , স্কুলের পাশ দিয়ে কেউ  হেঁটে গেলেও আপনা-আপনি মন ভালো হয়ে যায় ; যেন বৃক্ষরাজির ছায়া কেবল ছাত্র-ছাত্রিদের বেলায় নয়, ক্ষণিকের পথিককেও শীতল আবেশে ভরিয়ে দিতে কার্পণ্য  করে না।

স্কুলে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তুষ্টির মনে হয়, শন-ছাওয়া মাটির একটি ভেজা নরোম ঘরে সে ঢুকে পড়েছে। বেশিরভাগ গাছগুলোই বয়স্ক ; স্কুলটির বয়সের সঙ্গে মিল-তাল রেখে তারাও বেড়ে উঠছে ; গায়ে হাজারটা পরগাছা। সারাক্ষণ শালিক, চড়–ই আর দোয়েলের কিচির-মিচির। প্রজাপতির দল ফরফর করতে থাকে কলাগাছের ঝোপে আর লাগোয়া ফুলবাগানে। শীতের সময় রঙিন সব গাঁদাফুল এমনভাবে দল মেলে ফুটে থাকে যে তুষ্টির লোভ হয় ফুলগুলোর কার্পেটে ঘুমিয়ে পড়ার। ওখানে ঘুমিয়ে পুরো স্কুলটাকে দেখার ওর বড় শখ। হাতের গীটারটা নিয়ে টুং-টুং করে গান গাইলে মনটা যেন আরও ফুরফুরে লাগত, ‘ওলো সই , ওলো সই । আমার ইচ্ছা করে তোদের  মতো মনের কথা কই। ’

কিন্তু স্কুলটা ঠিক ওর মনের কথা শুনতে পায় না। চারপাশে উঁচু-লম্বা পাঁচিল আর দমবন্ধ গেট দিয়ে মোড়ানো। ভেতরে সবাই গুরুগম্ভীর। কারও মুখে হাসির বিন্দুমাত্র  লেশ নেই। যে দারোয়ান ছোটো গেটটা খুলে দেয় তাকে মনে হয় মেষপালক। সবাইকে নিয়ম করে স্কুলে ঢুকানো আর বের করা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই তার। ওর হাতে একটা লাঠি। এ লাঠিটা সে কেন হাতে রেখেছে তা তুষ্টির জানা নেই।

বুয়াগুলোও হাসে না। চোখেমুখে সন্দেহ আর অবিশ্বাস ; কেউ বাগানের দিকে সামান্য হেঁটে গেলেও তাদের অবিশ্বাসী চোখ নিমেষে বদলে যায় । এমনভাবে তাকায় যেন তুষ্টি একটা ফুলচোর। অথচ সে কখনও  ফুল ছিঁড়ে না। সে শুধু আলতো করে ওদের স্পর্শ করে দেখতে চায়। একটুখানি আদর দিলেই ওরা  তুষ্টির সঙ্গে খুব জমে ওঠে। না ঝরা পর্যন্ত  সেই ফুলটি ওকে মনে রাখে। আসা-যাওয়ার পথে ঠিক একবার হলেও  সেটির উপর তুষ্টির চোখ পড়ে। ওর তীব্র কল্পনাশক্তি  চারপাশে  তখন প্রাণসঞ্চার ঘটায়। সে মুখে কথা বলতে না পারলেও বিড়বিড় করে ঠিকই মনের কথা বলে,‘ হ্যারে তিসা, তোর গায়ের রঙ্গের মতো আমার মায়েরও একটা শাড়ি আছে। সেটা মা বিশেষ অনুষ্ঠানে পরে বাপির সঙ্গে বেড়াতে  যায়। তোর গায়ের খয়েরি ডোরাকাটা চিহ্নের  দিকে তাকালে মায়ের খয়েরি কটকি পাড়ের হলুদ শাড়িটার কথা মনে পড়ে। পহেলা ফাল্গুন এলে এই শাড়িটা পরে মা বাইওে যায় বাপির সঙ্গে। তুই কি কোথাও বেড়াতে যাস ?’

খয়েরি-হলুদ মেশা গাঁদা ফুলগুলো বাতাসে নড়ে চড়ে উঠতেই ফিক করে হেসে ফেলে তুষ্টি। বলে,‘সরি। তোরা তো আবার হাঁটতে জানিস না। যাবি কিভাবে ?’

দুজন বুয়ার সতর্ক চোখ ওর উপর। একজন অন্যজনের দিকে তাকায়। তুষ্টির সঙ্গে চোখাচোখি হতেই চেঁচিয়ে ওঠে একজন ,‘ আফা, বাগানে কিতা করুইন ? বড় আফা জানলে শাস্তি দিব কৈলাম।’

পাশের বুয়া ফিসফিস করে বলে,‘ মাইয়াডা ফাগল। দেহছ না ক্যামন ফিসফিস কইরা কতা কয় ? মনে অয় জিন-ভূত আছে লগে।’

তুষ্টি শুনতে পেলেও কথা বাড়ায় না। সে শ্রেণিকক্ষে  গিয়ে বসে থাকে। ওদের ক্লাস দোতলায়।  ইচ্ছে করে জানালার পাশে বেঞ্চে গিয়ে বসে সে।  নারকেলের অনেকগুলো  চিরল পাতা জানালার শার্সিতে এসে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।  সে  ক্লাসের টীচার যা বলে তা শোনার চেয়ে সেদিকে তাকিয়ে আনমনা হতেই বেশি ভালবাসে। শীতের হাওয়া আর চিরল পাতার ভেতর কি কি সব কথা বিনিময় হয়  তা জানার বড় কৌতূহল জাগে ওর মনে। একটা সবুজ রঙের অস্থির  টিয়া কোত্থেকে এসে নারকেলের মখমলি ডালে বসে বাতাসের সাথে মিতালি পাতাতে চায়। কিন্তু সবুজ ভেলভেট কাপড়ের মতন মসৃণ আর পিছল পাতায় বসে সুবিধা করতে  না পারায় উড়ে চলে যায় অন্য গাছে। তখন তুষ্টির মন খারাপ হয়ে পড়ে। পাখিটাকে আরও একটু দেখার জন্য মন আকুলি-বিকুলি করে।

সহসা টীচার ধমক দিয়ে ওঠে‘, তুষ্টি, তুমি কোনদিকে তাকিয়ে আছো ?’

আমতা আমতা করতে থাকায় টীচার এসে ওর সামনে দাঁড়ায়। বলে,‘ বলতো আমি কী পড়াচ্ছিলাম?’

তুষ্টি মনে করতে পারে না পড়ার কথা। সে অসহায়ভাবে কড়ই গাছের মগডালে বিশ্রাম নেয়া একটি দাঁড়কাকের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সেরকম সাহসও নেই যে টীচারের চোখের দিকে সরাসরি তাকাবে।

‘এই মেয়ে, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল ক্লাসে কী পড়ানো হচ্ছিল। বলে? ’ ধমকে ওঠেন টীচার।

‘সরি। বলতে পারব না।’

‘এতটা ক্যালাস ক্যান তুমি ? কি ভাবছিলে ?’

এসময় ক্লাসের সহপাঠীরা খিলখিল করে হেসে ওঠে ওর অসহায় অবস্থা দেখে। লজ্জায় তুষ্টির মাথা মাটির সঙ্গে মিশে যেতে চায়। কিন্তু টীচার  নাছোড়বান্দা । কিছুতেই ওকে কাঠগড়া থেকে নামতে দিচ্ছেন না। বারবার সরি বলার পরও তার জেদ থামছে না।

‘এরকম হলে কি করে চলবে ? জেবুন্নিছা স্কুলের বদনাম হয়ে যাবে তোমার মতো  দুইচারটা ছাত্রি থাকলে। হাউ ফানি ? এতক্ষণ তাহলে তুমি কি ভাবছিলে ? বল, বল ?’

‘সরি।’

‘সরি বললে সব শেষ ? তুমি আমার ক্লাসে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে। এটাই তোমার উচিৎ শিক্ষা। ডু ইট ?’

তুষ্টির  গাল বেয়ে অপমানের উষ্ণ অশ্রæ গড়িয়ে পড়ে।  ওর দুটো হাত কান আঁকড়ে রয়েছে। বুকের ভেতরটা জ্বলে-পুড়ে খাক। তবু সে আড়চোখে  নারকেল আর কড়ইগাছটার দিকে তাকায়। একটা দুটো চড়ই কিংবা শালিক এসে বসছে সেখানে, তুষ্টির চোখ চলে যাচ্ছে সেদিকে।  নারকেল গাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে চতুর এক কাঠবিড়ালি । তুষ্টির চোখ দুটো চকচক করছে তা দেখার জন্যে ।

কিন্তু টীচার ওর দিকে যেভাবে তাকিয়ে রয়েছে, তাতে ঘাড় ঘুরানোর কোনো সুযোগই নেই।

অনিচ্ছাসত্তে¡ও  ওর  মনমরা চেহারায়  ভেসে থাকা অশ্রæসজল করুণ দৃষ্টি পুরনো মোজাইকের উপর দাসী-বাঁদীদের মতো নতজানু হয়ে পড়ে থাকে !