মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
‘তোর কথা আগেই বলেছি’ বেরিয়ে যেতে যেতে মুরাদ বললে, ‘তুই খোকাগাছ শিকড়সুদ্ধ মুখ থুবড়ে প’ড়ে যাবি, আর কোনোদিন মাথা উঁচু ক’রে দাঁড়াতে পারবি না, করাতের টানে টুকরো টুকরো হ’য়ে যাবে তোর গুঁড়ি, তোর সব পাতা শুকিয়ে ঝ’রে যাবে, সামনে ঝড়!’
খুব দ্রুত ঘ’টে যাচ্ছিলো সবকিছু।
রেসকোর্সের মিটিং-এর পর থেকে অর্ধেক খালি হ’য়ে গিয়েছে ঢাকা শহর। অসহযোগ আন্দোলনের ঢেউ শহর থেকে দাবানলের মতো গ্রাম- গ্রামান্তরেও ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামাঞ্চলের দিকে স’রে যাচ্ছে ভীত-সন্ত্রস্ত শহরবাসীরা, পালাচ্ছে। গোটা দেশের একটি বিশাল চাকা মেঘহীন আকাশের মস্ত খিলানের গায়ে কাত হ’য়ে প’ড়ে আছে।
ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে রেক্সে টু মারলো খোকা।
পরিচিত বন্ধুদের বিশেষ কাউকে দেখতে পেল না। এক কোণে রহমান নুরুদ্দিন আর মওলা টেবিলের উপর দৈর্ঘ্যে-প্রন্থে এক বিগত প্রমাণ একটি প্রচারপত্র ফেলে গভীর মনোযোগের সঙ্গে হুমড়ি খেয়ে ঝুঁকে আছে। চেয়ার টেনে খোকাও ভিড়ে গেল।
কাগজটা একটা গোপন নির্দেশনামা। শত্রুর, অর্থাৎ সামরিক বাহিনীর রক্তলোভী কুত্তাদের সম্ভাব্য আক্রমণ শুরু হ’লে কিভাবে তা মোকাবিলা করতে হবে, গেরিলা যুদ্ধের কৌশল, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, আক্রমণ ও আত্মরক্ষা, সংক্ষেপে বোঝানো হয়েছে এইসব। নারী ও পুরুষ–সঙ্কটকালে কার কি কর্তব্য হবে পৃথক পৃথকভাবে তার বর্ণনা এবং ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
একটা মাছের বাজার; টেবিল চাপড়ানি, কাচ স্টেনলেস স্টীল আর চীনেমাটির একটানা টুংটাং-ঠুংঠাং এবং হোহো, সব মিলে একটা জ্যাজ, গমগম করছে হলরুম।
Leave a Reply