সারাক্ষণ ডেস্ক
প্রায় ২০০০ বছর আগে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুত্পাতে যখন প্রাচীন হারকুলেনিয়াম শহরের সৈকতে আগ্নেয়গিরির উপাদান ছড়িয়ে পড়ে, তখন শত শত পুরুষ, মহিলা এবং শিশু পাথরের নৌকা, ঘরগুলির ভেতরে ও চারপাশে জমায়েত হয়েছিল, অপেক্ষা করছিলেন উদ্ধারকারীদের জন্য যারা কখনোই আসেনি। খ্রিস্টাব্দ ৭৯-এর এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত সৈকতটিকে সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং এই সৈকত দর্শকদের জন্য বন্ধ করে দেয়।
এখন নবনির্মিত এবং পুনরুদ্ধার কাজের কারণে দর্শণার্থীরা আবার এই সৈকতে পা রাখতে পারছেন। হারকুলেনিয়াম প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্যানের পরিচালক ফ্রান্সেসকো সিরানো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সৈকতের পুনরুদ্ধার কাজের ফলে মানুষরা স্থানটি আবারও দেখতে পারবে যেমনটি প্রাচীন রোমান লোকেরা দেখেছিল। দর্শকদের একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে নীচে নামতে হবে এবং এটি এমন হবে যেন আমরা দুই হাজার বছর পিছনে চলে গেছি এবং তারপর হঠাৎ করে আপনি সৈকতটি পেয়ে যাবেন।
যদিও হারকুলেনিয়াম প্রায়ই এর বেশি পরিচিত প্রতিবেশী পম্পেইয়ের ছায়ায় থাকে, যেটিও মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুত্পাত দ্বারা ধ্বংস হয়েছিল। পম্পেইয়ের সৈকত এলাকায় কমপক্ষে ৩৩০ জন মানুষের দেহাবশেষ রয়েছে যারা উদ্ধারকারীদের আশায় সেখানে নৌকা এবং ঘরগুলিতে আশ্রয় নিয়েছিল। এই দেহাবশেষগুলি ১৯৮০, ৯০ এবং ২০০০ সালে আবিষ্কৃত হয়, যাদের বেশিরভাগ মহিলা-শিশু এবং তাদের কুকুর এবং ভেড়াসহ। গবেষকদের মতে, প্রাপ্তবয়স্ক এবং তরুণ পুরুষেরা সৈকতেই সমাধিস্থ হয়েছিল। সিরানো বলেছিলেন যে,অগ্ন্যুত্পাত হারকুলেনিয়ামকে আগ্নেয়গিরির লাভা দ্বারা ঢেকে ফেলেছিল।
অবশেষে সৈকত এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়, যার ফলে দর্শণার্থীরা কেবলমাত্র পানির উপরে ঝুলন্ত পথ দিয়ে নৌকা ঘর এবং দেহাবশেষে পৌঁছতে পারত। ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং প্যাকার্ড হিউম্যানিটিস ইনস্টিটিউটের পুনরুদ্ধার কাজের জন্য দর্শণার্থীরা প্রথমবারের মতো আবার সৈকতে পা রাখতে পারছে। প্রাচীন এই সৈকত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, এখানে আগ্নেয়গিরির কালো বালি ছিল কিন্তু সৈকত এলাকার পুনর্গঠনে সেটি ব্যবহার করা হয়নি, কারণ বালি হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করবে, সিরানো বলেছিলেন। এর পরিবর্তে, তারা একটি কালো উপাদান ব্যবহার করেছিল যা রঙে অনুরূপ ছিল।
“যদি আমরা যেখানে সমুদ্র একসময় ছিল সেখানে তাকাই, আমরা সেই বিশাল আগ্নেয়গিরির লাভার অন্বেষণকারী হয়ে যাই যা কয়েক ঘণ্টায় শহরকে ঢেকে ফেলেছিল, প্রায় পুরো ধ্বংসকালীন অবস্থার অনুভূত হবে।” এর সঙ্গে সিরানো সৈকতটিকে বিশ্বের একটি অসাধারণ এবং অনন্য স্থান বলে বর্ণনা করেন।
সিরানো বলেন, ৩৩০ জন মানুষের যে দেহাবশেষ পাওয়া গেছে তা প্রাচীন শহরের জনসংখ্যার ৫ শতাংশ। এছাড়া জৈব উপাদান যেমন কাঠ এবং খাবার ধ্বংসাবশেষ এলাকায় পাওয়া গেছে। পম্পেই মূলত আগ্নেয়গিরির ছাই দ্বারা সমাধিস্থ ছিল, ইউনেস্কো ভাষ্যে সেটি রোমান শহরের একমাত্র ধ্বংসাবশেষ যা অসাধারণভাবে সংরক্ষিত হয়েছে এবং বিশ্বে এর সমকক্ষ আর কিছু নেই। উভয় স্থানই ধীরে ধীরে ১৮ শতকের মাঝামাঝি থেকে খনন করা হয়েছে এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। যদিও হারকুলেনিয়ামের অনেক ধ্বংসাবশেষ আধুনিক শহরের নীচে রয়েছে এবং তা ১৭ দশকে নির্মিত সুড়ঙ্গের মাধ্যমে অন্বেষণ করা হয়েছে।
অগ্ন্যুত্পাত এই দুই প্রাচীন শহরের জীবন শেষ করে দিয়েছিল, কিন্তু এ সব এলাকার নতুন আবিষ্কারগুলি গবেষক এবং দর্শণার্থীদের আকর্ষণ করে চলেছে। এই বছরের শুরুর দিকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা পম্পেইতে একটি ভোজঘর আবিষ্কারের ঘোষণা করেছিলেন, যেটি ট্রোজান যুদ্ধে অনুপ্রাণিত পৌরাণিক চরিত্রগুলির সুন্দর ফ্রেস্কো পেইটিং দিয়ে সজ্জিত ছিল। ২০২১ সালে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির দেহাবশেষ পেয়েছিলেন যিনি তার ধনদৌলতের সাথে পাওয়া গিয়েছিলেন এবং তাকে “হারকুলেনিয়ামের শেষ পলাতক” বলা হয়েছিল।
এর এক বছর আগে দি ওয়াশিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে ইতালীয় গবেষকরা বলেছিলেন যে, অগ্ন্যুত্পাতের তাপ এতটাই গরম ছিল যে, এটি একটি মানুষের মস্তিষ্ককে কাচে রূপান্তরিত করেছিল। প্রযুক্তি হারিয়ে যাওয়া বিশ্বকে জীবিত করে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে। গত বছর নেব্রাস্কা-লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে ৪০ হাজার ডলার দেয়া হয়েছিল যখন তিনি একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলেন যা প্রাচীন লিপি ও চিত্রের অংশগুলি পাঠ করতে সক্ষম যা অগ্ন্যুত্পাতে পুড়ে গিয়েছিল এবং সমাধিস্থ হয়েছিল।
Leave a Reply