শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১২২)

  • Update Time : শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

নবাব দুর্লভরামকে সসৈন্যে পলাশীতে অবস্থান করিতে আদেশ দিলে, দুর্লভরাম আপনার সৈন্য লইয়া পলাশী-প্রান্তরে আসিয়া শিবির সন্নিবেশ করিলেন। এই সময়ে সিরাজের বিরুদ্ধে এক ভীষণ ষড়যন্ত্র চলিতেছিল। জগৎশেঠ, মীরজাফর, রায়দুর্লভ প্রভৃতি তাহার অধিনায়ক। ইয়ার লতিফ খাঁ নামে নবাবের একজন সেনাপতি নবাবী প্রাপ্তির আশায় ইংরেজদিগের সাহায্য প্রার্থনা করেন; মীরজাফরও সেই মর্ম্মে আবেদন করেন। ইংরেজেরা মীরজাফরকে নবাবী দিতে স্বীকৃত হন; কিন্তু ইয়ার লতিফকেও আশ্বাস দিয়া ভুলাইয়া রাখিতে ত্রুটি করেন নাই।

ইংরেজেরা নবাবকে পলাশীপ্রান্তর হইতে সৈন্য ফিরাইয়া লওয়ার জন্য লিখিয়া পাঠাইলে, নবাব প্রথমে স্বীকৃত হন, কিন্তু অবশেষে ইংরেজদিগের দুরভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া, তাঁহাদের কথায় কর্ণপাত করেন নাই। ক্লাইবও চতুরতাপূর্ব্বক নবাবের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইতেছেন বলিয়া লিখিয়া পাঠাইলেন। যখন উভয় পক্ষের উদ্দেশ্য প্রকাশিত হইয়া পড়িল, তখন উভয় পক্ষই পলাশী প্রান্তরাভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিল। ইংরেজ-সৈন্য পলাশীর দিকে যাত্রা করিয়া ১৬ই জুন পাটুলীতে উপস্থিত হয়। অনন্তর ১৭ই জুন কাটোয়াতে উপনীত হইয়া, কাটোয়া অধিকার পূর্ব্বক তথায় ২২শে পর্যন্ত অপেক্ষা করে। ঐ স্থানেই নবাবকে পলাশীতে আক্রমণ করিবার পরামর্শ স্থির হইল।

২২শে রাত্রিকালে তাহারা পলাশীতে উপস্থিত হইয়া আম্রকুঞ্জমধ্যে আশ্রয় লয়। নবাব মীরজাফর-প্রভৃতির অভিসন্ধি কিয়ৎপরিমাণে বুঝিতে পারিয়াছিলেন; কিন্তু সে সময়ে মীরজাফরের সহিত মিলন করিয়া প্রথমে তাঁহাকেই পলাশী অভিমুখে যাইবার আদেশ দেন। বলা বাহুল্য, মীরজাফর নিজে মৌখিক সম্ভাব প্রদর্শন করিয়াছিলেন বটে কিন্তু নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করাই তাঁহার একমাত্র উদ্দেশ্য। মীরজাফর পলাশী অভিমুখে যাত্রা করিলে, নবাব মুর্শিদাবাদ হইতে প্রথমে মনকরায়, তৎপরে দাদপুরে, অবশেষে ইংরেজদিগের আসিবার প্রায় ১২ ঘণ্টা পূর্ব্বে পলাশীতে আসিয়া শিবির সন্নিবেশ করেন।

পলাশীর যে আম্রকুঞ্জমধ্যে ইংরেজেরা আসিয়া আশ্রয় গ্রহণ করে, তাহা উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৬ শত হস্ত, এবং প্রন্থে পূর্ব্ব- পশ্চিমে প্রায় ৬ শত হস্ত। এই কুঞ্জে শ্রেণীবদ্ধ আম্র ও অন্যান্য বৃক্ষ শাখা বিস্তার করিয়া ইংরেজ সৈন্যদিগকে আচ্ছাদন করিয়া রাখিয়াছিল। ভাগীরথী তৎকালে বড় অধিক দূরে ছিলেন না। কুঞ্জটি চারিদিকে একটি অল্প পরিসর খাদ ও একটি অনতি-উচ্চ বাঁধ দ্বারা বেষ্টিত হইয়া বিরাজ করিতেছিল। কুঞ্জের উত্তর দিকে নদীতীরে নবাবের একটি শিকারমঞ্চ ছিল। এইখানে ভাগীরথী অত্যন্ত বক্রতা অবলম্বন করিয়াছিলেন, ছইটি বড় বড় বাঁক নৌকারোহিগণের গতায়াতের বড়ই বিলম্ব ঘটাইত। শিকার-মঞ্চের নিকটস্থ বাঁকাট অপেক্ষাকৃত অন্ন দূর বিস্তৃত ছিল; কিন্তু তাহার উত্তর পশ্চিমে তদপেক্ষা আর একটি অশ্বপদাকৃতি প্রশস্ত বাঁক একটি উপ- দ্বীপের সৃঞ্জি করিয়াছিল।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024