০৬:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
হিন্দু ভোটব্যাংকে ‘নজর’ জামায়াতের? আমেরিকায় প্রযুক্তি কর্মী তৈরির দৌড়, তবে  কি আগে চাকরি পাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা? বিশ্ববাজারে এআই বিনিয়োগে উত্তাপ — হংকং সম্মেলনে শেয়ারবাজারে বুদবুদের আশঙ্কা প্যারিসবাসীর জন্য ব্যতিক্রমী লটারি: ঐতিহাসিক সমাধিক্ষেত্রে সমাধিস্থ হওয়ার সুযোগ প্রাক্তন এফবিআই পরিচালক কমি মামলার সমালোচনা: একটি ফেডারেল বিচারকের তীব্র মন্তব্য পাকিস্তানের বর্তমান বাংলাদেশ নীতি কি পুরোনো ক্ষতকে আরও আঘাত করছে ভ্যাটিকান সিটি ও গুরুদ্বারা গুরু নানক দরবার দুবাইয়ের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় সংহতির উদযাপন ঢাবিতে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষকের পদ বাতিলের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কোরিয়ান সিনেমায় হাস্যরসের জয়যাত্রা: কেন কোরিয়ান দর্শক আবার হাসছে নেটফ্লিক্সের ‘As You Stood By’ মৃগয়া, বন্ধুত্ব এবং নারীদের নেতৃত্বে থ্রিলারের মাধ্যমে হত্যা অনুসন্ধান

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৩১)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪
  • 68

শ্রী নিখিলনাথ রায়

খোশবাগ

শ্মশান মুর্শিদাবাদের পরিচয় দিবার জন্য কেবল দুই একটি সমাধি- ক্ষেত্র নগরের কোলাহল হইতে দূরে বিক্ষিপ্ত হইয়া বৃক্ষরাজির স্নিগ্ধচ্ছায়ায় অম্লাপি বিরাজ করিতেছে। সমাধিব্যতীত আর কিছুতেই মুর্শিদাবাদের পরিচয় পাওয়ার সম্ভাবনা নাই। মুর্শিদকুলী বল, আলিবর্দ্দদী বল, সিরাজ বল, কাহারও কোন সুস্পষ্ট চিহ্ন মুর্শিদাবাদে দেখিতে পাইবে না; কেবল তাঁহারাই সেই শ্মশানক্ষেত্রের এক এক স্থানে শায়িত হইয়া, আপনাদিগের পরিচয় আপনারাই প্রদান করিতেছেন। কিন্তু নীরব, নির্জন সমাধি-উদ্যানের নিবিড় বৃক্ষচ্ছায়া তাঁহাদিগকে এরূপ ভাবে আবৃত করিয়া রাখিয়াছে যে, সহসা তাঁহাদিগকে দৃষ্টিপথের পথিক হইতে দেখা যায় না।

তাঁহাদিগের নাম ও গৌরব যেমন দিন দিন কাহিনীতে পর্যবসিত হইতেছে, তাঁহারাও সেইরূপ ক্রমে ক্রমে বৃক্ষচ্ছায়ার অন্ধকারে মিশিয়া যাইতেছেন। প্রভাতে ও সায়াহ্নে কেবল পক্ষিগণ বৃক্ষশাখায় বসিয়া কলধ্বনিতে সমাহিত ব্যক্তিদিগকে সাদর- সম্ভাষণ করিয়া থাকে এবং যদি কখনও কোন সহৃদয় দর্শন-কৌতূহল- পরবশ হইয়া তাঁহাদের অন্ধকারময় প্রকোষ্ঠে উপস্থিত হন, তিনি উজানস্থিত কুহমেরক্ষের নিকট হইতে চই চারিটি কুসুম প্রার্থনা করিল, সমাধির উপর নিক্ষেপ করিয়া চলিয়া যান। আমরা মুর্শিদাবাদের অধীশ্বর। গণের ইতা অপেক্ষা অধিকতর অপর কোন সম্মানের বিষয় অবগত নহি।

যাঁহাদের নামই একরূপ বিলুপ্ত হইতে বসিয়াছে, তাঁহাদের প্রতি অধিক সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজন কি? মৃত ব‍্যক্তির আত্মা শান্তিপিপাসু। ঘেঁষে স্বানে তাঁহাদের দেহ সমাহিত আছে, প্রকৃতি সেই সেই স্থানকে বেশোন্তিময় করিয়া রাখিয়াছেন। প্রকৃতিই তাঁহাদিগকে পবিত্র ও হিগ্ধ শাস্তি প্রদান করুন, তাঁহারা কৃত্রিম সম্মানের প্রার্থী নহেন। সুখের বিষয়, মুর্শিদাবাদে যে কয়েকটি সমাধিভবন আছে, প্রায় সকলগুলিই নির্জন ও শান্তিময়।

মুর্শিদাবাদ হইতে দক্ষিণ দিকে ভাগীরথী বাহিয়া গমন করিতে হইলে, লালবাগ নামক স্থানের কিছু দক্ষিণে, ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে একটি প্রাচীরবেষ্টিত উদ্যানবাটিকা নয়নপথে পতিত হইয়া থাকে। এই উত্থানবাটিকা একটি সমাধিভবন। যেস্থানে সমাধিভবনটি অবস্থিত, তাহাকে সাধারণতঃ লোকে খোহাগ কহে। এই খোশ বাগের সমাধি- ভবনে নবাব আলিবন্দী খাঁ ও হতভাগ্য সিরাজ চিরনিদ্রায় অভিভূত। রহিয়াছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

হিন্দু ভোটব্যাংকে ‘নজর’ জামায়াতের?

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৩১)

১১:০০:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

খোশবাগ

শ্মশান মুর্শিদাবাদের পরিচয় দিবার জন্য কেবল দুই একটি সমাধি- ক্ষেত্র নগরের কোলাহল হইতে দূরে বিক্ষিপ্ত হইয়া বৃক্ষরাজির স্নিগ্ধচ্ছায়ায় অম্লাপি বিরাজ করিতেছে। সমাধিব্যতীত আর কিছুতেই মুর্শিদাবাদের পরিচয় পাওয়ার সম্ভাবনা নাই। মুর্শিদকুলী বল, আলিবর্দ্দদী বল, সিরাজ বল, কাহারও কোন সুস্পষ্ট চিহ্ন মুর্শিদাবাদে দেখিতে পাইবে না; কেবল তাঁহারাই সেই শ্মশানক্ষেত্রের এক এক স্থানে শায়িত হইয়া, আপনাদিগের পরিচয় আপনারাই প্রদান করিতেছেন। কিন্তু নীরব, নির্জন সমাধি-উদ্যানের নিবিড় বৃক্ষচ্ছায়া তাঁহাদিগকে এরূপ ভাবে আবৃত করিয়া রাখিয়াছে যে, সহসা তাঁহাদিগকে দৃষ্টিপথের পথিক হইতে দেখা যায় না।

তাঁহাদিগের নাম ও গৌরব যেমন দিন দিন কাহিনীতে পর্যবসিত হইতেছে, তাঁহারাও সেইরূপ ক্রমে ক্রমে বৃক্ষচ্ছায়ার অন্ধকারে মিশিয়া যাইতেছেন। প্রভাতে ও সায়াহ্নে কেবল পক্ষিগণ বৃক্ষশাখায় বসিয়া কলধ্বনিতে সমাহিত ব্যক্তিদিগকে সাদর- সম্ভাষণ করিয়া থাকে এবং যদি কখনও কোন সহৃদয় দর্শন-কৌতূহল- পরবশ হইয়া তাঁহাদের অন্ধকারময় প্রকোষ্ঠে উপস্থিত হন, তিনি উজানস্থিত কুহমেরক্ষের নিকট হইতে চই চারিটি কুসুম প্রার্থনা করিল, সমাধির উপর নিক্ষেপ করিয়া চলিয়া যান। আমরা মুর্শিদাবাদের অধীশ্বর। গণের ইতা অপেক্ষা অধিকতর অপর কোন সম্মানের বিষয় অবগত নহি।

যাঁহাদের নামই একরূপ বিলুপ্ত হইতে বসিয়াছে, তাঁহাদের প্রতি অধিক সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজন কি? মৃত ব‍্যক্তির আত্মা শান্তিপিপাসু। ঘেঁষে স্বানে তাঁহাদের দেহ সমাহিত আছে, প্রকৃতি সেই সেই স্থানকে বেশোন্তিময় করিয়া রাখিয়াছেন। প্রকৃতিই তাঁহাদিগকে পবিত্র ও হিগ্ধ শাস্তি প্রদান করুন, তাঁহারা কৃত্রিম সম্মানের প্রার্থী নহেন। সুখের বিষয়, মুর্শিদাবাদে যে কয়েকটি সমাধিভবন আছে, প্রায় সকলগুলিই নির্জন ও শান্তিময়।

মুর্শিদাবাদ হইতে দক্ষিণ দিকে ভাগীরথী বাহিয়া গমন করিতে হইলে, লালবাগ নামক স্থানের কিছু দক্ষিণে, ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে একটি প্রাচীরবেষ্টিত উদ্যানবাটিকা নয়নপথে পতিত হইয়া থাকে। এই উত্থানবাটিকা একটি সমাধিভবন। যেস্থানে সমাধিভবনটি অবস্থিত, তাহাকে সাধারণতঃ লোকে খোহাগ কহে। এই খোশ বাগের সমাধি- ভবনে নবাব আলিবন্দী খাঁ ও হতভাগ্য সিরাজ চিরনিদ্রায় অভিভূত। রহিয়াছেন।