সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১৮ অপরাহ্ন

নেতা, পুলিশ, বিচারক, আমলাসহ প্রাণরক্ষায় ৬২৬ জন আশ্রয় নিয়েছিল সেনানিবাসে

  • Update Time : রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৪, ১০.৪৮ পিএম

বাংলাদেশে গত পাঁচই অগাস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলের নেতা, বিচারক, সরকারি আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৬২৬ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।

এর মধ্যে ৫১৫ জনই পুলিশের সদস্য, যাদের মধ্যে ২৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা। আশ্রয়গ্রহীতাদের অধিকাংশই নিজ উদ্যোগে পরে সেনানিবাস ছেড়ে চলে গেছেন। এখন সেখানে রয়েছেন সাত জন।

এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে আশ্রয়গ্রহীতাদের চারজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ইতোমধ্যেই হস্তান্তর করা হয়েছে।

রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী সাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে যে, আশ্রয়গ্রহীতাদের মধ্যে পরিবারের সদস্যসহ এখনও সাতজন সেনানিবাসে অবস্থান করছেন।

তবে তারা ঠিক কারা, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেশের বেশিরভাগ জেলাতেই আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

এসব ঘটনায় ঢাকা, চাঁদপুর, যশোর, সাতক্ষীরা, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাটসহ বেশ কিছু জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকে নিহত ও আহত হন।

এমন পরিস্থিতিতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দলটির শীর্ষনেতাদের অনেকেই গা ঢাকা দেন।

বিদেশে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ বহু নেতা।

এছাড়া বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িতে পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। ফলে পুলিশের অনেক সদস্য থানা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে খোঁজে চলে যান।

অবশ্য সম্প্রতি তারা পুনরায় কাজে যোগ দিয়েছেন।

বিমানবন্দরে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক

কারা আশ্রয় নিয়েছিলেন?

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে পেশা বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি সদস্য ছিল পুলিশের।

গত পাঁচই অগাস্টের পর কমপক্ষে ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে অন্তত ২৮ জন ছিলেন কর্মকর্তা পর্যায়ের।

এর বাইরে, ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর।

এছাড়া, পাঁচজন বিচারক, ১৯ জন বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ ১২ জন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন।

আশ্রয়গ্রহীতাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও ছিল বলে জানা যাচ্ছে।

তবে রাজনৈতিক দলের নেতা, বিচারক, সরকারি আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে ঠিক কারা কারা আশ্রয় নিয়েছিলেন, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে ৬১৫ জন নিজেদের উদ্যোগে সেনানিবাস ছেড়ে যান।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়।

সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন।

পুলিশের তথ্যমতে, পাঁচই অগাস্টের পর চার শতাধিক থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।

এতে পুলিশের অনেক সদস্য হতাহত হয়েছেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপরেও বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে।

এমন পরিস্থিতি ওই ৬২৬ জন ব্যক্তি প্রাণ বাঁচানোর জন্য তারা সেনানিবাসগুলোতে আশ্রয় প্রার্থনা করে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।

দেশে বিচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ, জীবন রক্ষা ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যেই তাদেরকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে তারা।

একই সঙ্গে, গুজবে কান না দিয়ে সকলকে ধৈর্যশীল ও সহযোগী মনোভাব প্রদর্শন করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে সেনা বাহিনী।

দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সেনা সদস্যরা সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

এর আগে, গত ১৩ই অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের সেনা হেফাজতে নেয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, “তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে যাতে কোন বিচারবহির্ভূত কাজ না হয়”।

অভিযোগ থাকলে বা মামলা হলে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও তখন উল্লেখ করেছিলেন সেনাপ্রধান।

গ্রেফতার হয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

আ’লীগের যারা গ্রেফতার হয়েছেন

গত ১৪ই অগাস্ট রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে গ্রেফতার করার কথা জানায় পুলিশ।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ঢাকার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত তিনজনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে জুনাইদ আহমেদ পলককে ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেফতারের’ কথা বলা হলেও, গত পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পর তাকে বিমানবন্দর থেকে আটক হওয়ার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।

একই সময়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকেও আটকে দিয়েছিল ইমিগ্রেশন পুলিশ।

পরে তাদেরকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল বলে বিমানবন্দর সূত্রে জানতে পারে বিবিসি বাংলা।

এদিকে, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের আটক হবার একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।

তবে তাকেও সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল কী-না, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সেক্ষেত্রে আগেই আটক হওয়া ব্যক্তিরা কীভাবে আত্মগোপনে গেলেন এবং কেন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করতে হলো উঠছে সে প্রশ্নও।

অন্যদিকে, গত ১৩ই অগাস্ট সন্ধ্যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়।

গত ১৬ই জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন সহিংসতার ঘটনায় ঢাকার নিউমার্কেট থানার একটি মামলায় মি. হক এবং মি. রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

বিবিসি নিউজ বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024