শ্রী নিখিলনাথ রায়
ইহার উপর আবার তাঁহাকে ঐতিহাসিকগণের চিত্রে কালিমামণ্ডিত হইতে হইয়াছে। খোশ বাগের সমাধিগৃহে আলিবন্দীর পার্শ্বে এক্ষণে সিরাজ চিরবিশ্রাম লাভ করিতে। ছেন। মুতাক্ষরীনকার বলেন যে, সিরাজের হত্যাসম্বন্ধে মীরজাফর কিছুই জানিতেন না; কিন্তু রিয়াজুস্ সালাতীনকার উল্লেখ করিয়াছেন। যে, জগৎশেঠ ও ইংরেজসদ্দার সিরাজের হত্যাকাণ্ডের জন্য মীরজাফরকে পরামর্শ দিয়াছিলেন।। কোন্ বিবরণ সত্য, তাহা আমরা সাহস করিয়া বলিতে পারি না। সিরাজের পূর্ব্ব পার্শ্বে তাঁহার ভ্রাতা মির্জা মেহেদী শায়িত রহি- য়াছেন। মির্জা মেহেদী পঞ্চদশ বৎসরে মীরজাফরের আদেশে জীবন বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়।
তাঁহারও হত্যাকাণ্ডে মীরণই নেতৃত্ব গ্রহণ’ করিয়াছিলেন। মীরজাফর সিংহাসনে উপবিষ্ট হইলে, রায়দুর্লভের সহিত তাঁহার মনোবিবাদ উপস্থিত হয়। মীরজাফর মসনদে বসিলে, আলিবন্দী ও সিরাজের পরিবারবর্গকে বন্দিদশার বাস করিতে হয়। মির্জা মেহেদীকেও কারাযন্ত্রণা ভোগ করিতে হইয়াছিল। রায়হলপ্ত মির্জা মেহেদীকে কারাগার হইতে মুক্ত করিবার চেষ্টা করিলে, তিনি গাছে মির্জা মেহেদীকে সিংহাসন প্রদান করেন, এই সন্দেহ করিয়া, মীরজাফর মারণকে তাঁহার বিনাশের জন্য আদেশ দেন। মীরণ হত্যাকাণ্ডের ব্যবস্থায় বিলক্ষণ পারদর্শী ছিলেন।
তিনি তৎক্ষণাৎ মির্জা মেহেদীর হত্যার ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। তদীয় আদেশানুসারে মির্জা মেহেদীর দুই পার্শ্বে দুই খানি তক্তা বিন্যাস করিয়া, সুদৃঢ় রজ্জুর বেষ্টন দ্বারা সেই তক্তা দুই খানিকে চাপিয়া তাহার প্রাণসংহার করা হয়। এই অদ্ভুত উপায়ে পঞ্চদশবৎসরবয়স্ক বালকের ঈদৃশ নিষ্ঠুর ভাবে হত্যার কথা যে শুনিয়াছিল, তাহারই নয়ন হইতে অশ্রুধারা নিপতিত হইয়া- ছিল। এই নৃশংস হত্যার পর তাহার মৃতদেহ আনিয়া খোশবাগে সিরাজের পার্শ্বেই সমাহিত করা হয়।
সিরাজের দক্ষিণে, তাঁহার পদতলে, তাঁহার প্রিয়তমা মহিষী লুৎফ উন্নেসা চিরনিদ্রিতা। স্বামীর মৃত্যুর পর ঢাকায় নির্ব্বাসনযন্ত্রণা ভোগ করিয়া, তিনি পুনর্ব্বার মুর্শিদাবাদে আসিয়া খোশবাগের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হন। পরে অন্তিম কালে স্বামীর পদতল আশ্রয় করিয়া চিরশান্তি ভোগ করিতেছেন। যিনি কি সুখে, কি দুঃখে, চিরদিনই ছায়ার ন্যায় স্বামীর অনুবর্তন করিয়াছিলেন, তিনি স্বামীর পদতল ব্যতীত আর কোথায় চিরশায়িত থাকিতে পারেন?
Leave a Reply