শশাঙ্ক মণ্ডল
প্রথম অধ্যায়
সুন্দরবন কমিশনারের এলাকার সাথে আরও ২১টি পরগনা যুক্ত করা হল। প্রিন্সেপ-এর নেতৃত্বে ১৮০ মাইল পরিমাপ করা হল যমুনা নদীর পরানপুর থেকে হুগলী পর্যন্ত। ১৮৫৩ খ্রীষ্টাব্দে নতুন আইন করে বিরোধের সমস্ত ফাঁকফোকড় বন্ধ করে সরকার সুন্দরবনের সমগ্র বনভূমি নিজ অধিকারে নিয়ে আসেন এবং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ বিঘা জমি বিলি করা হতে লাগল।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে দেখা গেল বরিশাল খুলনা ২৪ পরগণা যশোরের জঙ্গল কেটে সাফ করা হয়েছে সামান্য বনভূমি ১৬০০ বর্গ-মাইল তখন অরণ্য হিসাবে স্বীকৃত হল।সুন্দরবন এলাকায় বর্তমান জনবসতি শুরু হয়েছে ঊনিশ শতকের প্রথমের দিকে, অবশ্য সুন্দরবনের উত্তরাংশে দীর্ঘকালের বাসিন্দারা ১০-১৫ পুরুষ ধরে বসবাস করছেন তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগেও এক বিস্তীর্ণ এলাকায় কোন বসতি ছিল না। তাই সে যুগের রচিত মানচিত্রগুলিতে এই এলাকার উল্লেখ করা হয়েছে- Depopulated by Mugs. সেদিন সুন্দরবন ছিল পরিত্যক্ত জনবসতিশূন্য জঙ্গলমহল নিমকমহল।
লবণ কাঠ মোম মধু চুনের প্রয়োজনে কিছু মানুষ এসব এলাকায় যাতায়াত করতেন। ১৮১৩ খ্রীষ্টাব্দের পর কোম্পানীর চর বন্দোবস্তের মাধ্যমে নতুন নতুন ইজারাদারদের জমি বন্দোবস্ত দিলেন। জীবিকার প্রয়োজনে একদিন যারা ছিল লবণ শিল্পের শ্রমিক, মাহিন্দার, কাঠুরিয়া কিংবা চুনের জন্য শামুক সংগ্রহকারী তারা ইজারাদারদের নির্দেশমতো জমি উদ্ধারে যোগ দিল। উত্তরের মানুষ দক্ষিণের দিকে যাত্রা শুরু করল। সাঁওতাল পরগণা, রাঁচী এলাকার অনেক আদিবাসী বন কাটার কাজে অংশ নিল।
আর উত্তরের দিকে নীলের শ্রমিক হিসাবে অনেক আদিবাসীকে নীলকর সাহেবরা এসব এলাকায় নিয়ে আসেন। এসব মানুষদের বংশধররা আজও এ অঞ্চলে বসবাস করছে। সাঁওতাল বিদ্রোহের পরবর্তীকালে আদিবাসীদের আসবার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। ইংরাজ সরকার সেদিন সিদ্ধান্ত করেছিল- আদিবাসীদের গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনকে ভেঙে দিতে হবে। এরই পাশাপাশি ২৪ পরগণা খুলনা যশোর নদীয়া বাখরগঞ্জ জেলার উত্তরাংশের অনেক মানুষ জমির লোভে ফসলের আকর্ষণে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ল।
Leave a Reply