শশাঙ্ক মণ্ডল
প্রথম অধ্যায়
অতীত হাত বাড়ায় বর্তমানের দিকে; অতীতের সাথে বর্তমান একই সূত্রে বিধৃত। দেখার চোখের অভাবে অতীতের হারানো স্মৃতি খুঁজে পাওয়া যায় না। অতীতের চিহ্ন বর্তমানের মধ্যে থেকে যায়। কারণ পরম্পরাগত ধারা সবসময়ই সক্রিয় থাকে। সুন্দরবনকে যতই নবসৃষ্ট ভূমি এবং তার জনবসতিকে আধুনিক বলার চেষ্টা করা হোক না কেন-সুন্দরবনের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে যে সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে এর সভ্যতা সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের অধিকারী তা স্বীকার করতে হয়।
বেড়াচাঁপার চন্দ্রকেতুর গড়, খনা- মিহিরের ঢিবিতে যা আমরা পেলাম তা তো বাংলার প্রাচীন সম্পদ হিসাবে স্বীকৃতি পেতে বাধ্য। মেগাস্থিনিসের গঙ্গারিডি প্রদেশের অতুল ঐশ্বর্যের পরিচয় বহন করে চন্দ্রকেতু গড়। এই আবিষ্কারের ফলে বাঙালীর জীবনযাত্রার প্রায় তিন-চার হাজার বছর অতীত আমাদের সামনে ধরা পড়েছে। জয়নগর কাশীপুর গ্রামে ৬ষ্ঠ শতকের স্বর্ণমূর্তি ডায়মন্ডহারবারের বকুলতলা গ্রামের লক্ষ্মণ সেনের পট্রোলি রাক্ষসখালি দ্বীপে প্রাপ্ত লিপি উৎকীর্ণ একঝাঁক মাটির শীলমোহর যা প্রোট বেঙ্গলী লিপি নামে পরিচিত হয়ে মিউজিয়মে বাক্সবন্দী, যার পাঠোদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি, খাড়ি পরগণায় প্রাপ্ত অসংখ্য পাথরের মূর্তি সব কিছুই অতীতের সমৃদ্ধ সভ্যতার কথা স্মরণ করায়।
বারুইপুরের দুই মাইল পূর্বে আটঘরাগ্রামে ঢিবি ও পুকুর থেকে ২৩০০ বছর পূর্বের মৌর্যযুগের তামার মুদ্রা, রোমান মৃৎপাত্রের টুকরো, শুঙ্গ কুষাণযুগের মেষমূর্তি, যক্ষিণীমূর্তি শীলমোহর, গুপ্তযুগের অনেক নিদর্শন পাওয়া গেছে। এর পাশেই নবগ্রামের রাস্তা তৈরি করার সময় কুমার গুপ্ত ও ফিরোজ শা তুঘলকের স্বর্ণমুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। টলেমীর ভারত বিবরণীতে আলোচিত আষ্টগৌড়া শহরের সাথে আটঘরাকে অনেকে মিলিয়ে নিতে চাইছেন। প্রাচীন বিদ্যাধরী নদীর প্রবাহপথে এই আটঘরা।
হাড়োয়া বালান্দা ভাঙড় এলাকা থেকে অসংখ্য বৌদ্ধমূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। আশুতোষ মিউজিয়মের বিখ্যাত মঞ্জুশ্রী মূর্তিটি ভাঙড় থেকে পাওয়া গিয়েছিল। হাসনাবাদের ৬ মাইল দক্ষিণে পাটলীখানপুরে পুকুর কাটার সময় প্রায় একশ বছর পূর্বে প্রাপ্ত কালো পাথরের বিষ্ণুমূর্তি যা দীর্ঘকাল রামেশ্বরপুরের জয়গাঁ গ্রামের বটগাছতলায় সকলের পূজা পেত (বর্তমানে সেই মূর্তি স্থানান্তরিত হয়েছে) কিংবা সন্দেশখালি থানার রাজবাড়ি মঠের দিঘির মন্দির মসজিদ যাই হোক না কেন অনেক প্রাচীনকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
Leave a Reply