শশাঙ্ক মণ্ডল
প্রথম অধ্যায়
হাড়োয়ার খাসবালান্দা গ্রামের লালমসজিদে গুপ্তযুগের মূর্তিখোদিত প্রস্তরখণ্ডে নাভিপদ্মের চিহ্ন প্রত্নতাত্ত্বিকদের সামনে অনেক প্রশ্ন তুলে ধরে। নেপালের রাজদরবার থেকে বালান্দা মহাবিহারে চর্চিত পুঁথি আবিষ্কার করেছেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। এই বালান্দা মহাবিহারের ধংসাবশেষের ওপর লাল মসজিদ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- বালান্দা প্রত্নশালার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জব্বার সাহেব অনেকবার বলেছেন- তা অবশ্যই অনুসন্ধান করা উচিত।
হিঙ্গলগঞ্জের দক্ষিণে কালিন্দী নদীর পশ্চিমকূলে ১০১ নং লাটের বাঁকড়া কনকনগর গ্রামে মাটির নীচে প্রাপ্ত শিবলিঙ্গ ও মন্দিরের ভগ্নাংশ অনেক পুরনো দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বাঁকড়ার আরও দক্ষিণে বর্তমান বাংলাদেশের ডামরালি গ্রামের নবরত্ন মন্দির।বাংলাদেশের দক্ষিণে খুলনার শ্যামনগর থানার যশোর ঈশ্বরীপুরের কালীমন্দির যা মহারাজ প্রতাপাদিত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উড়িষ্যা থেকে প্রতাপাদিত্য যে গোবিন্দদেবের বিগ্রহ আনেন তা নানা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে নানারকম মামলা মোকদ্দমার ঝামেলা সহ্য করে প্রতাপাদিত্যের বংশধর বর্তমান বসিরহাট নিবাসী কচু রায়ের বংশধরদের কাছে আছে।
কিংবা বর্তমানে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত ভগ্নতোরণ অট্টালিকা সবকিছু সুদূর সভ্যতার ধূলিতবাহী।ডায়মন্ডহারবার মথুরাপুর থানার মণী নদীর পাড়ে ১১৬ নং লাটে ৯৬ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট জটার দেউল যার গায়ে তাম্রশাসনে সংস্কৃত ভাষায় লেখা ছিল- ৮৯৭ শকে এই দেউলটি জয়স্তচন্দ্র নামে জনৈক রাজার আদেশে নির্মিত। ইংরাজী হিসাবে জটার দেউলের প্রতিষ্ঠাকাল ৯৭৫ খ্রীষ্টাব্দ। আর্কিয়লজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ১৯২৭-২৮-এর প্রতিবেদনে বংলার অন্যতম প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং ভুবনেশ্বর মন্দিরের স্থাপত্যের সমগোত্রীয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
বসিরহাটের শাহী মসজিদ নিঃসন্দেহে সুন্দরবনাঞ্চলের এক প্রাচীন নিদর্শন। মসজিদের গায়ে আরবী অক্ষরে লেখা ছিল ধর্মপ্রাণ মুসলমান সভা কর্তৃক ১৪৬৬ খ্রীস্টাব্দে এই মসজিদ নির্মাণ করা হল। তখন বাংলার সুলতান রুকনুদ্দিন বারবাক শাহ। এরই পাশাপাশি রায়কোলার মসজিদ, অসংখ্য দিঘি, বাখের হাটের ষাট গম্বুজ, বিভিন্ন পীরগাজীদের আস্তানা- এই এলাকার প্রাচীন সভ্যতার পরিচয়বাহী।
Leave a Reply