মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
মাহমুদুল হক
‘তা থাকুক, সব কথা ফেরানো যায় না। এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে এই ঐক্যকে কাজে লাগাবার চেষ্টা করতে হবে।’
খোকা নিস্পৃহকণ্ঠে বললে, ‘ঐক্যটাকে এতো দাম দিচ্ছেন কেন, গোঁজামিল নেই, ফাঁক নেই এর ভিতর?’
‘হয়তো আছে, কিন্তু একে উড়িয়ে দেওয়া যায় না- খোকা বললে, ‘আপনি হুজুগেপনাকে ঐক্য ব’লে মনে করছেন। যুক্তফ্রন্টকে ভোট দেবার সময়ও এই হুজুগেপনা ছিলো, আয়ুব খান যেদিন প্রথম আসে স্টেডিয়ামের ভিড়ের কথা মনে আছে আপনার? এরা তো তারাই, সেই মানুষজনই।’
‘কথাটা ঠিক, কিন্তু একটা যুগ পার হ’য়ে গেছে এরপর। একথা ভুললে চলবে না। ঐক্যটা এবারে রাষ্ট্রবিপ্লবের চেহারা নিয়েছে, বলতে পারো আগুন ঘাঁটাঘাঁটি; ঘাড়ের উপরের মামদোরা কিভাবে এই চ্যালেঞ্জের মুকাবিলা করবে চিন্তার কথা সেটাই। খেয়াল করলে দেখবে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে যতো রকমেই দেশকে শাসন করা হ’য়ে থাকুক না কেন তার কোনোটাই কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলো না, সবসময় একটা সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা ছিলো তার ভিতর। এখনো আছে, পরেও থাকবে, ওরা চেষ্টা করবে রাখার–‘
রাজীব ভাই বালিশ টেনে নিয়ে আধশোয়া অবস্থায় বিছানায় কাত হ’লো। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবলো, তারপর বললে, ‘কিন্তু এখানেও কথা আছে। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কথা ভুললে চলবে না। ওরা যা কিছু করুক, যে মাস্টার প্ল্যানই থাকুক না কেন, ঐ অভ্যুত্থানকে সামনে রেখেই তার আলোকে সবকিছুর ব্যবস্থা নিতে হবে। ওর চেয়ে অনেক অর্থবহ, অনেক ভয়াবহ ধ’রে নিতে হবে এবারের দর কষাকষিকে! ওটা যদি একটা ধাপ হ’য়ে থাকে এটা দ্বিতীয় ধাপ। এখন মানুষজনের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি, তারা জেনে গেছে ইচ্ছে করলেই, ঐক্যবদ্ধ হ’লেই, তারা দেশের শাসনযন্ত্রকে একেবারে বিকল ক’রে দিতে পারে–‘
খোকা চ’টে উঠলো। সে বললে, ‘আপনি সংবাদপত্রের মতামতগুলোকে বোধহয় বেদবাক্য ভেবে মুখস্থ করেছেন–‘
‘কি রকম?’
‘সোজা কথা কাগজ না প’ড়ে নিজের মাথায় যা আসে তাই ভাবার চেষ্টা করবেন।’
‘কেন, কাগজপত্র তো ভালোই লিখছে–‘
‘ভালো মানে বেশ্যাবৃত্তি ক’রে যাচ্ছে, যা আগেও করেছে। কে বেশি
ক’রে গায়ের কাপড় খুলে নিজেকে দিতে তৈরি, ভালো কাগজ বলতে এই-ই।’
Leave a Reply