০৮:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
মোদি দিল্লির বিধ্বংসী বিস্ফোরণকে ‘চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করলেন সাংবিধানিক সংশোধনী বিল নিয়ে পাকিস্তান সংসদে ভোট, বিরোধীদের ওয়াকআউট ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি ১,১৩৯ জন এলএনজি আমদানিতে ঝুঁকির সতর্কতা: বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ আমদানি সুবিধা: রমজানের ১০ পণ্য সহজে আমদানির নির্দেশনা নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়: ব্রিটিশ এমপি বব ব্ল্যাকম্যান মিরপুরে শতাব্দী পরিবহনের বাসে আগুন লকডাউনে আতঙ্কের কিছু নেই: অর্থের বিনিময়ে স্লোগান দিচ্ছে রিকশাচালকরা পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন যান্ত্রিক ত্রুটিই কারণেই ঘটেছে, বলছে ডিএমপি সিলেটে মাহমুদুল-মোমিনুলের ব্যাটে বাংলাদেশের আধিপত্য

জীবন আমার বোন (পর্ব-৯২)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪
  • 19

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

রাজীব ভাই বললে, ‘আশ্চর্য তো, কালরাত্রে আমিও তাই বলছিলাম নীলাকে, ঘুমনো যায় না, মন হু হু করে। তার মানে মড়ক একটা লাগবেই। লাগবে নাই বা কেন, এতো আর সেই গান্ধীজীর অসহযোগ

আন্দোলন নয়–‘

খোকা তাচ্ছিল্যভরে বললে, ‘কাজ কোরো না, অপিসে যেও না, মাসকাবার হ’লেই যে যার মাইনে তুলে নাও, চেহারাটা ভালোই আন্দোলনের, এর নাম চূড়ান্ত পাগলামি–‘

‘তুমি কি ঠিক করলে শেষ পর্যন্ত, যাচ্ছো কোথাও?’

‘এখনো মনস্থির ক’রে উঠতে পারিনি–‘

‘একটা কিছু ঠিক ক’রে ফ্যালো সময় থাকতে; তেমন কোনো বিপাকে প’ড়ে গেলে দেখবে বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়েছে।’

‘পাবে কি এখনই পেয়েছে–‘

‘যদি গ্রামের দিকে যাও, তোমার নীলাভাবীকে সঙ্গে নিও!’

‘আর আপনারা?”

‘আমার পক্ষে সম্ভব নয় কোথাও নড়া। হাতপা বাঁধা আমার এখানে। তোমার সিদ্দিকাভাবী খুব সম্ভব আমার কথা মানবে না, কোথাও যেতে বললে যাবে না, ওর উপরে তেমন কোনো জোর নেই আমার, বুঝলে না!

খারাপটাই চিন্তা করা উচিত, তৈরি থাকা ভালো।’

‘আপনাদের ফেলে নীলাভাবী যেতে চাইবে?”

‘চাইবে না কেন? এ-তো তার ভালোর জন্যেই। অবশ্য অন্য কোথাও শুকে ভেড়ানো কঠিন, তুমি ব’লেই জোর দিয়ে বলছি।’

কোনো ইঙ্গিত আছে কি এ কথার ভিতর? ভিতরে ভিতরে খোকা কিছুটা নাড়া খেল। সে দীর্ঘ দৃষ্টিতে তাকায় রাজীব ভাইয়ের মুখের দিকে। খোলা জানালার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে রাজীব ভাই; শক্ত চোয়াল ও পুরু ঠোঁটে নির্বিকারত্ব; ঝুলকালির বিন্দুমাত্র ছোঁয়া লেগেছে ব’লে মনে হ’লো না খোকার।

খোকা একটা সিগ্রেট ধরালো। কিছুতেই স্বাভাবিকভাবে সে নিতে পারছিলো না প্রস্তাবটাকে। রাজীব ভাইয়ের এই শেষের কথাটির গায়ে সে উদাসীনতার গন্ধ পায়; তার অনুভূতি শির শির ক’রে ওঠে, গায়ে হল ফোটে। এই ঔদাসীন্যে শ্বাসরুদ্ধ হ’য়ে আছে একটি প্রবল দুপুর; এই দুপুরে তারা ছিটকিনি তুলে দিয়েছে দরোজার, ছিটকিনি খুলে দিয়েছে সংযমের; সংযম ডেকে এনেছে পৈশাচিকতাকে, পৈশাচিকতা কেশর ফুলিয়ে দুঃখকে, দুঃখ ক্যাকটাসের গায়ে গর্ভপাতের নারকী পুষ্পকে, দংশনে ঘর্ষণে পেষণে লেহনে কামদগ্ধ নিঃশ্বাসে ও চুম্বনে একটি একটি ক’রে পাপড়ি ঝ’রে পড়েছে পুষ্পের, পাপড়ি খ’সে পড়েছে পায়ের পাতায়, গালে গলায় কটিতটে, কাঁধে বাহুমূলে, নাভীমূলে, মর্মমূলে, আখিপল্লবে, অশ্রুর মুক্তাফলে, বদ্ধমুষ্টির শঙ্খে এবং শঙ্খ বের করেছে তার জিহ্বাকে, জিহ্বা সর্পকে, শ্বেতচন্দন কুক্কুম আর কাচপোকার টিপে নিজেকে সাজিয়েছে সর্প, কুক্কুম চন্দনকে নিরাপদ আশ্রয় ভেবে তার গায়ে এসে বসেছে দিব্য প্রজাপতি, শত সহস্র ফুলের নির্দোষ নির্মেঘ অবিচল বিস্মৃতি তার পাখায়–

খোকা দেখলো রাজীব ভাইকে, ভাবলেশহীন মুখে তাকিয়ে আছে একদিকে। ঝুরঝুর ক’রে ভেঙে পড়ে খোকা, টাল খায়। ভিতরে ভিতরে সে মাছি তাড়ানো মনের আলগা রাশকে ক’ষে ধরতে চেষ্টা করে; কিন্তু পেরে ওঠে না, বিফল হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

মোদি দিল্লির বিধ্বংসী বিস্ফোরণকে ‘চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করলেন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৯২)

১২:০০:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

রাজীব ভাই বললে, ‘আশ্চর্য তো, কালরাত্রে আমিও তাই বলছিলাম নীলাকে, ঘুমনো যায় না, মন হু হু করে। তার মানে মড়ক একটা লাগবেই। লাগবে নাই বা কেন, এতো আর সেই গান্ধীজীর অসহযোগ

আন্দোলন নয়–‘

খোকা তাচ্ছিল্যভরে বললে, ‘কাজ কোরো না, অপিসে যেও না, মাসকাবার হ’লেই যে যার মাইনে তুলে নাও, চেহারাটা ভালোই আন্দোলনের, এর নাম চূড়ান্ত পাগলামি–‘

‘তুমি কি ঠিক করলে শেষ পর্যন্ত, যাচ্ছো কোথাও?’

‘এখনো মনস্থির ক’রে উঠতে পারিনি–‘

‘একটা কিছু ঠিক ক’রে ফ্যালো সময় থাকতে; তেমন কোনো বিপাকে প’ড়ে গেলে দেখবে বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়েছে।’

‘পাবে কি এখনই পেয়েছে–‘

‘যদি গ্রামের দিকে যাও, তোমার নীলাভাবীকে সঙ্গে নিও!’

‘আর আপনারা?”

‘আমার পক্ষে সম্ভব নয় কোথাও নড়া। হাতপা বাঁধা আমার এখানে। তোমার সিদ্দিকাভাবী খুব সম্ভব আমার কথা মানবে না, কোথাও যেতে বললে যাবে না, ওর উপরে তেমন কোনো জোর নেই আমার, বুঝলে না!

খারাপটাই চিন্তা করা উচিত, তৈরি থাকা ভালো।’

‘আপনাদের ফেলে নীলাভাবী যেতে চাইবে?”

‘চাইবে না কেন? এ-তো তার ভালোর জন্যেই। অবশ্য অন্য কোথাও শুকে ভেড়ানো কঠিন, তুমি ব’লেই জোর দিয়ে বলছি।’

কোনো ইঙ্গিত আছে কি এ কথার ভিতর? ভিতরে ভিতরে খোকা কিছুটা নাড়া খেল। সে দীর্ঘ দৃষ্টিতে তাকায় রাজীব ভাইয়ের মুখের দিকে। খোলা জানালার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে রাজীব ভাই; শক্ত চোয়াল ও পুরু ঠোঁটে নির্বিকারত্ব; ঝুলকালির বিন্দুমাত্র ছোঁয়া লেগেছে ব’লে মনে হ’লো না খোকার।

খোকা একটা সিগ্রেট ধরালো। কিছুতেই স্বাভাবিকভাবে সে নিতে পারছিলো না প্রস্তাবটাকে। রাজীব ভাইয়ের এই শেষের কথাটির গায়ে সে উদাসীনতার গন্ধ পায়; তার অনুভূতি শির শির ক’রে ওঠে, গায়ে হল ফোটে। এই ঔদাসীন্যে শ্বাসরুদ্ধ হ’য়ে আছে একটি প্রবল দুপুর; এই দুপুরে তারা ছিটকিনি তুলে দিয়েছে দরোজার, ছিটকিনি খুলে দিয়েছে সংযমের; সংযম ডেকে এনেছে পৈশাচিকতাকে, পৈশাচিকতা কেশর ফুলিয়ে দুঃখকে, দুঃখ ক্যাকটাসের গায়ে গর্ভপাতের নারকী পুষ্পকে, দংশনে ঘর্ষণে পেষণে লেহনে কামদগ্ধ নিঃশ্বাসে ও চুম্বনে একটি একটি ক’রে পাপড়ি ঝ’রে পড়েছে পুষ্পের, পাপড়ি খ’সে পড়েছে পায়ের পাতায়, গালে গলায় কটিতটে, কাঁধে বাহুমূলে, নাভীমূলে, মর্মমূলে, আখিপল্লবে, অশ্রুর মুক্তাফলে, বদ্ধমুষ্টির শঙ্খে এবং শঙ্খ বের করেছে তার জিহ্বাকে, জিহ্বা সর্পকে, শ্বেতচন্দন কুক্কুম আর কাচপোকার টিপে নিজেকে সাজিয়েছে সর্প, কুক্কুম চন্দনকে নিরাপদ আশ্রয় ভেবে তার গায়ে এসে বসেছে দিব্য প্রজাপতি, শত সহস্র ফুলের নির্দোষ নির্মেঘ অবিচল বিস্মৃতি তার পাখায়–

খোকা দেখলো রাজীব ভাইকে, ভাবলেশহীন মুখে তাকিয়ে আছে একদিকে। ঝুরঝুর ক’রে ভেঙে পড়ে খোকা, টাল খায়। ভিতরে ভিতরে সে মাছি তাড়ানো মনের আলগা রাশকে ক’ষে ধরতে চেষ্টা করে; কিন্তু পেরে ওঠে না, বিফল হয়।