মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
মাহমুদুল হক
প্রতিবারই এরকম হয় খোকার। মনে হয় সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে সে, একটি খল দুপুর হাহা ক’রে ওঠে তার সামনে, সে আর তখন পালাবার পথ খুঁজে পায় না। তার অসহায়তার মর্মমূলে এক ঐন্দ্রজালিক অপচ্ছায়ার প্রসারণে উৎসমুখ খুলে যায় স্বপ্নের; অর্গলবন্ধ একটি কামরার ভিতরে ছোটাছুটি করতে থাকে সে, ডাঙা কই, আবা আবা, আমাকে ছুঁয়ো না, আবা আবা, আমাকে ধ’রো না, আমি তোমার জলকে নামিনি, আমি রেডি বলিনি, আবাবা, তুমি চু ছেড়েছো, তোমার চু ভেঙে গেছে, তোমার নীলসুতো ছিঁড়ে গিয়েছে চুয়ের, তোমার তার কেটে গিয়েছে চুয়ের, পাখনা ঝ’রে গিয়েছে তোমার চুয়ের, আবা আবা–
এইভাবে বুড়ি ছোঁয়ার চেষ্টা করে খোকা, বুড়ি খোঁজে। ডাঙা খোঁজে।
ভিতরে এতো পাঁক, গা ঘিন ঘিন করে খোকার, মরা গুগলির খোল আর পচা খড়কে, কুটিকাটি, ভাঙা কলসির কানা, ভাঙা কাচ, নীলা- ভাবীর হিলহিলে পিচ্ছিল হাসি; তার কপাল বেয়ে দরদর ক’রে ঘাম গড়ায়!
‘কি ভাবছো?’
রাজীব ভাই স্থির দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে।
‘না তেমন কিছু না–‘
‘মনে হচ্ছে সমস্যায় ফেলে দিয়েছি তোমাকে।’
‘সমস্যা মনে করলেই সমস্যা!’ এড়ানোর চেষ্টা করে খোকা।
এই সময় নীলাভাবী ঘরে ঢুকলো, পিছনে রজু। তরমুজের প্লেট এগিয়ে দিলো নীলাভাবী।
রাজীব ভাই বললে, ‘ঠিক যেন টুমেলিন। তোমাকে দেখাবো। আশ্চর্য মিল!’
একটু পরে পরে সুটকেস খুলে একটা পাথরের চাকলা বের করলো রাজীব ভাই। বললে, ‘এই দ্যাখো, তরমুজের মতো টুর্মেলিন। উপরটা সবুজ, তারপর সাদা, তারপর কেমন লালচে। এক সিংহলীর কাছ থেকে জোগাড় করেছিলাম বছর দশেক আগে। সবচেয়ে তাজ্জব কথা কি জানো?’ একটু থেমে রাজীব ভাই বললে, ‘এই এতোদিন পর হঠাৎ আপনা-আপনিই চিড় খেতে শুরু করেছে, সারমর্মটা বুঝলাম না–‘
খোকা জিগ্যেশ করলে, ‘এই নিয়ে ভেবেছেন কিছু?’
Leave a Reply