পিওতর মান্তেইফেল
সূর্য-স্নান
সবাই নিশ্চয় জানে যে কোনো স্তন্যপায়ী জীবই ভালো বাড়তে পারে না রোদ ছাড়া। তাহলে ব্যাজার বা খটাশের মতো জন্তুরা, যারা সব সময় থাকে অন্ধকার গর্তে, শিকার ধরতে বেরয় কেবল সূর্যাস্তের পর, তারা তাদের বাচ্চা মানুষ করে কীভাবে? তাদের ভূগর্ভ ফ্ল্যাটে তো জানলা নেই, অথচ খটাশ-ছানাদের নিশ্চয় দরকার রোদ।
প্রশ্নটায় আগ্রহী হই আমরা। চিড়িয়াখানার কিশোর জীববিদদের একটা দল খটাশের গর্তের মুখ থেকে একটু দূরে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ চালায় ও ব্যাপারটা বার করে।

দেখা গেল যে দিনটা পরিষ্কার থাকলে খটাশ রোজ ভোরে ছানাগুলোকে তাজা হাওয়ায় নিয়ে আসে। সন্তর্পণে দাঁতে কামড়ে সে ছানাগুলোকে রাখে রোদের কাছে। কিন্তু কখনোই সরাসরি রোদে নয়, সর্বদাই ঝোপের তলে কিংবা গাছের নিচে, যেখানে পাতার ফাঁক দিয়ে রোদের ছোপ এসে পড়ে।
সবকিছুই ভালো কেবল একটা মাত্রার মধ্যে। সূর্য-স্নানের পক্ষে সেটা আরো সত্যি। চোখ-না-ফোটা বাচ্চাগুলো চে’চাতে শুরু করলেই খটাশ-মা তাদের তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে আনত গর্তে। তখন খুবই ব্যস্ততা দেখা যেত তার, প্রায়ই একটার বদলে দুটো করে বাচ্চা বইত সে।
এই ব্যস্ততা মোটেই অনাবশ্যক নয়। অন্ধকারে থাকতে অভ্যস্ত জন্তুদের বেলায় মারাত্মক সর্দিগর্মি হয় কম নয়। খাঁচা থেকে প্রথম রোদে নিয়ে আসায় একবার চিড়িয়াখানায় এমনি সর্দি’গমিতে মারা যায় দুটো অল্পবয়সী বাঘের বাচ্চা। একই পরিণতি হয় সারা শাঁত আধা-অন্ধকারে কাটানো উস্তিতি বানর, আফ্রিকান তক্ষক, এমনকি বিশালাকার ভারান সরীস্প।

প্রাণীদের রোদ দরকার, তবে তার অপব্যবহার খুবই বিপজ্জনক; তাতে অভ্যস্ত হতে হয়, অর্থাৎ চামড়ার ন্যাড়া জায়গাগুলোকে রোদ-পোড়া করা দরকার। তাতে গড়ে ওঠে এক ধরনের আলোক-ফিলটার, অতি-বেগুনী কিরণ সমেত অন্যান্য রশ্মি তা প্রবেশ করতে দেয় মাত্রানুযায়ী।
বাচ্চাদের নিয়ে খটাশ-মা যা করে, তাতে ঠিক সেই মাত্রার সূর্যালোকের ব্যবস্থা হয়, যা তাদের প্রাণ বা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়। এ অভ্যাসটা তাদের গড়ে উঠেছে স্বাভাবিক নির্বাচনে, সবচেয়ে মানিয়ে নিতে-পারাদের টিকে থাকার প্রক্রিয়ায়।
Sarakhon Report 



















