১১:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৪৬)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪
  • 19

শ্রী নিখিলনাথ রায়

সিরাজ মুর্শিদাবাদ রক্ষা করিতে ইচ্ছা করিলে, -মীরজাফর সিরাজের প্রাসাদ আক্রমণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ইংরেজদিগকে সাহায্য ও সিরাজকে বন্দী করিয়া তাঁহাদের হস্তে অর্পণ করিতে প্রতিজ্ঞা করেন। পরে কোরান ও মীরণের মস্তক স্পর্শ করিয়া, সন্ধির সমস্ত সর্ত্ত পালন করিতে অঙ্গীকার করিয়াছিলেন। তাহার পর পলাশীর যুদ্ধশেষে সিরাজ রাজমহলের নিকট হইতে ধৃত হইয়া মুর্শিদাবাদে নীত হইলে, জাফরাগঞ্জের প্রাসাদেই হত হন।। যে গৃহে তাঁহাকে বন্দী করিয়া রাখা হইয়াছিল, সেই গৃহ মধ্যে মহম্মদী বেগের তরবারির আঘাতে তাঁহার দেহ খণ্ড-বিখণ্ডিত হইয়া যায়।

সিরাজের রক্তে জাফরাগঞ্জের যে গৃহ রঞ্জিত হইয়াছিল, এক্ষণে তাহা ভূমিসাৎ হইয়াছে, তাহার কোনই চিহ্ন নাই। সেই খানে একটি প্রকাণ্ড নিম্ববৃক্ষ জন্মগ্রহণ করিয়া ছিল, এক্ষণে তাহা পড়িয়া গিয়াছে। কয়েক বৎসর পূর্ব্বে সেই গৃহের কিছু কিছু ভগ্নাবশেষ নিম্ববৃক্ষের নিকট দেখা যাইত; এক্ষণে সে স্থান তৃণাচ্ছাদিত সমতল-ভূমি। সে স্থানটিকে অদ্যাপি প্রাচীরবেষ্টিত করিয়া রাখা হইয়াছে। তথায় কতকগুলি বৃক্ষ জন্মগ্রহণ করিয়া তাহাকে একটি ক্ষুদ্র বাগানের ন্যায় করিয়া তুলিয়াছে। সেই স্থানে দুই একটি গৃহের ভিত্তি দেখা যায়। কিন্তু সিরাজের বধ্যগৃহের কোনই চিহ্ন নাই।

সেই সমস্ত ভিত্তি দেখিয়া বোধ হয়, তথায় কতকগুলি গৃহ ছিল; এক্ষণে ভূমিসাৎ হওয়ায়, তাহাদের স্থানে দুই চারিটি বৃক্ষ জন্মগ্রহণ করিয়াছে। সিরাজের বধ্যভূমি জাফরাগঞ্জ প্রাসাদের উত্তর পূর্ব্ব কোণে। উক্ত স্থানটিকে বিশেষ করিয়া দেখিতে হইলে, জাফরাগঞ্জ প্রাসাদভবনে প্রবেশ করিতে হয়। জাফরাগঞ্জের প্রাসাদে মীরণের বংশধরগণ অদ্যাপি বাস করিতেছেন। প্রাচীন দরবারগৃহ এমামবারায় পরিণত হইয়াছে; কিন্তু মহলসরা অস্থাপি বিদ্ধমান আছে। জাফরাগঞ্জের নবাবেরা গবর্ণমেন্টের নিকট হইতে বাৎসরিক ৬০ হাজার টাকা বৃত্তি পাইতেন।

মীরণ বিহারে শাহজাদা আলিগওহরের (পরে বাদশাহ শাহ আলম) সহিত যুদ্ধ করিতে গিয়া প্রান্তরমধ্যে বজ্রাঘাতে নিহত হন। মুতাক্ষরীনকার লিখিয়াছেন যে, মীরণের আদেশে সিরাজের মাতা আমিনা ও মাতৃঘসা ঘসেটা বেগম জলমগ্ন হওয়ায়, তাঁহারা মৃত্যুকালে মীরণকে বজ্রাঘাতে প্রাণপরিত্যাগের জন্ম অভিসম্পাত করিয়া যান। সেই জন্য অনুমান করা হয় যে, মীরণের বজ্রাঘাতেই মৃত্যু হইয়াছিল। কিন্তু মীরণের মৃত্যু সন্দেহজনক বলিয়া তৎকালে অনেকের মনে ধারণা হইয়াছিল। মীরণের মনে স্বাধীনতার ইচ্ছা বলবতী হওয়ায়, পুণ্য-শ্লোক ব্রিটিশপুঙ্গবগণ মীরকাশেমের সাহায্যে তাঁহাকে না কি কৌশল-পূর্ব্বক নিহত করিয়াছিলেন। পরে, বজ্রাঘাতে মৃত্যু বলিয়া প্রকাশ করা হয়!

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৪৬)

১১:০০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

সিরাজ মুর্শিদাবাদ রক্ষা করিতে ইচ্ছা করিলে, -মীরজাফর সিরাজের প্রাসাদ আক্রমণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ইংরেজদিগকে সাহায্য ও সিরাজকে বন্দী করিয়া তাঁহাদের হস্তে অর্পণ করিতে প্রতিজ্ঞা করেন। পরে কোরান ও মীরণের মস্তক স্পর্শ করিয়া, সন্ধির সমস্ত সর্ত্ত পালন করিতে অঙ্গীকার করিয়াছিলেন। তাহার পর পলাশীর যুদ্ধশেষে সিরাজ রাজমহলের নিকট হইতে ধৃত হইয়া মুর্শিদাবাদে নীত হইলে, জাফরাগঞ্জের প্রাসাদেই হত হন।। যে গৃহে তাঁহাকে বন্দী করিয়া রাখা হইয়াছিল, সেই গৃহ মধ্যে মহম্মদী বেগের তরবারির আঘাতে তাঁহার দেহ খণ্ড-বিখণ্ডিত হইয়া যায়।

সিরাজের রক্তে জাফরাগঞ্জের যে গৃহ রঞ্জিত হইয়াছিল, এক্ষণে তাহা ভূমিসাৎ হইয়াছে, তাহার কোনই চিহ্ন নাই। সেই খানে একটি প্রকাণ্ড নিম্ববৃক্ষ জন্মগ্রহণ করিয়া ছিল, এক্ষণে তাহা পড়িয়া গিয়াছে। কয়েক বৎসর পূর্ব্বে সেই গৃহের কিছু কিছু ভগ্নাবশেষ নিম্ববৃক্ষের নিকট দেখা যাইত; এক্ষণে সে স্থান তৃণাচ্ছাদিত সমতল-ভূমি। সে স্থানটিকে অদ্যাপি প্রাচীরবেষ্টিত করিয়া রাখা হইয়াছে। তথায় কতকগুলি বৃক্ষ জন্মগ্রহণ করিয়া তাহাকে একটি ক্ষুদ্র বাগানের ন্যায় করিয়া তুলিয়াছে। সেই স্থানে দুই একটি গৃহের ভিত্তি দেখা যায়। কিন্তু সিরাজের বধ্যগৃহের কোনই চিহ্ন নাই।

সেই সমস্ত ভিত্তি দেখিয়া বোধ হয়, তথায় কতকগুলি গৃহ ছিল; এক্ষণে ভূমিসাৎ হওয়ায়, তাহাদের স্থানে দুই চারিটি বৃক্ষ জন্মগ্রহণ করিয়াছে। সিরাজের বধ্যভূমি জাফরাগঞ্জ প্রাসাদের উত্তর পূর্ব্ব কোণে। উক্ত স্থানটিকে বিশেষ করিয়া দেখিতে হইলে, জাফরাগঞ্জ প্রাসাদভবনে প্রবেশ করিতে হয়। জাফরাগঞ্জের প্রাসাদে মীরণের বংশধরগণ অদ্যাপি বাস করিতেছেন। প্রাচীন দরবারগৃহ এমামবারায় পরিণত হইয়াছে; কিন্তু মহলসরা অস্থাপি বিদ্ধমান আছে। জাফরাগঞ্জের নবাবেরা গবর্ণমেন্টের নিকট হইতে বাৎসরিক ৬০ হাজার টাকা বৃত্তি পাইতেন।

মীরণ বিহারে শাহজাদা আলিগওহরের (পরে বাদশাহ শাহ আলম) সহিত যুদ্ধ করিতে গিয়া প্রান্তরমধ্যে বজ্রাঘাতে নিহত হন। মুতাক্ষরীনকার লিখিয়াছেন যে, মীরণের আদেশে সিরাজের মাতা আমিনা ও মাতৃঘসা ঘসেটা বেগম জলমগ্ন হওয়ায়, তাঁহারা মৃত্যুকালে মীরণকে বজ্রাঘাতে প্রাণপরিত্যাগের জন্ম অভিসম্পাত করিয়া যান। সেই জন্য অনুমান করা হয় যে, মীরণের বজ্রাঘাতেই মৃত্যু হইয়াছিল। কিন্তু মীরণের মৃত্যু সন্দেহজনক বলিয়া তৎকালে অনেকের মনে ধারণা হইয়াছিল। মীরণের মনে স্বাধীনতার ইচ্ছা বলবতী হওয়ায়, পুণ্য-শ্লোক ব্রিটিশপুঙ্গবগণ মীরকাশেমের সাহায্যে তাঁহাকে না কি কৌশল-পূর্ব্বক নিহত করিয়াছিলেন। পরে, বজ্রাঘাতে মৃত্যু বলিয়া প্রকাশ করা হয়!