শ্রী নিখিলনাথ রায়
মীরজাফর মসনদে বসিবার পূর্ব্বে জাফরা- গঞ্জেই অবস্থিতি করিতেন। তাঁহার নামানুসারে, অথবা মুর্শিদাবাদের স্থাপয়িতা মুর্শিদকুলী জাফর খাঁর নামানুসারে অথবা অন্য কাহারও নামানুসারে জাফরাগঞ্জের নামকরণ হইয়াছে, তাহা বলিতে পারা যায় না। জাফরাগঞ্জের নবাববংশীয়া এক্ষণে যে প্রাসাদে বাস করিতেছেন, সেই প্রাসাদই মীরজাফরের বাসস্থান ছিল। জাফর আলি খাঁ নবাব হইয়া প্রথমতঃ সিরাজ উদ্দৌলার হীরাঝিলে বা মনসুরগঞ্জের প্রাসাদে বাস করিয়াছিলেন; পরে মুর্শিদাবাদ কেল্লামধ্যে আলিবর্দী খাঁর প্রাসাদে আসিয়া বাস করেন।
নবাব হইয়া তিনি স্বীয় জ্যেষ্ঠপুত্র মীরণকে জাফরাগঞ্জের প্রাসাদ প্রদান করেন। তদবধি মীরণের বংশধরেরা জাফরাগঞ্জের প্রাসাদেই বাস করিতেছেন। জাফরাগঞ্জ, মুর্শিদাবাদনগরের মধ্যস্থলে অবস্থিত। অর্ম্মে সাহেব মীরজাফরের প্রাসাদকে তৎকালীন মুর্শিদাবাদের দক্ষিণ- সীমার শেষ প্রান্তে অবস্থিত বলিয়া উল্লেখ করিয়াছিলেন। কিন্তু মুতাক্ষরীনকার মীরজাফরের জাফরাগঞ্জে বাস করার কথা লিখিয়াছেন। অর্থে মীরজাফরের প্রাসাদকে যখন হীরাঝিলের পরপারে ‘বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন, তখন তাহা জাফরাগঞ্জেই অবস্থিত বুঝা যাইতেছে।
জাফরা- গঞ্জ অষ্টাদশ শতাব্দীর মুর্শিদাবাদের মধ্যস্থলেই ছিল,-দক্ষিণ সীমার শেষ প্রান্তে নহে। রেনেলের কাশীমবাজার দ্বীপের মানচিত্রে অষ্টাদশ শতাব্দীর মুর্শিদাবাদকে ভাগীরথীর পূর্ব্ব তীরে মোতিঝিলের উত্তর হইতে সাধকবাগ পর্যন্ত ও পশ্চিম তীরে খোশবাগ হইতে বড় নগরের নিকট পর্যন্ত বিস্তৃত করিয়া অঙ্কিত করা হইয়াছে। সুতরাং তৎকালে জাফরাগঞ্জ যে মুর্শিদাবাদের মধ্যস্থলেই ছিল, তাহাতে সন্দেহ করার কোনই কারণ -নাই এবং মীরজাফর যে জাফরাগঞ্জেই বাস করিতেন, তাহারও স্পষ্ট। প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে।
পূর্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, জাফরাগঞ্জের প্রাসাদেই সিরাজের হত্যা- কাণ্ড সম্পাদিত হয়। কেবল তাহাই নহে, পলাশীযুদ্ধের পূর্ব্বে ইংরেজ- দিগের যে গুপ্তসন্ধি হয়, জাফরাগঞ্জের প্রাসাদেই মীরজাফর শপথপূর্ব্বক তাহা প্রতিপালন করিতে স্বীকৃত হন। কাশীমবাজার কুঠীর অধ্যক্ষ ওয়াট্ট্স সাহেব ‘সিরাজের ভয়ে স্ত্রীলোকদিগের ‘বহনোপযোগী স্মাবৃত শিবিকায় আরোহণ করিয়া একেবারে জাফরাগঞ্জের প্রাসাদের অন্তঃপুর- মধ্যে প্রবেশ করেন। মীরজাফর ও মীরণ তাঁহাকে অভ্যর্থনা করিয়া, একটি কক্ষ মধ্যে লইয়া যান; তথায় মীরজাফর ইংরেজদিগকে সাহায্য করিতে প্রতিশ্রুত হন।
Leave a Reply