শ্রী নিখিলনাথ রায়
নজম উদ্দৌলা মীরজাফরের জীবিত পুত্রগণের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন এবং মুসলমান ব্যবহারশাস্ত্রানুসারে তিনিই মীরজাফরের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। কারণ, মুসলমান নিয়মানুসারে পিতামহ বর্তমানে পিতার মৃত্যু হইলে এবং পিতৃব্য জীবিত থাকিলে, পৌত্রেরা পিতামহের উত্তরাধিকারী হইতে পারেন না। নজম উদ্দৌলা স্বীয় জননী মণিবেগম কর্তৃক মীর ফুলুরী নামে অভিহিত হইতেন। নজম উদ্দৌলা যে সময়ে গর্ভমধ্যে ছিলেন, সে সময়ে তদীয় মাতা মণিবেগমের ফুলুরী খাইবার ইচ্ছা হওয়ায়, ফুলুরীর দ্বারা সময়ে সময়ে তাঁহার দোহদক্রিয়া সম্পন্ন হইত; এই জন্য নজম উদ্দৌলা ভূমিষ্ঠ হইলে, মাতা তাঁহাকে মীর ফুলুরী আখ্যা প্রদান করেন।
নজম উদ্দৌলা নিজামতী পাইয়া নন্দকুমারকে দেওয়ান করিবার- জন্য প্রার্থনা করিয়াছিলেন; কিন্তু কলিকাতা কাউন্সিলের সভ্যেরা নন্দ- কুমারের প্রতি ঘোরতর অসন্তুষ্ট থাকায়, তাঁহার আবেদন অগ্রান্ত করেন এবং মহম্মদ রেজা খাঁকে নায়েব সুবা নিযুক্ত করিয়া, রায়দুর্লভ ও জগৎশেঠ প্রভৃতির পরামর্শে তাঁহাকে কার্য্য করিতে অনুরোধ করিয়া- ছিলেন। নজম উদ্দৌলার সময়ই ১৭৬৫ খৃঃ অব্দের ১২ই আগষ্ট তারিখে ক্লাইব বাদশাহ শাহ আলমের নিকট হইতে কোম্পানীর জন্য দেওয়ানী গ্রহণ করেন। সেই সময়ে নবাব নাজিমের জন্য ৫৩,৮৬,১৩১৪/০ বাৎসরিক বৃত্তি নিদ্দিষ্ট হয়।
তন্মধ্যে ১৭,৭৮,৮৫৪/ নবাবের নিজ ব্যর ও অবশিষ্ট সৈন্য ও বরকন্দাজ প্রভৃতির জন্য নির্দেশ করিয়া দেওয় হইয়াছিল। ক্লাইব নজম উদ্দৌলার সহিত মোতিঝিলে কোম্পানীর প্রথম পুণ্যাহ করিয়াছিলেন। ইহার কিছুদিন পরেই হিজরী ১১৭৯ অব্দের ২৪ শে জেব্দ (১৭৬৬ খৃঃ অব্দের ৮ই মে) নজম উদ্দৌলা উদরমধ্যে ভয়ানক যন্ত্রণা অনুভব করিয়া প্রাণ পরিত্যাগ করেন। নজম উদ্দৌলার পরে উক্ত বংশীয় তৃতীয় নবাব-নাজিম সৈফ উদ্দৌলা বা মীর কানাইয়ার সমাধি। সৈফ উদ্দৌলা নজম উদ্দৌলার সহোদর ভ্রাতা এবং মীরজাফর ও মণিবেগমের পুত্র।
সৈফ উদ্দৌলার সময় নিজামত বৃত্তি ৪১,৮৬, ১৩১ টাকায় নিদ্দিষ্ট হয়। সৈফ উদ্দৌলার সহিত উপবিষ্ট হইয়া গবর্ণর ভেলেষ্ট মোতিঝিলে পুণ্যাহক্রিয়া সম্পন্ন করিয়াছিলেন। যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও মহামারীতে বঙ্গভূমি শ্মশানে পরিণত হইয়া উঠে, সেই ছিয়াত্তরে মন্বন্তরের সময় হিজরী ১১৮৫ অব্দের জেলহজ্জ মাসে (১৭৭০ খৃঃ অব্দে) সৈফ উদ্দৌলা বসন্ত রোগে আক্রান্ত হইয়া প্রাণ বিসর্জন দেন। সৈফ উদ্দৌলার পশ্চিমে মীরজাফরের আর এক পুত্র আস্রফ আলি খাঁর সমাধি। তাঁহার পরই চতুর্থ নবাব-নাজিম মোবারক উদ্দৌলা নিদ্রিত।
Leave a Reply