০৯:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৪) মোদি দিল্লির বিধ্বংসী বিস্ফোরণকে ‘চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করলেন সাংবিধানিক সংশোধনী বিল নিয়ে পাকিস্তান সংসদে ভোট, বিরোধীদের ওয়াকআউট ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি ১,১৩৯ জন এলএনজি আমদানিতে ঝুঁকির সতর্কতা: বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ আমদানি সুবিধা: রমজানের ১০ পণ্য সহজে আমদানির নির্দেশনা নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়: ব্রিটিশ এমপি বব ব্ল্যাকম্যান মিরপুরে শতাব্দী পরিবহনের বাসে আগুন লকডাউনে আতঙ্কের কিছু নেই: অর্থের বিনিময়ে স্লোগান দিচ্ছে রিকশাচালকরা পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন যান্ত্রিক ত্রুটিই কারণেই ঘটেছে, বলছে ডিএমপি

জীবন আমার বোন (পর্ব-৯৫)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 62

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

একটা গালভরা বুলি, লাশটানা খাটিয়া। এইসব দেখতে দেখতে আমি বিষিয়ে উঠেছি, শুধু আসবাবপত্র; মরা কাঠ, মরা লোহা, মরা কাচ, শাড়ি কাপড়ের গাঁটরি-বোঁচকা, ঝাড়ু মারি আমি এসবে। দিনের পর দিন নিজেকে ফতুর ক’রে কেবল এইটুকু বুঝেছি মানুষ সংসার পাতে শুধু চার হাত-পায়ে ভালবাসাকে মারতে। শুধু চুলোচুলি, খুন-খারাবি, ছুরি মারামারি, অথচ তুমি বলতে পারবে না, বলার নিয়ম নেই। সাজসজ্জা ক’রে ঢেকে রাখো। শুধু এই একটা কৌশল শেখার জন্যেই দিনের পর দিন রক্ত পানি করো, কি ক’রে এসব ঢেকে রাখবে, লোকচক্ষুকে ফাঁকি দেবে।’ খোকা বললে, ‘ঠিক আছে, এখন তুমি যাও–‘ তার ভয় ছিলো যেকোনো মুহূর্তে রাজীব ভাই অথবা রঞ্জু এসে পড়বে এবং সে বিপদে প’ড়ে যাবে।

এই প্রথম খোকা দেখলো নীলাভাবীকে হতাশায় ভেঙে পড়তে। একটু একটু ক’রে গাঁথুনি ধসে পড়ছে ভিতরের, রুগ্‌ণ মানুষের চেহারা এখন নীলাভাবীর। তা হোক, ঘোলা আর জটিল প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করার মতো মানসিক স্থৈর্য খোকার এখন নেই।

এক সময় রঞ্জুকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয় সে। বেবিট্যাক্সিতে ব’সে দু’পাশের অপসৃয়মান গাছপালা আর মানুষজন দেখতে দেখতে ভবিষ্যতের কথা ভাবতে থাকে। অরণ্যে যেভাবে অতর্কিতে প্রেতায়িত অন্ধকার নামে, মনের মধ্যে সেইভাবে রাত্রি নেমে আসে ঝপ ক’রে। অন্ধকারে কুটিল বনাঞ্চলে পথ হারিয়ে ফ্যালে সে, জটিলতা কখনো বাঘ হ’য়ে কখনো পাইথন হ’য়ে ক্রমাগত তার দিকে ধেয়ে আসতে থাকে।

একসময় আবার ভর করে নীলাভাবী।

এক অদ্ভুত প্রস্তাব! খুব সহজে নিতে পারে না খোকা, আকুলতার চেয়ে আতিশয্যই বেশি এর ভিতর। যদি ট্র্যাপ হয়, জাঁহাবাজ মেয়েমানুষের পাল্লায় প’ড়ে কত ছোকরাই তো ফেঁসে গেল। নাকি সাপের মতো পাকে পাকে তাকে জড়াতে চায় কোনো কদর্য অভীষ্ট সিদ্ধির অভিপ্রায়ে। একদিনের একটি দুর্বল মুহূর্তকে মূলধন ক’রে স্বেচ্ছাচারিতায় মেতে উঠেছে নীলাভাবী; তার ধ্যান-ধারণার স্বাস্থ্য এইভাবে আচ্ছন্ন হ’য়ে আছে। নীলাভাবী হয়তো নিজের ঠুনকো বিশ্বাসকে এইভাবে দৃঢ় করেছে, তার শরীরের মতো লোভনীয় খোকার কাছে আর কিছুই নেই। কামগন্ধী স্খলনের পিচ্ছিল দুপুরকে মুঠোয় ভ’রে আত্মবিশ্বাসের গজদন্ত মিনারকে গগনচুম্বী ক’রে তুলছে নীলাভাবী।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৪)

জীবন আমার বোন (পর্ব-৯৫)

১২:০০:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

একটা গালভরা বুলি, লাশটানা খাটিয়া। এইসব দেখতে দেখতে আমি বিষিয়ে উঠেছি, শুধু আসবাবপত্র; মরা কাঠ, মরা লোহা, মরা কাচ, শাড়ি কাপড়ের গাঁটরি-বোঁচকা, ঝাড়ু মারি আমি এসবে। দিনের পর দিন নিজেকে ফতুর ক’রে কেবল এইটুকু বুঝেছি মানুষ সংসার পাতে শুধু চার হাত-পায়ে ভালবাসাকে মারতে। শুধু চুলোচুলি, খুন-খারাবি, ছুরি মারামারি, অথচ তুমি বলতে পারবে না, বলার নিয়ম নেই। সাজসজ্জা ক’রে ঢেকে রাখো। শুধু এই একটা কৌশল শেখার জন্যেই দিনের পর দিন রক্ত পানি করো, কি ক’রে এসব ঢেকে রাখবে, লোকচক্ষুকে ফাঁকি দেবে।’ খোকা বললে, ‘ঠিক আছে, এখন তুমি যাও–‘ তার ভয় ছিলো যেকোনো মুহূর্তে রাজীব ভাই অথবা রঞ্জু এসে পড়বে এবং সে বিপদে প’ড়ে যাবে।

এই প্রথম খোকা দেখলো নীলাভাবীকে হতাশায় ভেঙে পড়তে। একটু একটু ক’রে গাঁথুনি ধসে পড়ছে ভিতরের, রুগ্‌ণ মানুষের চেহারা এখন নীলাভাবীর। তা হোক, ঘোলা আর জটিল প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করার মতো মানসিক স্থৈর্য খোকার এখন নেই।

এক সময় রঞ্জুকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয় সে। বেবিট্যাক্সিতে ব’সে দু’পাশের অপসৃয়মান গাছপালা আর মানুষজন দেখতে দেখতে ভবিষ্যতের কথা ভাবতে থাকে। অরণ্যে যেভাবে অতর্কিতে প্রেতায়িত অন্ধকার নামে, মনের মধ্যে সেইভাবে রাত্রি নেমে আসে ঝপ ক’রে। অন্ধকারে কুটিল বনাঞ্চলে পথ হারিয়ে ফ্যালে সে, জটিলতা কখনো বাঘ হ’য়ে কখনো পাইথন হ’য়ে ক্রমাগত তার দিকে ধেয়ে আসতে থাকে।

একসময় আবার ভর করে নীলাভাবী।

এক অদ্ভুত প্রস্তাব! খুব সহজে নিতে পারে না খোকা, আকুলতার চেয়ে আতিশয্যই বেশি এর ভিতর। যদি ট্র্যাপ হয়, জাঁহাবাজ মেয়েমানুষের পাল্লায় প’ড়ে কত ছোকরাই তো ফেঁসে গেল। নাকি সাপের মতো পাকে পাকে তাকে জড়াতে চায় কোনো কদর্য অভীষ্ট সিদ্ধির অভিপ্রায়ে। একদিনের একটি দুর্বল মুহূর্তকে মূলধন ক’রে স্বেচ্ছাচারিতায় মেতে উঠেছে নীলাভাবী; তার ধ্যান-ধারণার স্বাস্থ্য এইভাবে আচ্ছন্ন হ’য়ে আছে। নীলাভাবী হয়তো নিজের ঠুনকো বিশ্বাসকে এইভাবে দৃঢ় করেছে, তার শরীরের মতো লোভনীয় খোকার কাছে আর কিছুই নেই। কামগন্ধী স্খলনের পিচ্ছিল দুপুরকে মুঠোয় ভ’রে আত্মবিশ্বাসের গজদন্ত মিনারকে গগনচুম্বী ক’রে তুলছে নীলাভাবী।